মহালয়া/চন্দ্রানী চৌধুরী
মহালয়া
চন্দ্রানী চৌধুরী
অশোকবাবু ও তাঁর স্ত্রী নীলিমা দেবী মন খারাপ করে মুখোমুখি বসে আছেন। দুজনেই বয়সের ভারে জীর্ণ। একমাত্র সন্তান সৌম্য বিদেশে সেটেলড্। পেনশনের টাকায় দুজনের সংসারে কোনো অসুবিধে হয় না । তবে এই বয়সে অশক্ত শরীরে এখন আর আগের মতো সব কাজ করতে পারেন না। বাড়ির সামনে থেকে যতটুকু বাজার করা সম্ভব তাই দিয়েই কোনমতে চলে তাদের। নীচ তলায় ভাড়া দিয়েছেন ; স্বামী মারা যাবার পরে খুব বিপদে পড়ে এসেছিল ওরা। তাই অল্প টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। মা মেয়ে থাকে। মেয়ে রিমি কলেজে পড়ে আর মা সুজাতা একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী করে। ওরা যখন ঘরে থাকে তখন ঘর ভরা মনেহয়। তাছাড়া ওরা সবসময় অশোকবাবুদের দেখাশোনাও করে।ওষুধপত্র যখন যা দরকার সব ওরা এনে দেয়। নিজের সন্তান যখন দূর বিদেশে নিজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত তখন এই সদ্য পরিচিত মানুষেরা তাদের কত যত্ন করছে একথা ভেবে তাঁদের কৃতজ্ঞতার শেষ থাকে না।
আগামীকাল মহালয়া। পুরোনো রেডিওটা সারাই করার জন্য কদিন আগে রিমিকে দিয়ে দোকানে পাঠিয়েছিল। দোকানদার বলে দিয়েছে ওটা আর ঠিক হবে না। তাই আজ ওনাদের খুব মনখারাপ । অশোকবাবুরা প্রতিবছর মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের স্তোত্রপাঠ শোনেন।এবছরই এতোদিনের পুরোনো রেডিওটা খারাপ হয়ে গেল। মাসের শেষ ; এখন নতুন রেডিও কেনা সম্ভব নয়। এতো বছরের জীবনে এবারই প্রথম তাদের মহালয়া শোনা হবে না একথা মনে করে দুজনেই একরাশ মন খারাপ নিয়ে শুতে চলে গেলেন। সারানো যাবে না জেনেও রেডিওটা রেখে দিয়েছেন। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে ঐ রেডিওটার সাথে।
ভোরে চির পরিচিত মহালয়ার স্তোত্রপাঠ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় অশোকবাবুর। কোথা থেকে শব্দ আসছে বোঝার আগেই কলিংবেলের শব্দ। দরজা খুলে দেখেন রিমি ও সুজাতা দাঁড়িয়ে আছে। রিমি র হাতে একটা ছোট রেডিও আর সুজাতা সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসেছে। হইহই করে রিমি বলল "চল দাদু মহালয়া শুনি সবাই মিলে। সবাই একসাথে মহালয়া শুনব বলে আমার জমানো টাকা থেকে এই ছোট রেডিও টা কিনলাম।"
বৃদ্ধ দম্পতির গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল জলকণা ; রিমিকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে আশির্বাদ করলেন দুজনে ...
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴