সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

মাতৃ দেব ভব/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাতৃ দেব ভব
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

"বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর"

অর্ধেক আকাশ নারী, ভগবানের অজস্র সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম। যুগে যুগে কবি সাহিত্যিকরা প্রকৃতি এবং নারীর মধ্যে খুঁজে বেড়িয়েছেন  নিটোল রহস্য। কেউ কেউ নারীকে  নদীর সাথে নারীর তুলনা করে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এই ধরনীর জীবনরেখা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। 

যাঁর রক্তকণায় আশ্রয় নিয়ে এই পৃথিবীতে আসা, যাঁর স্নেহ, মায়া - মমতায়, তিলে তিলে বেড়ে ওঠা,  যাঁর  হাতের ছোঁয়ায় রোগ, অসুখ, মহামারী শত যোজন দূরে চলে যায়,  তিনি আর কেউ নন,  তিনি "মা"। কবির কথায় বারবার বলতে ইচ্ছে করে,  "মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে। " তিনিই আমার দেখা এই জীবনের শ্রেষ্ঠ নারী। 

মায়ের কাছেই শুরু হয়েছিল বর্ণপরিচয়ের প্রথম পাঠ। পাঠ্যবইয়ের বাইরে অপাঠ্য বইয়ের প্রতি আকর্ষণ তাঁর কাছেই পাওয়া। স্কুলের অন্য বন্ধুরা যখন অপাঠ্য বিষয় চর্চায় মায়ের কাছে কানমলা খাচ্ছে, তখন আমার মা এগিয়ে দিয়েছেন স্বপন কুমারের গোয়েন্দা কাহিনির  বই। সময় পেলেই পড়তাম রহস্য কাহিনি, বেতাল পঞ্চবিংশতি, পঞ্চতন্ত্রের  নীতিকথামুলক বই। তার কাছে প্রথম শোনা বইও নাকি চিবিয়ে চিবিয়ে পড়া যায়, বইকে গিলে খাওয়াও যায় আবার কিছু বই হজম হয়েও যায়। বড়ো হয়ে দিল্লি   বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামে তাঁর গুরু গম্ভীর ইংরেজি ভাষণে যখন বলছেন, " Some Books are to be digested, some Books are to be chewed and some Books are to be shwalloed..... " তখন ভিড়ে ভরা জনসমুদ্রের মাঝে মায়ের মুখখানা ভেসে উঠেছিল।  এখনো দোকান বাজার থেকে কিনে আনা জিনিসপত্রের খালি খবরের কাগজের ঠোঙায় কস্য কালের খবর পড়ি আর ছেলেবেলায় মায়ের কথা ভাবি।

গান গেয়ে ফুল তোলা মায়ের  নেশা ছিল।  কখনোই তিনি  গাছ থেকে নি:শেষ করে ফুল তুলতেন না। মায়ের কাছেই শুনেছিলাম  ফুলের প্রতি নাকি গাছেদেরও অধিকার আছে।

একবার পিছন ফিরে তাকাবার অবসর পেলাম তাই বলি,বাবাকে আমাদের ছেড়ে,  না ফেরার দেশে যাওয়ার খুব তাড়া ছিল। একান্নবর্তী পরিবার না হলেও বাড়িতে একটা উৎসবের পরিবেশ ছিল। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব লেগেই থাকত। বাড়ির উঠোনে ধানের গোলা, গোয়াল ঘরে গরু, বারোমাস পুকুরের মাছ, শাক সবজির অভাব ছিল না। দিদি দের বিয়ে এবং বাবার চিকিৎসার জন্য সম্পত্তি  কমাতে ধীরে ধীরে সেই আনন্দ ম্লান হতে থাকল। বাবার চলে যাবার পর মা'কেই একাধারে বাবা ও মায়ের দ্বায়িত্ব পালন করতেন।

আবছা স্মৃতি গুলো আর মনে পড়ে না। কিন্তু ফুল বাগানে ফুল ফোটানো,  গাছের ফুল মন্দিরে দেওয়া,  ব্রত, উপবাস, বারো মাসে তেরো পার্বণের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল। শঙ্করী ব্যানার্জি কখন জানি আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশীদের কাছে " ফুলেশ্বরী " হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এই সুখের দিন হঠাৎই দিনের আলোর মতো ফুরিয়ে যেতে থাকল।

জমি জায়গার সাথে সাথে কিছু সেই সংক্রান্ত মামলা মকদ্দমাও বাবা রেখে গিয়েছিলেন।  একাধারে ঘরের ও বাইরের সাথে সাথে ফুল ফোটানো, গান গাওয়া মা কেমন যেন মানসিক ভাবে নির্বাসিত হয়ে পড়েছিলেন।

গানের প্রতি মায়ের তীব্র আকর্ষণ ছিল সেটা বুঝতে পারি মায়ের একটা খবরের কাগজের মলাট দেওয়া গানের খাতা দেখে। রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, দ্বীজেন্দ্র গীতি আধুনিক এককথায় কি ছিল না সেই পাঁচ মিশেলী গানের খাতায়। আমরা সব ভাই বোন মায়ের কাছ থেকে সেই সব গান শুনতাম। 

গানের খাতার শেষের দিকে সব ভাই বোনের জন্মদিন,  দাদু, ঠাকুমা, এবং অন্যান্য প্রয়াত সদস্যদের মৃত্যু তিথি লেখা ছিল। 

একটা আঁকার খাতা ছিল।  রুমাল, টেবিল ক্লথ, কাপড়ের ওপর ছন্দ মিলিয়ে কবি সাহিত্যিক দের  দু'লাইনের বাণী সেলাই করতেন। সব ভাই বোনেরা মার হাতে বোনা সোয়েটার পরতাম। ঘরের দেওয়ালে একটা কাপড়ে পদ্মফুলের ওপরে এবং নিচে লেখা ছিল " এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।" সেটা সবটাই ছিল কাপড়ের ওপর সুঁই দিয়ে বানানো। 

ঢেঁকিতে ধান ভানা এবং কড়াই চালকুমড়ার বড়ি দেওয়ার মতো কাজগুলো আজও স্মৃতি পটে ভেসে ওঠে। 

কিছু রিয়েল এস্টেট থাকলেও সংসারে অর্থাভাব সব আনন্দের রঙ কে ম্লান করে দিয়েছিল। কলেজ জীবনে হাতে গোনা পয়সায় আমাদের  চলতে হত। আমার খুব  শখ ছিল একটা হারমোনিয়ামের। কোনোভাবে  একটা টিউশানিও জুটে গিয়েছিল । দিনে তিন কিলোমিটার হেঁটে মাসে এক'শ টাকার প্রাপ্তি যোগ হয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে মাসিক কিস্তিতে  হারমোনিয়াম কিনলেও গানের মাস্টারমশাইএর টাকা মা ঠিক আগেভাগে জোগাড় করে রাখতেন।

জন্মান্তরবাদ না মানলেও আমার মা আশীর্বাদ এবং অভিশাপে বিশ্বাস করতেন। বিশ্বাস করতেন, কখনো মানুষের পেটে লাথি মারার মতো কাজ ভাবতে বা করতে নেই।  মানুষের মনে ব্যাথা দিলে সেটা  দেরিতে  হলেও  কয়েক'শ গুন তীব্র হয়ে নিজের কাছে ফিরে আসে।  সেই বিশ্বাসে ভর করে আজও তার দেখানো পথে, পথ চলছি।  জানি তাঁর আশীর্বাদে সব কণ্টকাকীর্ণ পথ মসৃন ও সুগম হয়ে উঠবে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri