মুছে যাওয়া দিনগুলো.../শ্বেতা ভট্টাচার্য্য
মুছে যাওয়া দিনগুলো...
শ্বেতা ভট্টাচার্য্য
Know your priorities :
Say no to things that don't align with your
important goals.
Anyone can buy a new car, real men are those who keep the old ones running.
Display picture দু'টোই। প্রথমটা সাম্প্রতিক, দ্বিতীয়টা ঠিক তার আগের। কোনোটাই কি মেনেছিস
অনিন্দ্য? না না, প্রথমটা হয় তো রেখেছিস। হয় তো বুঝতে পেরেছিলি। তাই দ্বিতীয়টা মুছে দিয়ে প্রথমটা রেখেছিলি। ওটাই তোর লক্ষ্য ছিল? বুঝে গেছিলি কি একটু আগেই? জীবনের সাথে অ্যালাইমেন্ট হচ্ছিল না? কেন রে অনিন্দ্য, কেন? কিন্তু তোর তো কত্ত স্বপ্ন
ছিল! ছিল কত্ত নিত্যনতুন ভাবনা, সেসব ছেড়ে কত
সহজেই না চলে গেলি!
রিংটোনেও আজকাল বাজতো…
Country roads, take me home
To the place I belong
রবীন্দ্রনাথের তারাপদ ছিলি তুই! নিজেও সে কথা স্বীকার করতিস। সব কিছুর সাথে জড়িয়ে থেকেও যেন কোত্থাও জড়িয়ে নেই। জড়িয়েমড়িয়ে বাঁচা তোর ধাত নয়। লক্ষ্মণের গণ্ডী নিজের পাশেও কেটে রাখতিস। অপরের গণ্ডীও লঙ্ঘন করতিস না। অথচ অপরের প্রয়োজনে ভীষণভাবে পাশে থাকতিস কাউকে জানান না দিয়ে। স্বাধীনচেতাও ছিলি খুব, পাশাপাশি অন্যকেও স্পেস দিতিস। এ তোর এক
বিরাট গুণ, অপূর্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সবার থাকে না।
যার থাকে, তার থাকে।
ফাগুনের হা হা বাতাসে মনটা এবার হু হু করে রে। এভাবে চলে গেলে আমাদের স্বপ্নগুলোও যে গুটিয়ে আসে, বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা মরে যায় বুঝিস না! তুইই তো শিখিয়েছিলি…“সবসময় বলবি ফার্স্টক্লাস আছি”। এখনও বলব? কীভাবে বলব এবার? সেটা তো শেখাস নি!
কাকে বলব এবার আমার ছোটো-ছোটো সমস্যার
কথা? ভাগ করে নেব ছোটো-ছোটো খুশী? পৃথিবীটা
কতটা ছোটো হয়ে এল বুঝতে পারছিস? কে বলবে
সামলে নিস…! জানি তুই অলক্ষ্যে এখনও বলছিস
সামলে নিস, সামলে নিস।
কত ছোট ছোট পাওয়া না পাওয়াগুলো মনে পড়ছে
রে বন্ধু! সবই যে ঝরে পড়ছে অশ্রু হয়ে। চোখ ছাপিয়ে বুক মুচড়ে। আমায় নিয়ে মজা করতিস সবসময়। ছদ্ম রাগ দেখালেও মজা পেতাম খুব। শেষবারের মতো এই ভয়ানক মজাটা না করলে কি চলছিল না? এই রসিকতা নেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই রে আমার!
উৎসাহ, প্রশ্রয়, তর্কবিতর্ক, মান-অভিমান করার মানুষ
চলে গেলে কী থাকে জীবনে! বড়ো শূন্য লাগে রে
আজকাল। শৈশব থেকেই ফাল্গুনচৈত্রে আমার মন
খারাপ করে। মনটা ধূ-ধূ মরুভূমি হয়ে যায়। আর কী
আশ্চর্য এই সময়েই প্রিয় মানুষগুলো আমায় ছেড়ে
চলে যায়। তুই তো জানতিস সেটা, তবে তুই কী
করে পারলি? ঝরাপাতা, ফুটিফাটা মাটি, শুকনো বাতাস, ধুলোর ঝড়! অনিন্দ্য, তুই এটা পারিস না বন্ধু। ফিরে আয়!
“অবকাশে” যাবার কথা ছিল। চির অবসর নিয়ে চলে গেলি কোন অবকাশে? কোকিলের ডাকে তোকে খুঁজে ফিরছি। খুঁজে চলেছি বন-জঙ্গলের আনাচে-কানাচে যা তোর ভালোলাগার, যারা তোর বড়ো আপন রে। একদিন বাস থেকে আর নামতে ইচ্ছে হ'ল না। চলে গেলাম গন্তব্য ছাড়িয়ে যতদূর মন চায়। পথের পাশে এক স্কুলের মাঠে ভ্যান থামিয়ে কে যেন শুয়ে। যেন ক্লান্ত মানুষটির পাশে দেখলাম তোকে, তার মাথায় স্নেহের পরশ তোর শীতল হাতের। মনে হ’ল তুই আছিস ভীষণভাবে আছিস।
মাটি ফেটে চৌচির। এলোমেলো বাতাস বইছে এদিক -ওদিক। স্বজনহারানোর তীব্র ব্যথা অন্তরের অন্তঃস্থল জুড়ে। শিমূল,রুদ্রপলাশ লালে লাল। রক্তলাল পাপড়ি
গুলোর ফোকর গলে চলে গেছে কালো পীচ রাস্তা।
দমকা বাতাসে হলদেপাতা ঝরে পড়েছে কালো পীচে।
তারা কিছু হলদেটে সবুজ পাতাকেও টেনে নামাচ্ছে।
তারই মাঝে শিমূলের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে বসে আকাশ
পাতাল ভাবছে গোঠের রাখাল। হাতে তার বাঁশের বাঁশি। ফুৎকারে সুর তুলতে ভুলে গেছে সে। কিন্তু বাঁশী
তো তার হাতেই আছে, সুর সে তুলবেই বল?
কালো পীচ রাস্তা ডাইনে যত এগিয়েছে ততই কলেবর সঙ্কীর্ণ হয়ে এসেছে। হয় তো অপ্রশস্ত হয় নি। দূরদূরান্তে চলে যাওয়ায় সঙ্কীর্ণ ঠেকছে। কিন্তু সে আছে, নিশ্চয়ই আছে বল অনিন্দ্য?
আবার যদি বেড়াতে যাই সব্বাই মিলে তুই থাকবি তো? বলবি তো…শ্বেতা, ভেজা কাপড়গুলো নেয়ার
কথা মনে করিয়ে দিস তো! বলবি তো শেখর শ্বেতাকে
একটু বাইকে করে চা-বাগানটা দেখিয়ে নিয়ে আয় তো! জানি বলবি, বলতে তোকে হ'বেই। এভাবে তুই
যেতেই পারিস না। সবাইকে আগলে রাখার অলিখিত
দায়িত্ব তো তুই নিয়েছিলি। কীভাবে তা অস্বীকার করতে পারিস?
ঝরাপাতায় তোকে খুঁজি, খুঁজি তোকে পাগল হাওয়ায়। সর্বত্র সাড়া পাই রে তোর। শুধু ছুঁতে পাই না কিছুতেই। মুচকি হেসে সরে যাস। কখনও তোর চিরপরিচিত ভঙ্গীতে শিশুর মতো অবাক হয়ে দেখিস এই খুঁজে ফেরা। পরমুহূর্তেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়িস। পারি না সইতে তোর এই লুকোচুরি খেলা।
”ছোট ছোট সুখে সিদ্ধ মনোস্কাম”--জীবন সম্পর্কে এই ছিল তোর ধারণা। তুই-ই তো আমায় পড়িয়েছিলি সাঁকোটা দুলছে। ”সাঁকোটা দুলছে না” কোথাও লিখেছিলাম। নেতি শুনতে নারাজ তুই মনে করিয়ে দিয়েছিলি সাঁকোটা এখনও আছে। এপার ওপার স্মৃতিময় একাকার হয়ে। সে-ই তুই কোন অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলি! বড্ড অভিমানী ছিলি তুই। কেউ না জানুক আমি যে জানি। অভিমান তো এবার আমাদেরও অনিন্দ্য!
বন্ধু হারালে দুনিয়াটা খাঁ খাঁ করে
ভেঙে যায় গ্রাম, নদীও শুকনো ধু ধু
খেলার বয়স পেরোলেও একা ঘরে
বার বার দেখি বন্ধুরই মুখ শুধু ।
তুই কি ভুলে গেলি?
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴