সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
08-June,2025 - Sunday ✍️ By- গোপাল চন্দ্র দাস 55

মুঠো ফোনের গল্প/গোপাল চন্দ্র দাস

মুঠো ফোনের গল্প
গোপাল চন্দ্র দাস

রুমা--ঃ জানো অনিমাদি আমার মেয়ে কিছুই খেতে চায় না। স্কুলে আসার আগে কোনমতে ঠেসেঠুসে একটা কাতল মাছের টুকরো দিয়ে অল্প একটু ভাত খাইয়ে নিয়ে এলাম।
অনিমা--ঃ -আমার ছেলে আরও এক কাঠি উপরে।মোবাইলে কার্টুন চালিয়ে না দিলে কিছুতেই মুখে খাবার তুলবে না। সবে কেজি টু-তে উঠল এখনই মোবাইলের অনেক কিছু বের করতে পারে। কাল আমাকে বলল মোবাইলে কার্টুন চালিয়ে দাও।আমি তো ওসব ভালো বুঝি না তবু চেষ্টা করছি দেখে বলল, তোমাকে দিয়ে হবে না আমাকে দাও।আমার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে দিব‍্যি "টম এন্ড জেরি" চালিয়ে ফেলল। আমি তো ওর বুদ্ধি দেখে তাজ্জব বনে গেলাম, এখনও বাংলা সব বর্ণই চিনল না অথচ ইংরাজি কার্টুন বের করে ফেলল, বড় হয়ে কী যে হবে?
রুমা--ঃ আজকাল বাচ্চারা জন্ম থেকেই পাকা হয়ে আসে। আমরা ওর মতো বয়সে টিভির চ‍্যানেলটাও পরিবর্তন করতে পারতাম না। এখন অবশ‍্য মোবাইলের সব শিখে নিয়েছি। গান শুনতে শুনতে রান্না করি, গুগল সার্চ করে রান্নার নতুন নতুন রেসিপি শিখি। হটস্টার চালিয়ে মাঝে মাঝে সিনেমাও দেখি। ইদানিং মাঝে মধ‍্যে মাথা ব‍্যথা হয় ডাক্তার বলল মোবাইলের খারাপ প্রভাব, এই অভ‍্যাস কমিয়ে ফেলুন, তবু নেশা ছাড়তে পারছি না। তবে হ‍্যাঁ বাচ্চা মেয়ের হাতে মোবাইল দেই না, নিজে মোবাইলের নেশা করে বুঝেছি এই নেশা কী ভয়ঙ্কর। অল্প খাক বেশি খাক, না খেয়ে থাকুক, মোবাইল দেখিয়ে খাওয়ানোর অভ‍্যাস করি না।মেয়ের এই না খাওয়ার জন‍্য ওর বাবা আমাকে গালমন্দ করে, যেন সব দোষ আমার।
            কথাগুলি হচ্ছিল একটি কেজি স্কুলের ওয়েটিং রুমে বসে। ইদানিং রেওয়াজ হয়েছে, মায়েরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে আসে আর এখানে বসে গুলতানি মেরে সময় কাটায়। ছুটি হলে আবার বাচ্চাকে নিয়ে ঘরে ফেরে। এখানে বসেই কেউ মোবাইলে সিনেমা দেখে, কেউ বা পরকিয়া প্রেমের গল্প করে, কেউ সারাক্ষণ মোবাইল কানে বকবক করে। এই তো গত মাসের ঘটনা, ববিতা নামে এক আভিভাবিকা অন‍্য এক অভিভাবকের সাথে হেসে হেসে রসের গল্প করছিল, আর একে অন‍্যের গায়ে ঢলে পড়ছিল।সেই দৃশ‍্য অন‍্য এক অভিভাবিকা প্রতিহিংসার বশে মোবাইলে ভিডিও করে সোসাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়, তাই নিয়ে সে কী কেলেঙ্কারী। ববিতার স্বামী এই ভি ডি ও  দেখতে পেয়ে ডিভোর্সের মামলা করে বসে। সেই মামলা এখনও চলছে। বেচারী ববিতা বাচ্চাকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যেতে বাধ‍্য হয়। সেই বাচ্চার দখল নিয়েও দু'জনের মধ‍্যে টানাটানি চলছে, কোর্ট কি রায় দেয় সেটাই দেখার।                
            আর এক অভিভাবিকা বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে কারও সাথে কথা বলত না, সারাক্ষণ মোবাইল কানে নিয়ে কার সাথে যে কথা বলত কে জানে। শোনা যায় তার স্বামী আর্মির বড় অফিসার, হরিয়ানায় পোস্টিং। তিন মাস পরে সেই মহিলা স্কুল থেকেই বেপাত্তা হয়ে গেল। তার স্বামী অনেক খুঁজে খুঁজে রাঁচি থেকে পুলিশ দিয়ে তাকে ধরে আনেন।
            আজ থেকে পঁচিশ-ত্রিশ বছর আগে মোবাইল ছিল না, এত বেশি কে জি ইস্কুল ছিল না, এত অবৈধ প্রেমও ছিল না। পরকিয়া একেবারেই ছিল না এটা বলা যাবে না। হাজার বছর আগেও পরকিয়া ছিল রাধা কৃষ্ণের প্রেম কাহিনী তার জ্বলন্ত প‍্রমাণ। সেই প্রেমের সাথে বর্তমানের প্রেমকে মেলাতে যাওয়া বোকামি।
          আঠারো বছর পরের ঘটনা।
রুমার মেয়ে এখন ভূগোল নিয়ে অনার্স,বি এড. করে সদ‍্য একটা হাই স্কুলে জয়েন করেছে। তার একটা প্রেমিকও আছে সে অ‍্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে জেলা পরিষদে চাকরি করে। উভয়পক্ষের অনুমোদনক্রমে আগামি মাঘে তাদের বিয়ে স্থির হয়েছে।
          অনিমার ছেলে অখিল বি এ পাশ করে বেকার বসে আছে। মোবাইল ছাড়া কিছু বোঝে না।সারা দিন কার সাথে কি বকবক করে কেউ জানে না। শোনা যায় মোবাইলে পর্ণোগ্রাফি দেখে শেষ রাত্রে ঘুমাতে যায়। সকালে কিছু টিফিন করে বাইক নিয়ে বের হয় আবার দুপুরে খেতে আসে।তার বন্ধু বান্ধবরা সবাই বেকার কম্পানির অফিসার। প্রতি বছরে তার নতুন মডেলের মোবাইল চাই, না পেলে বাড়িতে দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে দেয়। তার বাবার বড় ব‍্যবসা আছে তাই সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। বাবা বলেন তোর চাকরি করতে হবে না, ব‍্যবসা দেখাশোনা শুরু কর খাওয়া পরার কোন অভাব হবে না। শোনা যায় মোবাইলের মতো প্রতি বছরে প্রেমিকা পরিবর্তন তার নেশা।
             অখিল সেদিন মোটর সাইকেলে চড়ে কোথায় যেন যাচ্ছিল। বাইকের পেছনে তার প্রেমিকা ললিতা বসে ছিল। এমন সময় মোবাইলে একটা ফোন আসে। ললিতা বলল এখন ফোন ধর না, বাইক থেকে নেমে কথা বল। অখিল ললিতার কথার গুরুত্ব না দিয়ে চলন্ত অবস্থায় মোবাইল কানে দিয়ে কথা বলতে শুরু করে। সামনেই ছিল রেলের লেবেল ক্রসিং। ঠিক সেই সময়ে ক্রসিং এর ক্রস-বার নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। অখিল এক হাতে বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে ক্রস বারে ধাক্কা মারে। ক্রস বার এসে লাগে একেবেরে তার হেলমেটহীন কপালে। মোবাইলটা ছিটকে পড়ে রাস্তায় তখনও মোবাইলের স্পিকারে শোনা যাচ্ছিল একটি মেয়ে কন্ঠের আওয়াজ হ‍্যালো হ‍্যালো হ‍্যালো-----।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri