মুন ওয়াক/অপূর্ব কুমার চক্রবর্তী
মুন ওয়াক
অপূর্ব কুমার চক্রবর্তী
এই ঐতিহাসিক দিনটায় আর সকলের মত
সন্ধ্যাটা কাটলো টানটান উত্তেজনায়। মহল্লায় মাইক ঢোল আবির। উৎসবের আগেই উৎসবের ঢেউ। স্বপ্ন পূরনের দিন। মনমরা মন্টু চনমনে করে তুলল নিজেকে, ঠেলেঠুলে হলেও। স্বপ্ন সবাই পোষে।এটা বিশুদ্ধ গনতন্ত্রিক বিষয়। স্বপ্ন দেখার অধিকার, স্বপ্ন দেখার সাম্য।এখানে ধণী দরিদ্রদের ফারাক নেই। ফারাক নেই বোকা চালাকের। চিটার চিটেড এখানে এক থালায় ভাত খায়। তাই মন্টুও স্বপ্ন দেখে, দীপাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটছে। চন্দ্রপৃষ্ঠে। ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই, যতদুর চোখ যায় নরম নীল। পা পড়ছে মেঘের শরীরে। নিঃশব্দে। যেন শিউলি পাতা থেকে শিশির পড়ছে ঘাসে। কিন্তু স্বপ্নভঙ্গ ব্যাপারটাও গনতান্ত্রিক। স্বপ্নের পর্দাটা ফেটে গিয়ে জমিনি হকিকতে ল্যান্ড করলেই যত্ত বিষম ফ্যাকড়া। দুটো কেস জমে গেছে ইতিমধ্যেই মুন্সেফ কোর্টে। বাবলুদা বলে দিয়েছে অপোনেন্ট বলে কিছু থাকা চলবে না। তাই যা যা করার করে দিয়েছে মন্টু প্লাস বাহিনী । বাবলুদা থাকলে ওসব কেস ফেস ফাইল ফুঁড়ে মাথাই তুলতে পারবেনা। এটা বিশ্বাস করেই বাঁচতে হয় মন্টুদের। দীপা আবার এসব একদম পছন্দ করে না। কিন্তু মন্টু জানে, পঞ্চায়েতের টিকিট একবার পেয়ে গেলে আর ফর্মুলা লাগিয়ে জিতে গেলে তখন এক বছরেই ঘরটা পাকা, দ্বিতীয় বছরে একটা নতুন এনফিল্ড বুলেট প্লাস দীপার জন্য একটা ছোটখাটো হলেও চাকরি - দশ পনেরো লাখেই হয়েও যাবে। তারপর দীপা আর ওর এইসব বস্তাপচা মরালিটি মাথায় বয়ে বেড়াবে না। কিন্তু এই করতে করতে দু খানা কেস গলায় ঝুললেেও টিকিট টা লটারিতেই ঝুলে আছে। সেটাও নাহয় হজম করে নেওয়া গেল, কিন্তু বিপিটা বাড়ছে অন্য কারনে। বাবলুদা নিজেই দীপাকে ঝাড়বৃন্দা ইস্কুলের কন্ট্রাকচুয়াল দপ্তরির কাজে ঢুকিয়ে দেবার প্রমিজ শুনিয়েছে। কিছুদিন ধরে দীপার পোশাক আসাকও বেশ ঝকাস দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে একটা ধর্ষণ বিরোধী মিছিলে দীপা প্রথম সারিতে ছিল রাস্তা জোড়া ফেস্টুনের পিছনেই। আর ওর সামনেই বাবলুদা। দীপা কি জানে সৃজা বৌদির সঙ্গে বাবলুদার ইন্টুমিন্টু নিয়ে মুখ খুলে সিভিকে কাজ পাওয়া জয়া কাকিমা নিজেই গ্যারেজ হয়ে বসে আছেন? খিলাড়ি হো তো বাবলুদা জ্যায়সা; রেনকোট গায়ে স্নান করে! মন্টুর বুকটা কেঁপে ওঠে।
গতকাল রজত এসে পেটো ভর্তি দুটো ড্রাম মন্টুর বাড়ির পিছনের কলা গাছের থোপে রেখে কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রেখে দিয়ে গেছে। আগামী কাল আরিফ এসে নিয়ে যাবে।
গত রাতে ঘুম হয়নি চাঁদকে মুঠোয় পোরার উল্লাসে। কিন্তু আজকের রাতটাকে ওভার লোড করে দিয়ে গেল বাবলুদার অদৃশ্য ডানহাত রজত।
তাই রাতে চাঁদের মাটিতে দীপাকে নিয়ে মুন ওয়াকের স্বপ্নটা না এসে পাঠিয়ে দিয়েছে চোখ ট্যারা টেনশনকে।
প্রথম পাখির ডাক।
আঃ! কতদিন পর একটা কচি ভোর দেখা হবে আজকে!
হঠাৎ অপ্রত্যাশিত ঠকঠক দরজায়। আরিফ এলো? এত ভোরে! যাক, কলার থোপের এ আপদ ঘাড় থেকে নামলেই ভালো। দরজা খুললো মন্টু, ক্যা এ্যা চ্।
ভোরের আলো অবরোধ করে দরজায় তিনটি পুলিশ!
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴