সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
17-March,2024 - Sunday ✍️ By- মমতা পাল চন্দ 340

মন দিয়ে দেখা/মমতা পাল চন্দ

মন দিয়ে দেখা
মমতা পাল চন্দ

পৃথিবী মানুষের সম্পত্তি নয়  বরঞ্চ মানুষই পৃথিবীর আশ্রিত  প্রাণী। অথচ কি অবলীলায় মানুষ এই পৃথিবীর সম্পদ কেনাবেচা করে। এই সুনীল আকাশ-সতেজ বাতাস প্রাণের উষ্ণতা -চায়ের বাগিচা - বনানীর তরুরাজি - ঝর্নার স্বরধ্বনি দিন দিন কিভাবে পাল্টে যাচ্ছে মানুষেরই অজ্ঞানী অবোধ আচরণের জন্য। ভোরের বাতাসের সতেজতা, জ্যোৎস্নার ঝিকিমিকি,জনহীন জঙ্গলে অবলীলায় ফুটে থাকা মনোমুগ্ধকর ফুল , শীত বসন্তের কুয়াশা , পাখিদের কলকাকলি, ভ্রমরের গুঞ্জন ,প্রশস্ত নদীতট, সমুদ্রের ঢেউয়ের উত্তাল তরঙ্গ লহরী যেগুলোকে কিনা মানুষের বুক দিয়ে আগলে বাঁচিয়ে রাখার কথা তাকে নির্বিচারে বিনষ্ট করেই  চলছে ইট কাঠ পাথরের নগরী তৈরির নির্লজ্জ বেসাতি। এই ধরণীই তো শোনায় তার বিশালতার সুর তার গাম্ভীর্যের - পবিত্রতার কথা - ফুলের মিষ্টি গন্ধেভারা বাতাসই তো শেখায় জীবনে বিশুদ্ধতার বাণী। আমরা বহু মানুষ এই সৌন্দর্যের পূজারী - এই অকৃত্তিম সৌন্দর্য্যকে ভালোবাসি। দুচোখ ভরে দেখি আর আনন্দে ভরে ওঠে মন। অথচ দেখা যায় আজকাল প্রকৃতির নির্জনে বাস করা সহজ সরল মানুষ গুলোই যেন আমাদের কাছে  প্রদর্শনের বস্তু হয়ে উঠেছে। অন্তরাত্মা যেন অজান্তেই বলে ওঠে ওরে মানুষ ওরাই এখনও আসল মানুষ - অভিজাত মনুষ্যত্বের অধিকারী যারা কারো কাছে হাত পাতে না। নিরন্ন জীর্ণ শীর্ণ অবস্থায়ও প্রকৃতি পরিবেশকে আগলে রাখে। বন্য প্রাণ কে বাঁচিয়ে রাখে। আর শহুরে মানুষেরা ওদের ওই নীরব ঝলমলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা আস্তানার কাছে কৃত্রিম হোটেল - হোম  স্টে তৈরি করে তার মধ্যে বিলাস বহুল আরামের ব্যবস্থা করে তার মধ্য থেকে প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করতে যায়। শহুরে হাঁফিয়ে ওঠা জীবনে দু'দণ্ড চোখের  তৃষ্ণা - প্রাণের আরাম খুঁজতে যাওয়া ওদের মাঝে । ফিরে এসে ছবি পোস্টান আর অন্যদেরকে উৎসাহিত করেন ওদেরকে দেখবার জন্য। এর মধ্যে মানুষের উপলব্ধি - perception বা অবলোকন কতটুকু হয় ? মানুষ কি ওই ঝর্না পাহাড় নদী জঙ্গলের সাথে সত্যিকরে একাত্মতা অনুভব করে ? যদি একাত্মতা অনুভব করতো তাহলে হয়তো বুঝতো এই নীরবতা এই পবিত্রতা মানুষের আত্মার অনুভব- নাড়ীর টান।

হয়তো বা কিছু মানুষকে ওই সবুজ প্রান্তর - তরুরাজি সত্যি বার বার ডাকে। সেই মানুষগুলোও বার বার সেই জায়গাতে যায়। জঙ্গলের সাথে - পাহাড়ের সাথে এক অমোঘ নাড়ীর টান - প্রাণের টান - মনের মধ্যে নিজের অজান্তেই এক অস্থির চঞ্চলতা অনুভব করে সে। কেউ বা গল্প কবিতা লেখে। কিন্তু সেই মানুষগুলির ভিতরেও কি বৃক্ষের ভিতর দিয়ে যে বৃক্ষরস প্রবাহিত হয় এবং মানুষের ভিতর যে রক্ত সঞ্চালিত হয় এ দুটোর ভিতর আত্মিক সম্মেলন ঘটে ? প্রাণের সম্পর্ক গড়ে ওঠে যেমন মায়ের সাথে সন্তানের বন্ধনে হয়। শহুরে মানুষ আর প্রকৃতি কি এই বাঁধনে আবদ্ধ হয় ? 

তাহলে প্রশ্ন ওঠে আজকাল বহু মানুষ হি হি রি রী করে জঙ্গলে বেড়াতে যায় ছবি পোস্টানোর দৌলতে। তারপর এমন আনন্দে মেতে ওঠে যেন কাঞ্চন জঙ্ঘার শৃঙ্গ জয় করে ফেলেছে। অথচ ফেরার সময় জলের বোতল, খাবারের প্যাকেট, মদের বোতল, ঘুটকার প্যাকেট প্লাস্টিক উচ্ছিষ্ট খাবার এমনভাবে ফেলে আসে মনে হবে কোনো হানাদার বাহিনী এসে যেন ওই পরিবেশ প্রকৃতিকে তছনছ করে দিয়ে গেছে। একবার ভাবে না এই পবিত্র পরিবেশই  মানুষের মা। পরিবেশ প্রকৃতিকে অপবিত্র করার কোনো অধিকার মানুষের নেই। আর বহু মানুষ তো জীবনে এই শিক্ষাটাই পায় নি যে সে এই পৃথিবীর আশ্রিত জীব। আর পাঁচটা পতঙ্গের মতই তার দর।  মানুষ তো বানর বা বাঁদড়ের বংশধর। বিবর্তনে বুদ্ধিমান। তবে বাদরের স্বভাবের যদি বিবর্তন না ঘটে থাকে তাহলে তো বনে কত পাখি আছে সুমিষ্ট গান গায়। তাদের যখন বাড়িতে পোষা হয় তারা কত সভ্য আচরণ করে - মানুষের মত অবিকল কথা বলতে পারে। কুকুর গাধা খচ্চর কত বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে ওঠে মানুষের। মল  ত্যাগ করতে হলেও কুকুর বাইরে যাবার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। তুলনায় কিন্তু মানুষ চাঁদে চলে গিয়েও প্রকৃতির প্রতি বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারেনি। কিংবা মায়ের মত ধরিত্রীকে ভালোবাসতেই শেখেনি। অনেককেই দেখেছি প্রকৃতির গায়ে অনাদরে ফুটে থাকা ফুলকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রকৃতির স্নেহের সন্তান না ভেবে সমানে ডাল ছিড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে আসে। ভাবে  সে কি না জানি বিশাল প্রকৃতি প্রেমিক। অথচ জীবনে প্রকৃতিকে কিছু দিতে শেখে নি - শুধু নিতে শিখেছে। ত্যাগই যে প্রেমিক হবার প্রাথমিক শর্ত এই বোধের জন্মই তো কেউ দেবার চেষ্টা করে নি তাকে। ও মানুষ তোমরা কবে দেখতে শিখবে গো ? কবে নিজের অস্তিত্ব - আর নিজেকে চেনার সুযোগ তোমাদের হবে ? যে জঠর থেকে জন্ম নিয়েছ যার কোলে তোমাদের এত রোয়াবী! কবে ভাববে সে আর কেউ নয় সে তোমার মা - সে তোমার জন্মদাত্রী - সে তোমার আশ্রয়দাত্রী  ধরিত্রী মা- লুঠের সামগ্রী নয় ! তোমরা তো দুনিয়াকে চোখ দিয়ে দেখ - মন দিয়ে দেখতে শিখবে কবে ? কবে ভাবতে শিখবে এই যে নদী সে তোমার মা - এই যে আকাশ সে তোমার মুক্তি- এই যে বাতাস সে তোমার আত্মা - তোমার প্রাণবায়ু। শিক্ষাঙ্গন থেকে এসব মানুষ শেখে পরীক্ষাও পাস করে কিন্তু তা তো আত্মস্থ করে না ফলে সব বুঝেও জেনেও হয়তো প্রকৃতিকে অপবিত্র করে কারণ লোভের কাছে সব আদর্শ - যুক্তি - দর্শন হার মেনে যায়। ফলে আকাশ বাতাস পাহাড় নদী কন্দর  আত্মার আত্মীয় হয়ে ওঠে না মনুষ্য প্রজাতির। কারণ যেন তেন প্রকারেন  টাকা রোজগার মানুষের রাতের দ্যুতি দিনের জ্যোতি।

তাহলে উপায় কি ? কিছু মানুষ তো এখনও আছে যারা বসন্তের কুঁড়ি ফোঁটা আর নতুন পাতা গজানোর মধ্যে নব জীবনের আশ্বাস আর ধারাবাহিকতার চিহ্ন খুঁজে পান। তাকে কবিতায় বন্দী করে ঝাড়বাতি হিসেবে তুলে ধরেন। আসলে দুনিয়াতে কবিদেরও দায়িত্ব আছে - আছে সাহিত্যিক - উপন্যাসিক নাট্যকারের দায়িত্ব। তারাই তো দিব্য দৃষ্টি সম্পন্ন  সেই সন্তান ঈশ্বরের আশীর্বাদ ধন্য মানুষ যাদের এই ধরিত্রী মা দেখার জন্য - উপলব্ধি করার জন্য তৃতীয় নয়ন দিয়েছেন। দিয়েছেন একটা সংবেদনশীল মন। তাই এই  অবক্ষয়ের সময়ে মানুষের চেতনা যদি তারা না ফেরায় - নিজের মাকে চিনতে না শেখায় সেটা বড়ই বিড়ম্বনার। মানুষের আত্মাকে এই পৃথিবীর সাথে আত্মীয়তা খুঁজতে হবে - একাকীত্ব নয়। কেননা বেশির ভাগ মানুষ নগর জীবনে হাঁফিয়ে উঠে পাহাড় সাগরতট- বনভূমিতে একটু একা হতে যায়। একা হতে নয় আত্মীয় হতে যেতে হবে প্রকৃতির কাছে। কারণ প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্বন্ধ মা ও সন্তানের। আর এই বোধকে জাগিয়ে তুলতে মানুষের চোখে - মনে চিন্তার ঝড় তুলে দিতে হবে। তাকে পাঠের দ্বারা ভাবাবেগী করে তুলতে হবে। কারণ মানুষই তো শোনে হঠাৎ করে বৃষ্টি হলে তৃষ্ণার্ত পৃথিবীর  জল শোষার শব্দ- শোনে পাহাড়ের কান্না - বিশালতার নীরবতা। পাতা ঝরার শব্দ - শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি- অনুভব করে নদীর জল শুষে নেওয়া বাতাসের গন্ধ? হে  মানুষ দেখেছো তো নিশ্চয় বৃষ্টির পর প্রকৃতির ঝলমলানি হাসি ?  প্রকৃতির নিজস্ব বাতাসের গন্ধ নিয়েছ কি ? তাহলে ওই ডোবা যেখানে বর্ষার জল এলে  ব্যাঙেদের কনসার্ট শুনেছ কি ? শুনেছ কি বেঁচে থাকার আনন্দ লহরী ? কিংবা দেখেছো কি বর্ষা এলে কেমন করে মরা নদী প্রাণে ভরে। হে মানুষ তোমরা নিজেদের মধ্যে অনুভব কর কি এই প্রাণের উন্মাদনা  তোমরা যারা ডোবা খাল বিল বেঁচে টাকার পাহাড় গড় ? এ যুগের মানুষের তো দেহের আগে আত্মাটা মরে যায়। ফলে মানুষ পুতিগন্ধময় পরিবেশে সতেজ নি:শ্বাস নিতে ভুলে গেছে। সে ভয় পায় যে এই ভেবে যে প্রতিবাদ করলে  ওই বাতাস টুকুও যদি শেষ হয়ে যায় !

তাই বাড়তি দায়িত্ব তাদেরও আছে যারা বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য লড়ে যাচ্ছেন। তুলে ধরছেন শুকনো গভীর তথ্যনির্ভর গভীর বক্তব্য - গুরু গম্ভীর আলোচনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা কোনো প্রেক্ষাগৃহের সেমিনারে । হয়তো কিছুটা  জন জাগরণ হয়ও তাতে সভা সমিতি বা পঞ্চায়েতে। কিন্তু কথায় বলে বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীত জ্ঞান যদি মাঠের মানুষের কাছে নিয়ে না যাওয়া যায় তাহলে তা বিশ্বজনীন প্রাজ্ঞতা পায় না। অনেক সময় দেখা যায় কিছু মানুষ পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। সেখানে মন দিয়ে উঁকি দিলে দেখা যায় যে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা বা   নাড়ীর টানে ওই মানুষগুলো সামিল হন নি।আসলে তারা প্রকৃতি সম্বন্ধে অবোধ। আন্দোলনে সামিল হয়েছেন এমন কোনো মানুষের দ্বারা যিনি জলা ডোবা নয়ানঞ্জুলি বুজানো ব্যবসায়ী ব্যক্তির সাথে ব্যক্তিস্বার্থ বা সংঘর্ষের ফলে  আন্দোলনটা মূলত করেছেন। তাই এই ধরনের সচেতনতা আন্দোলনেরও গোড়ায় গলদ। ফলে প্রকৃতি ও মানুষের যে আন্তঃসম্পর্ক এর গভীরতর পবিত্র সত্যকে তুলে ধরে অজ্ঞজনের দিব্যাচক্ষু বা দিব্যদৃষ্টি খোলার দায়িত্ব মানুষকেই নিতে হবে।

আবার আমরা দেখি পৃথিবী পৃথিবীর মতন চলছে। অথচ কত প্রাণী জন্তু জানোয়ারের ক্রমবিলুপ্তি ঘটে যাচ্ছে। অথচ এই মাটিতেই তো মিশে আছে কত বিলুপ্ত প্রাণী -  মানুষেরই পূর্বপুরুষ - কত আত্মীয় স্বজনের দেহ মন প্রাণ। তাই হে মানুষ এই মাটির কান্না শোন, মাটিটাকে অন্ততঃ শ্রদ্ধা জানাও। নাহলে এমন একদিন আসবে যেদিন পৃথিবীর সব ভারসাম্য তছনছ হয়ে যাবে। তাই তো বিশ্বকবি বলেছেন:

বুড়ো চন্দ্রটা নিষ্ঠুর চতুর হাসি তার -
মৃত্যুদূতের মত গুড়ি মেরে আসছে সে পৃথিবীর পাঁজরের কাছে।
একদিন দেবে চরমটান তার সাগরে পর্বতে; 
 মর্ত্যলোকের মহাকালের নতুন খাতায় পাতাজুড়ে নামবে একটা শূন্য।
গিলে ফেলবে দিনরাতের জমাখরচ,
মানুষের কীর্তি হারাবে অমরতার ভান
তার ইতিহাসে লেপে  দেবে অনন্ত রাত্রির কালি।
মানুষের যাবার দিনের চোখ
বিশ্ব থেকে নিকিয়ে নেবে রং
মানুষের যাবার দিনের মন ছানিয়ে নেবে রস।
 বীণাহীন সভায় যন্ত্রীর আঙ্গুল নাচবে বাজবে না সুর।
সেদিন কবিত্বহীন বিধাতা
একা রবেন বসে
নিলিমাহীন আকাশে
ব্যক্তিত্বহারা অস্তিত্বের গনিত তত্ত্ব নিয়ে,
তখন বিরাট  বিশ্বভুবনে দূরে দূরান্তে অনন্ত অসংখ্য লোকে লোকান্তরে,
 এ বাণী ধ্বনিত হবে না কোনোখানেই -
'তুমি সুন্দর '
'আমি ভালোবাসি।'

তাই হে মানুষ পৃথিবীর ফুসফুসটাকে দগ্ধ করে দিও না। বরঞ্চ তোমাদের সন্তানকে গড়ে তোলো এই ধরিত্রীর সন্তান হিসাবে। নাহলে ঈশ্বর - প্রকৃতি মা তোমাদের কখনো ক্ষমা করবেন না। সর্বংসহা ধরিত্রী মা ধৈর্য্য হারালে এক ঝটকায় তার অবাধ্য সন্তানদের সাজা দিতে নিজেকেই দগ্ধ করে দেবেন শেষবারের মত। তাই ধরিত্রীর প্রতি সংবেদনশীল হও হে মানুষ! প্রকৃতির দিকে তাকাও তোমার আনুগত্য শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা নিয়ে। শুধু চোখ দিয়ে নয় - মন দিয়ে দেখ - অনুভব কর তোমার মা - তোমার আশ্রয় দাত্রীর অত্যুজ্জ্বল ত্যাগ আর জঠরের উষ্ণ উদার সহনশীলতাকে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri