সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
08-December,2024 - Sunday ✍️ By- অনিন্দ্য সেনগুপ্ত 370

মেঠো আখ্যান/অনিন্দ্য সেনগুপ্ত

মেঠো আখ্যান  
অনিন্দ্য সেনগুপ্ত
**************

প্রভু, জন লাকড়ার নাম শুনেছ? আজ ওর কথা লিখতেই কলম ধরা। জন্ম চা-বাগানে, শৈশব মিশনারি স্কুলে। বই-খাতায় মন না থাকলেও সকালে প্রেয়ার আর বিকেলে ফুটবল মিস হোত না কখনো। চার্চের ফাদার তাই স্নেহ করতেন অন্ধের মতো। পড়াশুনো করছে না দেখে ভদ্রলোক প্রায়ই রেগে গিয়ে জনকে বকতেন, ' পড়বি কখন? সারাদিন তো মাঠে বল পেটাচ্ছিস!' সেই মানুষটিই আবার কখনো ওকে মাঠে না দেখলে অস্হির হয়ে বলতেন, 'কী রে! মাঠে আসছিস না যে? খেলা ছেড়ে ভিডিও হলে বসে থাকিস না তো?' বাধ্য ছেলের মতো মাথা নীচু করে সে এসব শুনত আর মুচকি, মুচকি হাসত।

ফুটবল মাঠে জন বল ধরলে আমরা বলতাম, জন দোলে তো বল দোলে। পায়ের ছোট ছোট ডজে বল নিয়ে অনায়াস ছন্দে যখন বিপক্ষের ডিফেন্স পেরিয়ে যেত, দেখে মনেহত যেন সুমনের গানে 'মেম ব্যালেরিনা'। মাঠে গা-জোয়ারি খেলা ঘোর অপছন্দ ছিল বলে আমরা বন্ধুরা বলতাম, ও তোমার ধর্মপুত্র। বিপক্ষ খেলোয়াড়দের কড়া ট্যাকেলে মাঠে গড়াগড়ি খেয়েও মাথা গরম করতে দেখিনি কখনো। উল্টে মুচকি হেসে শরীর ঝারতে ঝারতে উঠে দাঁড়াত আর দলকে জিতিয়ে ফিরত নিয়মিত। আরেকটা বিশেষ গুণে সবার চোখ টেনে নিত ও- বিপক্ষের জালে বল ঢুকিয়ে কোনদিন উদ্ধত অঙ্গভঙ্গী করত না। ম্যাচে গোল করলে গলায় ঝোলানো তোমার ক্রশ ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে নিতে, নিতে মাথা নীচু করে দুলকি চালে সেন্টার লাইনে ফিরে আসত। মুখে পরিচিত সেই মুচকি হাসি আর ভাবটা এমন- এ আর এমনকী! আমার কাজই তো এটা! খেলার গুণে একদিন জন চাকরিও পেয়ে গেল ওদের চা-বাগানে। তখন সারা ডুয়ার্স আর লোয়ার আসামে ফুটবল-দর্শক জনের নামে পাগল! নিজের দল তো বটেই বিপক্ষের ফুটবলাররাও মাঠে সমান সমীহ করত ওকে। সারা ম্যাচে ওর ড্রিবলিং-এ নাস্তানাবুদ হয়েও খেলাশেষে তারা জনকে বুকে জড়িয়ে ধরতে দ্বিধা করত না। শিল্পী মানুষ বিনয়ী হলে ঠিক যেভাবে ভালোবাসার পাত্র হয়ে যায় সর্বত্র।

কিন্তু মানুষের জীবন কবেই বা আর সরলরেখায় চলে প্রভু? খ্যাতির পিছু, পিছু কিছু সর্বনাশা অনুষঙ্গ গ্রাস করে মানুষকে। জনের মতো সরলমতি মানুষও অচিরেই তার শিকার হল। আজ আসাম কাল ডুয়ার্স পরশু শিলিগুড়ি খেলে বেড়াচ্ছে জন সেইসঙ্গে ব্যবধান তৈরি হচ্ছে মিশনারি জীবনে বেড়ে ওঠা এক সহজ, সরল যুবকের দিনযাপনে। নিয়তির মতো নেশার কবলে ডুবে যেতে থাকল ও। খেলে পাওয়া টাকাগুলো মদের পেছনে সমানে ওড়াতে শুরু করেছে তখন। পরিণামে প্রথমে হারাল ফর্ম, তারপর চাকরি। চোলাইয়ের টানে পাগলের মতো ঘুরে বেড়াত বাগানের লাইনে লাইনে। দূর থেকে লোকজন ওকে দেখে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। ওদিকে বাড়িতে বৌ-বাচ্চার পরিবার অসহায় আধপেটা পড়ে থাকে না খেতে পেয়ে। এভাবে চলতে চলতে একদিন সবার অলক্ষ্যে জন পাড়ি দিল কেরালা, পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে।

তারও ক'বছর পর খোঁজ করতে করতে একদিন জনের সঙ্গে দেখা ওর বাগানে। চেহারা তখন ভঙ্গুর। বলল, ' শরীর ভাল নেই, কেরালা থেকে ফিরে এসেছি তাই। আমার দম ফুরিয়ে আসছে রে, এবার মাঠ ছাড়ার পালা। জেসাসের ডাক শুনতে পাই আমি এখন প্রায়ই।' কথাগুলো বলে শূন্য দৃষ্টিতে বাইরের দিকে চেয়ে রইল। ঠিক যেমন মৃত্যুপথযাত্রী কোন মানুষ শেষ বিদায়ের আগে প্রিয়জনের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, উদাসীন অভিমানে। প্রসঙ্গ ঘোরাতে  চেয়ে বললাম, 'ও কথা বলছিস কেন? আবার মাঠে নামবি তুই, আবার গোল করবি, ম্যাচও জেতাবি। ' আমার সেকথা শুনে জনের চোখে হঠাৎ একটা বিদ্যুতের ঝলক খেলে গেল। জল-ধরা দু-চোখে সে স্পার্কের মানে? তুমিই হয়ত বুঝবে তা যীশু ...

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri