সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
22-October,2023 - Sunday ✍️ By- অশোক কুমার রায় 277

মানব প্রতিমা/অশোককুমার রায়

মানব প্রতিমা
অশোককুমার রায় 

মহালয়া তিথির ভোর আর শিউলি ফুলের গন্ধে আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে দেখা যায় - "বাজল তোমার আলোর বেণু, মাতল যে ভুবন।" এই গানে ফিরে পাই 'পুরনো সেই দিনের কথা', মনে পড়ে আকাশবাণী বেতারে মহালয়ার সূচনা পর্বের সেই প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, যিনি 'দেনাপাওনা ' 'কপালকুণ্ডলা' ছবির প্রযোজক, বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য 'মহিষাসুরমর্দিনী' গ্রন্থের স্রষ্টা, যিনি বাণীকুমার নামে সকলের কাছে পরিচিত, স্তোত্রপাঠ যাঁর কণ্ঠস্বর সকলের চেনা তিনি সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, সুরকার পঙ্কজকুমার মল্লিক প্রমুখ। 'মহালয়া' শব্দবন্দের সঙ্গে পিতৃপক্ষ, মাতৃপক্ষ ও তর্পণ কথাগুলি বিশেষভাবে জড়িত। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কর্ণের মৃত্যুর পর কর্ণকে স্বর্ণ ও রত্ন দেওয়ার ঘটনা সকলের জানা। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে মহাভারতের শান্তিপর্বে ভীষ্মদেব স্বর্গারোহণ অংশে দেখা গেছে "ভীষ্মের শরীর দহি ভাই পঞ্চজন।/ গঙ্গাতে নিমজ্জিত তবে করেন তর্পণ।" তর্পণ বলতে পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানাতে তিল ও জল দান করাকে বোঝায়। পিতৃপক্ষের শেষ আর মাতৃপক্ষের সূচনা লগ্নে দাঁড়িয়ে অমরেন্দ্রনাথ রায়ের কথায় বলা যেতে পারে --"বাঙালির মতন 'মা' বলিয়া ডাকিতে পৃথিবীর আর কোনও জাতি নাই।"
 শরৎ এলেই আমাদের মনে হয় এই বুঝি মা এলেন।  "মনে করি মা এসেছে, মনে মনে ঘর ভরে ওঠে / বাহিরে সোনার রোদে পুকুরে শালুক পদ্ম ফোটে।" পুজো এলে মন ছুটে চলে চেনা স্মৃতির নাগাল ধরতে। প্রায় প্রতিটি উনুনের ঘরের ধোঁয়ায় খই মুড়কির গন্ধ পাওয়া যেত। সঙ্গে থাকত নারকেলের নাড়ু। আজকাল টাকা দিলে দোকানে হরেকরকম খাওয়ার জিনিস পাওয়া গেলেও সেই আনন্দ আর আন্তরিকতার বড়ই অভাব দেখা যায়।  আমরা নয়টা পাঁচটার 'ইঁদুর দৌড়ে' ব্যস্ত থাকা মানুষ হয়ে উঠেছি। সে খেয়াল আর রাখি না। ভোরের মাটিতে পড়ে থাকা শিউলি ফুল, কাশবনের আল ধরে হাঁটা, শাপলা তুলে আনা পুকুর থেকে সব কিছু হারিয়ে যেতে বসেছে। সকালের কমলা রঙের রোদ গায়ে মেখে জোরে জোরে 'সহজ পাঠ' পড়ার আমেজটা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। আমাদের মন 'মা বলিতে প্রাণ করে আনচান' চলার পথে রাস্তায় কোনো 'মাথায় জবজবে তেল, পরনে মোটা শাড়ি' পরা কাউকে দেখলে চোখের সামনে ভেসে আসে অতি চেনা মা দিদিমা ঠাকুমাদের কথা। অদ্বৈত মল্লবর্মনের বাসন্তী যে ভাবে সাজত। বাল্মীকি রামায়ণে রামের দুর্গাপূজার উল্লেখ না থাকলেও কৃত্তিবাসের রাম দেবীর অকাল বোধন করেছেন। "নবমীতে পূজে রাম দেবীর চরণে।/ নৃত্যগীতে নানা মতে নিশি জাগরণে।।"
সকলের জানা বাংলায় প্রথম দুর্গাপূজা করেন কংসনারায়ণ। রবি বর্মা যেভাবে তুলির স্পর্শে তাঁর শিল্প নির্মাণ করে থাকেন ঠিক তেমনি আমাদের চেনা মৃৎশিল্পী মাটি খড় বাঁশ দড়ি রঙ তুলি দিয়ে অতি চেনা মায়ের মুখ তৈরি করে থাকেন। শরতে যেভাবে চারপাশে ধানে ধানে মাঠ ভরে উঠে আমাদের মনে পড়ে যায় 'রক্তকরবী' নাটকের নন্দিনীর কাঁচাধানী রঙের শাড়ির কথা। ২ রা জুলাই ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ কালিম্পঙের গৌরীপুর ল'জ থেকে বীরেন্দ্রকিশোরকে পত্রে লিখেছেন "তোমার সাদর আমন্ত্রণ অনুসারে এইখানেই শরৎকাল যাপন করব" শরৎকাল সবাই ভাল পান এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বামী বিবেকানন্দ শ্রীশ্রীমাকে 'জ্যান্ত দুর্গা' বলেছেন। 
'জামা কাপড়ের রং বদলায়/দিন বদলায় না' শরৎকাল এলেও কিছু কিছু মানুষের মন অপেক্ষার প্রহর গোণে। কারণ তাদের নিজেদের নতুন জামা কেনা আর পরিবারের অন্যদের নতুন পোশাক দেওয়ার ক্ষমতা নেই। বিশেষ করে দেখা যায় চা-বাগান, বস্তির কিছু কিছু এলাকায়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় শুভাকাঙ্ক্ষী ও NGO শরৎকালে তাদের হাতে বস্ত্র দিয়ে শিউলি ফুলের মতো মুখে হাসি ফোটান। আর আমরা একশ্রেণির মানুষ আছি কখনও বলতে পারি না 'ভালো হবে, কালো মেয়ে, ভালো হবে তোর।'  তথাকথিত কৈলাস থেকে চেনা মেয়ে উমা চার দিনের জন্য মর্ত্যে আগমন করেন। সেই সময় শরতের আকাশের মেঘে জল না থাকলেও আমাদের মনে বেদনার ঘোলাটে জল থাকে। আমরা দিনে একে অপরের থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। যেখানে 'নাই প্রেম' আছে শুধু 'নিয়ম জিজ্ঞাসা'।  আমরা আজকাল কলগেটের প্যাকেটের মতো নকল হাসি দিয়ে থাকি। শরতের চারদিন তবুও যে মা আমাদের মূল, আমাদের ধাত্রী। যিনি আমাদের পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন, যিনি পেটে ধরেছেন মৃৎশিল্পীর মূর্তিতে সেই চেনা মায়ের মুখই ভেসে ওঠে।  উমা চেনা মেয়ের মতো বলে উঠেন 'যাব আমি পিতার বসতি।' আর অতি সাধারণ চেনা মায়ের মতোই মেয়ের অপেক্ষায় মেনকা "কৈ হে গিরি, কৈ সে আমার প্রাণের উমা নন্দিনী।"  শরৎ মানে বিশেষ করে আশ্বিনের মাঝামাঝি আমাদের মনে বাজনা বেজে ওঠে। উমা মায়ের 'আনন্দময়ী আগমনে' আমরাও বলতে পারি 'তোমার মনখারাপের ওপর জ্যোৎস্না পড়ুক, রাজেশ্বরী।'  নবমী এলেই বেজে উঠে ব্যথার বাঁশি। দশমীতে অন্তরে সুখ-দুঃখের আকুল আহ্বান নিয়ে আরাধনায় বলি 'চরণ ধরিতে দিও' মা। আর সেই সঙ্গে শরতের আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে বলতে যেন পারি 'ভাল আছ, গরিব মানুষ'। কারণ আমাদের উচিত মানুষকে জাগানো। মানুষ জাগলে আমরা ভাত পাবো, নুন পাবো, পান গুয়া চুন সব পাবো। আর পাবো শরতের আকাশে 'মা মা' গন্ধ। 

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri