যা বলা হয় না/বেলা দে
যা বলা হয় না
বেলা দে
আস্ত এক মানবজনম মানে অনির্ধারিত গল্প, শুরু জানি শেষ কোথায় জানি না, সব চাওয়ার সাথে পাওয়া মেলেনি কখনো, মানবী মনকে উসকে দিয়েছিল কিশোরীকালের অভিভাবক, শিক্ষক থেকে বন্ধুবান্ধব। ওদের মুখে মুখে ফিরেছে সম্ভাবনাময় জীবন আলোচ্য। অদ্ভুতভাবে মানসিক পরিবর্তন এসেছে একটা বয়সে এসে। রূপকথার গল্পের মতন নটেগাছ মুড়োতেই সব শেষ।
এই স্বল্পস্থায়ী অলীক জীবন নিয়ে কত কল্পনা আর ভাবনা থেকে জন্ম নেয় সুদূরপ্রসারী আশার, সিন্দুকে যা তোলা থাকে তার সবটাই কী বাস্তবায়িত হয়? হয় না, মনের ভিতর বাস করা গিরগিটিটা হতে দেয় না। ক্রমিক বিবর্তনে শৈশব কৈশোরের দিনের আলো পেরোনো সময়গুলো ছাড়িয়ে এসে মনে হতে থাকল সর্বংসহা গর্ভধারিণীকে আমার কিছুই বলা হল না, অনেক বলার ছিল কতশত পরিষেবা দেওয়ার ছিল, রাতের পর রাত জেগেছে আমার জন্য, শুধু পড়ালেখা নয় দুর্বল প্রাণের চির অসুস্থতার জন্য। নিজের মা হওয়ার দায়িত্ব কর্তব্য সামলে নিতে গিয়ে দেখি আমার বলাটা কত দেরি হয়ে গেছে আর সময় নেই, সব অধরা থেকে গেল। অতিবড় ত্যাগ বুঝি প্রতিদানও চায় না। সেই নি:স্বার্থ ভালোবাসা আর পেলাম কোথায়!
বেলাশেষে এসেও নিজের মনকে বিশ্বাস করতে পারি না, "যা চাই তা পাই না, যা পাই তা চাই না" সীমিত এই জীবন অসীমকে ছুঁতে চেয়ে শূন্যতাই পেয়ে গেল, আমার যা ছিল না, কোনদিনও হবে না অথচ তাই চেয়ে বসে আছি। ভালোটুকু তুলে ধরতে পারিনি আলোর জগতে, হীনমন্যতা, জড়তা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসার গন্ডির মধ্যে নেই এখন। যেদিন আমার মধ্যে আরেকটা প্রাণ সঞ্চারিত হচ্ছে সেদিনই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি আমার আত্মগোপনের আচ্ছন্নতা
থেকে ওকে দূরে সরিয়ে রাখব। বিশেষত দৃষ্টান্তমূলক করে তুলতে কতটা সফল হয়েছি সেটা সময়ই বলে দেবে আর বলবে ইগোহীন ব্যক্তিত্ব। বিনিদ্র রাতের একলা আমিকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করি "তুমি কি চাও বল তো? নিজে তো কিছুই পেলে না, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে কিছুই রেখে গেলে না, পার্থিব দুনিয়া দিয়েছে তোমাকে দুহাত উজাড় করে। পেলে না ভালোবাসা, যশ, মনের কথা বলার মতো মনের মানুষ। ব্যস্ত দুনিয়ায় কে শুনবে তোমার বিবর্ণ আখ্যান। অবর্নিত কথারা শব্দরূপে যেদিন হবে মুক্ত আমি সেইদিন হব শান্ত।"
"শূন্যেরে করিব পূর্ণ
এই ব্রত বহিব সদাই"।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴