মাল্যবান মিত্র-র আলোচনায় মালবিকা মিত্র-র বই 'সম্ভবামি যুগেযুগে'
মাল্যবান মিত্র-র আলোচনায় মালবিকা মিত্র-র বই 'সম্ভবামি যুগে যুগে'
পৃথিবীতে একটা সময় আন্তর্জাল ছিল না, কল্পনার অন্তরজাল ছিল; পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র একটুকরো একটা জায়গা, তিস্তা করলা নদীর উপত্যকায়; দিনে দেড়খানা ট্রেন থামে সেখানে, জাতীয় সড়ক থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে থাকা মায়াময় বিচ্ছিন্ন সেই অলীকপুরে রিকশা চলে, অর্জুন নামের একটা ছেলে নিজের লালবাইকটা নিয়ে কদমতলা, পোস্ট অফিস মোড় হয়ে যখন হাকিমপাড়ার দিকে চলে যায় নিজের সত্যান্বেষী সত্ত্বাকে সার জল দিতে, তখন মফস্বলি লোকজন তাকে নিয়ে কথা বলাবলি করে তবে গান বাজনা কবিতা উড়ে বেড়ায় সেখানে থেকে নাটক, লিটিল ম্যাগাজিন, বইমেলা লেগেই থাকে সেই জনপদে, বন্ধুত্ত্বের মাঝে বিতর্কসভা থাকে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে, জীবন কাটায় গ্রন্থ ভারতী, এন চক্রবর্তী এন্ড সন্স, ওরিয়েন্টাল বুক ডিপো নামের বই এর দোকানের আলমারির ব্যোমকেশ বক্সীর কালো সোনালী প্রচ্ছদের দিকে একবুক আকাঙ্খামাখা চোখে তাকানো কিশোর কিশোরী। উপক্রমণিকা বাদ দিয়ে এবার বলতে চাইছি এমন একটি বই এর কথা যার নাম ‘সম্ভবামি যুগে যুগে‘ প্রকাশক দি ক্যাফে টেবিল লেখক মালবিকা মিত্র, লেখক এই অলীকপুরের
বাসিন্দা, কল্পনাকে শব্দে পরিণত করতে সে শুরু করেছিল কয়েক দশক আগে, কিন্তু সে এখন এই বইটি সহ আরো তিনটি বই এর লেখক।
বোধিলাভ একদিনে সম্ভব না, যেমন একদিনে সম্ভব না সম্পূর্ণ লেখক হয়ে ওঠা, প্রসঙ্গক্রমে তাই কল্পনাকে উস্কে দিতে বলতে চাই এক নিঃসন্দেহে এক রহস্যময় ও কল্পনাবাহী গল্প! ইতিহাসে অদ্ভুতধম্ম নামক গ্রন্থের উল্লেখ থাকলেও, তার প্রকৃত বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনও ঐতিহাসিক বা প্রত্নতাত্ত্বিক নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এটি কি সত্যিই বুদ্ধের সময়ের পরও টিকে ছিল, নাকি শুধুই কিংবদন্তী, তা স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে সংঘমিত্রার সিংহলে গমন এবং বোধিবৃক্ষের চারা নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ইতিহাসসম্মত, তবে তিনি কোনও বিশেষ নথি নিয়েছিলেন কিনা, তা অনিশ্চিত। অনেক গবেষক মনে করেন, যদি তিনি কিছু লিখিত নথি নিয়ে গিয়ে থাকেন, তবে তা হয়তো বিনয়পিটক বা ধর্মসংক্রান্ত কিছু উপদেশ হতে পারে, যা পরে ত্রিপিটকের অংশ হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে। এবার বাস্তবে ফিরুন, এই প্রেক্ষাপটে মিশেছে ষড়যন্ত্র, রিপুর অভিঘাত। কলকাতার এক হোটেলে শ্রীলঙ্কান সাংবাদিক ললিত রত্নায়েকের রহস্যময় খুনের তদন্তে বেরিয়ে আসে গুপ্ত সংগঠন শাক্য সংঘ, এক নবীন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী আনন্দরূপ, এবং এক প্রাচীন পুঁথি "অদ্ভুতধম্ম"-এর অস্তিত্ব। আনন্দরূপ দাবি করেন, তার কাছে স্বয়ং বুদ্ধের নিদর্শন রয়েছে, যা আড়াই হাজার বছর পরও আন্তর্জাতিক চোরাচালান বাজারে অমূল্য। ললিতের মৃত্যু, আনন্দরূপের আবির্ভাব এবং অদ্ভুতধম্মের সন্ধান—এই সবকিছু কী নিছকই সমাপতন, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক গভীর ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্র?
শেষে সহপাঠী বন্ধুমানুষ মালবিকাকে বলতে চাই, লেখাটা চলতে থাকুক, সোনার কলম হোক তোর। সবগুলো বই এবারের কোলকাতা বইমেলা, আন্তর্জালে পাওয়া যাচ্ছে। সবাই পড়ে দেখতে পারেন লেখক মালবিকা মিত্র ও তার ‘সম্ভবামি যুগে যুগে‘!
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴