সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

মাহুতের গল্প : গয়েরকাটায় এক রাত/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাহুতের গল্প : গয়েরকাটায় এক রাত
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

গয়েরকাটায় এভাবে রাত কাটাতে হবে কে জানত? বীরপাড়া জুবিলী ক্লাবের রোববারের সাহিত্য আড্ডা শেষ হওয়ার অনেক আগেই বেরিয়ে পড়লাম।  সন্ধ্যার অনেক আগেই ধূপগুড়ি পার হয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু গয়েরকাটায় এসে জানতে পারলাম আমাদের অন্য রাস্তা দিয়ে চালসা হয়ে জলপাইগুড়ি আসতে হবে।  হঠাৎই ধূপগুড়ি অশান্ত হয়ে পড়ায় কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার ওই পথ দিয়ে জলপাইগুড়ি শহরে ঢোকার বিষয়ে খুব একটা উৎসাহ দিলেন না। তাই বানার হাট নাগরাকাটার রাস্তা ধরলাম। হলদিবাড়ি চা বাগান পার হওয়ার আগেই সুব্রত পাল ( গনেশ) এর ফোন আসল। তোমরা এখন কোথায়?  বীরপাড়া যাবার সময় সে বলেছিল তার বাড়িতে  চা খেয়ে তবে ফিরতে।  এবার  ফোন আসায় কি বলব ভেবে পেলাম না। 

সুব্রত অর্থাৎ  গনেশ সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের খুব পছন্দের একজন।  সমরেশ দা গয়েরকাটায় আসলে গনেশ ছিল তার সর্বক্ষণের সঙ্গী।  গনেশের মায়ের রান্না ছিল সমরেশ দা 'র খুব পছন্দের। "ছোট মাছ বিশেষ করে বোরোলি মাছ এর ঝোল বাবলুর বড়ো পছন্দের" একথা মাসিমার মুখ থেকেই শোনা। 
আমরা যতই এগোই চায়ের বাগান ঘন হয়। বাবু দা মানে আমাদের ড্রাইভার বলল তোতাপাড়া বাগানে চিতাবাঘ একটা শিশুকে মেরে ফেলেছিল,  তাই এখনো ওই অঞ্চলটা বেশ থমথমে। রাস্তা থেকে একটু দূরে একটা জলাশয় তার পাড়ে অনেক লোকজনের ভিড়। বাবুদা গাড়ি থামিয়ে একজন বাগানের শ্রমিককে জিজ্ঞেস করাতে জানা গেল একজন মাহুত তার হাতিকে ওই জলাশয়ে স্নান করাচ্ছে। আমরা আর এই সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। সবাই মিলে সেখানে গিয়ে ভিড় ঠেলে যা দেখলাম তাতে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। একটা ঝোরার জলে এক বিশাল আকারের হাতি।  দু'জন তার শরীর পরিস্কার করে দিচ্ছে।  খুব ধীরে তার শরীরে ঝামা ঘসে দিচ্ছে।  একজন পায়ের নখ কেটে দিচ্ছে ওরা দুজনেই কম বয়সী।  হাতিটার কান শুঁড় গলায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।  হাতিটি এতে যে খুবই আরাম পাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।  আমরা মাহুতের কাছে গিয়ে জানলাম হাতিটার নাম বরুণ।  দেবতার নামে তার নামকরণ করেছেন তার মালিক নবীন জৈন। মালিকের নিজস্ব কাঠ চেরাইএর কারখানা আছে।  হাতিটা সেই স মিলের কাঠের গুঁড়ি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। 

পাশ থেকে একজন বলে উঠল এই হাতিটি খাবার খুব কম খায়। সাধারণত হাতি ১৫০ কেজি সবুজ খাদ্য ও ৯০ লিটার জল পান করলেও বরুণ মিতাহারী এবং একটু শান্ত প্রকৃতির। একবার এক যুবক বিরক্ত করাতে বরুণ সামান্য পা সরানোতে সেই ধাক্কায় যুবকটি পড়ে যায়  এবং পিচের রাস্তায় পড়ে গিয়ে তার মাথা ফেটে যায়। 

আমরা বরুণকে টাটা করে গয়েরকাটায় গনেশের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। হলদিবাড়ি চা বাগানের একজন কর্মী অনিল সুব্বা আমাদের গাড়িতে উঠল,  সেও গয়েরকাটা মোড় অবধি যাবে। অনিল অনেক  হাতি দেখেছে।  বাগানগুলোতে বৈদুতিক তার দিয়ে ঘিরে রাখায় একটা হাতিকে সে চোখের সামনে মরে যেতে দেখেছে। শুনলাম সেই সব করুণ  কাহিনি। 

একবার চোরা শিকারীরা একটা হাতিকে বানিয়া নদীর ধারে গুলি করে তাকে হত্যা করেছিল সেই কাহিনিও শুনলাম তার মুখে।  গয়েরকাটায় গাড়ি থেকে নামার আগেই গনেশকে হাসিমুখে আমাদের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম।  রাতে তার মুখে শুনলাম তার মুখে সমরেশ মজুমদারের সাথে তার বাংলাদেশ ভ্রমণের নানা কাহিনি।  গয়েরকাটা রিডিং ক্লাবের সমরেশ স্মরণ অনুষ্ঠানের নানা কথায় রাত কেটে গেল।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri