সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

মেয়েটা/অলক পর্ণা সেনগুপ্ত ব্যানার্জি

মেয়েটা 
অলক পর্ণা সেনগুপ্ত ব্যানার্জি 

মধ্য চল্লিশে এসে আজও মেয়েটার মুখটা আমার মনে পড়ে। 
কোমর সমান পাকা দেওয়াল তারপর কাঠের বেড়া, জায়গায় জায়গায় ভাঙা, দোমড়ানো টিনের চাল, টানা লম্বা একটাই ঘর যার একপাশে বাংলা আর অন্যপাশে হিন্দি মিডিয়ামের পড়া চলত।দেওয়াল ঘেঁষে রাখা খান তিনেক বেঞ্চি বাংলা মিডিয়ামের গুটিকয় ছেলেমেয়েদের জন্য… আমাদের স্কুল। চা বাগানের সরকারি প্রাইমারি স্কুল। বাবু বাসা থেকে আসা কয়েকজন বাচ্চাকে নিয়ে বাংলা পড়াত একজন দিদিমনি আর অন্যদিকে বেশিরভাগ লেবার লাইন থেকে আসা বিশাল সংখ্যক বাচ্চাগুলোর দোর্দণ্ডপ্রতাপ হিন্দি মাস্টার মশাই, সাদা ধুতি শার্ট পড়া কপালে আর গলায় সিঁদুরের টিপ আর মস্ত টিকিতে বাঁধা লাল জবাফুল আমার ওনাকে দেখলেই বড্ড ভয় করত ছোটবেলায়। ছাত্র পীড়নের নানা কৌশল ওনার করায়ত্ত ছিল, সেগুলো আমাদের ওপর প্রয়োগ না করলেও আমাদের প্রতি ছিল এক অবজ্ঞার ভাব। তখন অবশ্য এতকিছু বুঝতাম না। ওনার কাছে যে আমাদের পড়তে হয় না এতেই যথেষ্ট স্বস্তি বোধ করতাম আমি।
সেবার থ্রি অথবা ফোর এর অ্যানুয়াল পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় প্রতিবছর মাস্টারমশাই হিন্দি মিডিয়ামের ছাত্রছাত্রীদের থেকে ফি বাবদ টাকা নিতেন আমাদের থেকে নিতেন না কিন্তু!! এ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করত না। সেদিন পরীক্ষার খাতায় সবে কাঁপা কাঁপা হাতে নামটা লিখেছি মাস্টারমশাইয়ের প্রচন্ড চিৎকারে কেঁপে উঠলাম, মেঝেতে বসা একটা মেয়েকে দাঁড় করিয়ে খুব বকা দিচ্ছেন মেয়েটার পিঠ খোলা ঢলঢলে জামার একটা হাতা কাঁধ দিয়ে নেমে এসেছে, বুকের কাছে জড়ো করা হাতে একটা ভাঙা স্কেল আর পেন্সিল, রুক্ষ ময়লা চুল, শীর্ণ খড়ি ওঠা হাত পা, দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। আরে!! ওই মেয়েটা না? মায়ের কিনে দেওয়া আমার নতুন ও একমাত্র পেন্সিল বাক্সটা নেড়ে চেড়ে দেখছিল সেদিন যা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি, দিদিমনি ধমক দেওয়াতে আবার গিয়ে মেঝেতে নিজের জায়গায় বসেছিল। ওকে বকা খেতে দেখে আমার কিন্তু প্রথমে মনে হচ্ছিল, বেশ হয়েছে পড়াশোনা করে না, বকা তো খাবেই। কিন্তু এবার দেখলাম মাস্টার মশাই ওকে ক্লাস থেকে বের করে দিল। দিদিমনি আমাদের বলল ও নাকি পরীক্ষার ফি দেয়নি, সরকারি স্কুলে পরীক্ষার ফি আবার কিসের তা আমার ছোট্ট মাথায় ঢোকেনি কিন্তু স্কুল ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে মেয়েটার করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখে আমার আমার ভীষন কষ্ট হতে থাকল, গলার কাছে দলা পাকিয়ে উঠল কি যেন! অনেকক্ষণ, প্রায় ঘন্টা খানেক হবে হয়তো, মেয়েটা দাড়িয়ে রইল, হয়তো ওর আশা ছিল মাস্টার মশাই দয়াপরবশ হয়ে ওকে পরীক্ষা দিতে দেবেন, আমিও যেন সেই আশাতেই বার বার দরজার দিকে দেখছিলাম। কিন্তু না আবার ধমকের চোটে মেয়েটা মাথা নিচু করে স্কুলের মাঠ ছাড়িয়ে হেঁটে চলে গেল রাস্তার দিকে। আর কোনদিন ওকে স্কুলে আসতে দেখিনি। আমাদের কোয়ার্টারের সামনে মাঠে ওকে মাঝে মাঝে দেখতাম গরু বাঁধতে আসত, দূর থেকেই দেখতাম, সামনে গিয়ে কথা বলিনি কোনোদিন। আমি ওর নাম জানতাম না, বাড়িও না। তারপর জীবনের নানা ঘটনার আসা যাওয়ায় মেয়েটা হারিয়ে গেল কোথাও, হারিয়ে গেল ওর নিজের জীবনে।
         আজ এই পড়ন্ত বেলায় এসে কত ঘটনাই  তো নিঃশব্দে ঝরা পাতার মতো মুছে গেছে স্মৃতি থেকে কিন্তু  সেই সকরুণ দৃষ্টি, মাথা নিচু করে চিরকালের মতো স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়া, আমার মনে ফ্রেমবন্দি হয়ে আছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিছু বেদনা বা আনন্দ একান্তই নিজের হয়ে থেকে যায় এও তেমনই এক বেদনা হয়ত, যাকে আমি এতবছর ধরে লালন করেছি সযত্নে। যে সমবয়সী অসহায় বালিকাকে হেনস্থা হতে দেখে প্রথমে খুশি হলেও তারপর মনে এক চিরস্থায়ী কষ্ট আর অসহায়তা আমার বোধকে পাতলা কুয়াশার মতো আচ্ছন্ন করে আছে আজও, “সহজ উঠোনে” অকপটে লিখলাম তা। হয়ত কখনও একান্ত নিজস্ব আনন্দের কথাও লিখব। সবই যে এ জীবনের সঞ্চয়!!

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri