সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন//পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

সারা জীবন খুশি আনন্দ বয়ে নিয়ে বেড়ানো  মানুষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর জীবনের বিখ্যাত  উক্তি ছিল " মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভূবণে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।"  বলা  বাহুল্য  মানুষের মাঝে রবীন্দ্রনাথের এই বেঁচে থাকার স্বপ্ন শতভাগই পূর্ণতা পেয়েছে। ১৯৩৭ সালে তিনি একবার অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন।  এই সময় কবি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি নিজের মৃত্যুকে অত্যন্ত কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সেবার সেই  আশঙ্কাজনক অবস্থা কাটিয়ে উঠেছিলেন ঠিকই, কিন্তু  ১৯৪০ সালের শেষ দিকে আবারও একইভাবে অসুস্থ হওয়ার পর তিনি আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন নি। এই সময়ে তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু কবিতা লিখে গিয়েছেন।  তিনি  লিখেছিলেন, 

"যা কিছু মোর সঞ্চিত ধন, এতদিনের  সব আয়োজন চরমদিনে সাজিয়ে দেব উপহারে।"

 এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে সবাইকেই একদিন চলে যেতেই হয়।  এই  চলে  যাওয়া নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,   "মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান"। অর্থাৎ মৃত্যু, তুমি আমার বন্ধুসম। তিনিও বিশ্বাস করতেন - জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে, চলে যাওয়ার সেই ক্ষণ, সেই  দিনটি অনিবার্য জেনেও তার মধ্যে বারেবারেই  মৃত্যুভাবনা  গ্রাস  করত। সারাজীবন তিনি  সুস্বাস্থ্য  ভোগ করলেও জীবনের শেষ চার বছর দীর্ঘস্থায়ী  রোগভোগে কবি খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন। অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সাথে  তার মূল সমস্যা ছিল অর্শ। এই সময়ে কবিকে বেশ অনেকটা সময় ধরে  শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল। 

সব ঋতুর মতোই  গ্রীষ্ম কাল কবির ভারি প্রিয় ছিল।  গ্রীষ্মের দুপুর বেলা কবির খুব প্রিয় সময়। ফুলের বাগানে তখন নানারকম ফুলে সুসজ্জিত। তিনি সেখানে বসে আপন মনে সরলভাবে মনের সব কথা লিখে গিয়েছেন।  সেখানে প্রায়ই তাঁর  লেখাতেই  এই জগৎ সংসারে সব আছে,  আর সেখানে  তিনি নেই, এইরকম বহু ভাবনা তাঁর লেখাতে ধরা দিয়েছে। "যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে  ' এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। 

তার অন্যান্য  কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে চৈতালী এক বিষ্ময়কর কাব্য গ্রন্থ।  তার প্রতিটি কবিতাই গভীর অর্থ বহন করে। 

চৈতালী যে অলঙ্কারসমারোহভারগ্রস্ত কাব্য নয় একথা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, "মানুষ মাত্রেই অসামান্য।  অতিপরিচয়েও  তাহা ধরা পড়ে না।  নিতান্তই কাছে বলিয়া সে যে নিতান্তই তুচ্ছ তাহা নহে।" অতি তুচ্ছ  ক্ষুদ্র  বস্তুও  মরণের পারে  মহামূল্যবান সেকথা তিনি তার অনেক কবিতায় লিখে গিয়েছেন।

এমনই  এক  গ্রীষ্মের প্রভাতে তিনি  লিখেছিলেন,  "ধন্য আমি, যাহা দেখিবার তাহা দেখিলাম।  দুর্লভ জন্ম।" সেই জন্মের শতভাগ যদি কেউ উপভোগ করতে চেয়েছেন, এবং উপভোগ করতে পেরেছেন, সেটা  একমাত্র তিনি   একথা বলাই  বাহুল্য। আজীবন মৃত্যুকে তিনি অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা  ঘটনা বলে মনে করতেন। তাঁর  পুত্র একবার কঠিন অসুস্থ হয়ে মৃত্যুশয্যায়। তখন তিনি ঈশ্বরের কাছে ধ্যানমগ্ন হয়ে তার মৃত্যু প্রার্থনা করেছিলেন। এই ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

মৃত্যুশোকে জর্জরিত হয়েছিলেন  রবীন্দ্রনাথ।  ঠাকুরবাড়িতে  বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা কবিকে বারংবার  উদ্বেলিত করে তুলেছিল। শেষ জীবনে  তাঁর  অনেক লেখাতেই এবং কবিতায়  মৃত্যুভাবনা উঠে এসেছে। 

তিনি লিখেছেন, "প্রায়ই আমার মনে হয় এই তারাময় আকাশের নীচে আবার কি কখনো জন্মগ্রহণ করিব?  হয়তো আর কোনো জন্মে এমন একটি সন্ধ্যা আর কখনো ফিরিয়া পাইব না।  কোথায় তখন দৃশ্য পরিবর্তন হইবে --- কি রকম মন লইয়াই বা জন্মগ্রহণ করিব? "

আবারও কখনো তিনি বলেছেন, "--- পাওয়া যখন আমার শেষ হইয়া যাইবে তখনকার কথা ভাবিয়া আজ তুচ্ছতম বস্তুও ধন্য। আমার মৃত্যুর পরেও প্রভাত আসিবে। গাত্রোত্থান করিয়া কেহ বা দাঁত মাজিবে,  গোহালের কাজ শেষ করিয়া কেহ বা দেওয়ালে ঘুঁটে দিতে থাকিবে।  তাহাও আমার পক্ষে কি দূর্লভ !  পৃথিবীর প্রত্যেকটি বস্তু অমূল্য।  ইটারনিটির মধ্যে পাছে তাহা উপলব্ধি না হয় তাই খন্ডকালের দ্বারা খন্ডিত।' 

আজও প্রভাত হয় এই প্রভাতে তাঁর চোখে দেখে যাওয়া সব ছোট ছোট ঘটনা আমাদের জীবনে ছবি হয়ে ধরা দেয়।

"যখন  জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়, কাঁটালতায়, কাঁটালতায় ভরবে ঘরের দ্বারগুলায়"

 আবার লিখেছেন, 

"ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে শয্যা বনবাসের, শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায় ---- তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে....। "

তাঁর কথাতেই বলতে ইচ্ছে করে ----

"ছোট ছোট ফুল,ছোট ছোট হাসি
ছোট কথা, ছোট  সুখ 
প্রতিনিমেষের ভালোবাসাগুলি
ছোট ছোট হাসিমুখ
আপনা আপনি উঠেছে ফুটিয়া
মানব জীবন ঘিরি।"

শেষ জীবনে দীর্ঘ রোগভোগের পর শল্য চিকিৎসা করতে হয়েছিল।  সেই শল্যোপচারের জটিলতার দরুন তাকে খুব কষ্ট পেতে হয়।

১৯৪১  সালের ৭ ই আগষ্ট দুপুর ১২টার কিছু পরে জোড়াসাঁকোর বাসভবনে   তিনি সব লেনা দেনা চুকিয়ে চলে  গিয়েছিলেন। মৃত্যুর সময় তাঁর  বয়স হয়েছিল ৮০ বছর ৩ মাস। আমাদের নি:স্ব করে  মরণেরে সব সঞ্চিত  ধন  উজাড় করে দিয়েছিলেন। আজও আমরা তারার পানে চেয়ে চেয়ে সেই মৃত্যুঞ্জয়ী মহাজীবনকে স্মরণ করি।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri