মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস-এর আলোচনায় উমেশ শর্মা-র 'নেখানেখির জগতত্ ভাসিতে ভাসিতে'
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস-এর আলোচনায় উমেশ শর্মা-র 'নেখানেখির জগতত্ ভাসিতে ভাসিতে'
-------------------------------------------
অদ্ভুত জলময় প্রচ্ছদে নৌকোর উপর লেখক নিজে।সাহিত্য জগতে আক্ষরিক অর্থেই ভেসে চলার নদী কথা বলেছেন তিনি। এখানে উৎসর্গপত্র, ভূমিকা এবং পুরো বইটি লেখা হয়েছে রাজবংশী ভাষায়।
কথার হালিচা ... এই সূচিপত্র উল্লেখ করে সেখানে নিজের লেখা 'বই গিলার' পরিচয়ে যান
প্রথম গ্রন্থ পর্বে লেখকের হয়ে ওঠা জীবন পর্বের কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি, 'চক্ষু মুছিয়ে কি আর কান্দন থামে?ভিতিরটা খালি গুড গুডাছে'...
স্কুল কলেজের পাঠ শেষে চাকরি বা কর্মজীবনে প্রবেশ।সুন্দরভাবে জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়া লেখক উল্লেখ করেন,'শকুনা পরা খট্ খটাং নদীত্ জীবনত্ সোয়া শুরু হইল।মুই আরহ লেখালেখি শুরু কন্নু।বাওকুমটা বাতাস আর নাই।' এরপর বিয়ের পর্ব উল্লেখ করেন উমেশদা সাবলীল ভঙ্গীতে।
প্রথম ব ইয়ের কথা বড় আবেগে লেখেন কলকাতা গ্রন্থ তীর্থ প্রকাশনা ১৯৯৭ এর ১০ ই আগষ্ট 'মোর প্রথম ব ই'জলপাইগুড়ির রায় বাহাদুর খান বাহাদুর বই খান প্রকাশ করল।উত্তর দক্ষিণ আসামে ছড়িয়ে গিয়েছিল এই বইয়ের সুবাস।নানা পত্রপত্রিকায় এ ব ইয়ের গুরুত্বপূর্ন আলোচনা প্রকাশ পায়।এরপর 'রায়কত বংশের রাজর্ষি'র প্রকাশের কথা বলেন তিনি। সেটিও সাড়া ফেলে। জলপাইগুড়ির পৌরসভা:১২৫ বছরের ইতিবৃত্ত' এই বইয়ের বিরাট আয়োজন ও সম্পাদনা করেছিলেন উমেশ শর্মা মহাশয়।পৌরসভার অনুরোধ যে তিনি ফেলতে পারেননি, সেকথা লেখেন এভাবে,'...ইতিহাস দেখিয়া দিবার আটুস করিলে মুই আর না করি বারে পান্নু নাই।রাজি হয় য়া গেনু।' প্রচুর খাটুনীর কথা লিখেছেন লেখক এ ব ই প্রকাশ করতে গিয়ে।বৈকুন্ঠপুরের পূজা পার্বণ ও লোকাচারের ধারা নিয়ে গ্রন্থটিতে ও ইতিহাস রক্ষা করা,বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির বিয়ে পূজা পার্বণ,ব্রত,উপবাস,জন্মতিথি সব বিষয়ের ই উল্লেখ আছে।বইটির বহু প্রশংসা ও বিশিষ্ট গবেষক প্রাবন্ধিক দের মূল্যায়নে আপ্লুত উমেশদা বলেন,'আচ্ছা কহেন ত এমুন জ্ঞানী গুণী মানসিকতার ভাল ভাল কাথা কি পাইসা দিয়া,ঘুস দিয়া পাওয়া যায়? ঐ মানসিলায় তো মোর দাদা,বান্ধব।এনং বান্ধব আর কুনঠে পাওয়া যাবে?পিএইচডি বঙ্গরত্ন ডিলিট ধুইয়া কি মুই জল খাম? প্রচুর বই তালিকা দিয়েছেন উমেশ শর্মা।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জলপাইগুড়ির ইতিহাস লিখেছেন।আলিপুর দুয়ারের কথা লেখেন, এমনকি 'কোচবিহারের রাসমেলা' বিষয়ক বই ও রচনা করেন।এই সমস্ত পুস্তক পরিচয় দেওয়ার পর কোভিদ কালের অসুবিধার উল্লেখ করেছেন তিনি।উত্তর পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতির প্রাণপুরুষ সরোজেন্দ্র দেবরায়কত কিংবা উপেন্দ্রনাথ বর্মণ, এঁদের কোন মূর্তি জলপাইগুড়িতে স্থাপিত হয়নি বলে দু:খ প্রকাশ করেছেন লেখক দ্ব্যর্থহীন ভাষায়।
লেখকের বিভিন্ন প্রবন্ধ,সংশ্লিষ্ট পত্রিকা,সম্পাদক ও বিশিষ্ট দের নাম ও ইতিহাস তালিকা রচনা করে লেখক উল্লেখ করেছেন,"জলপাইগুড়ি জেলা সার্ধ শতবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থ (১৮৬৯-২০১৯), ১৪০৬পৃষ্ঠা, সম্পাদনা মোর জীবনের বড় কাজ বলিয়া মনে করু।
আপ্তকথা পর্বে'বিরুয়ার গান' থেকে দু লাইন উল্লেখ করে ভূমিকায় দেবেশ রায়ের লেখার উল্লেখ করে লেখেন, এই বুড়্ হালি বয়সদ গোড়াশির সন্ধান করা গোটাটাই ফম হারেয়া ফম খুঁজি বার কাম।সাহিত্যিক দেবেশ রায় উঞার আত্মকথা'জলের মিনার জাগাও' লেখিবার সময় ঐনং একখান কাথা কহিছিলেন। 'পাছিলা দিনের বিতিয়া যাওয়া কাথা যায় হুশ করিয়া ফম করেন না ক্যানে,যত বড় জলের মিনার বানাও না ক্যানে,জলতে মিশিবে।...'
জীবন, লেখাপড়া, বাসস্থান, আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছেন প্রাবন্ধিক উমেশ শর্মা।জীবন পর্যায়ে পরিবার বাবা মা সকল আত্মীয় পরিচয় পর্বের পর্বান্তরে বর্ণনা করেছেন তিনি। অনেক মানীগুণী ব্যক্তিত্ব (রাজবংশী) তাঁদের সঙ্গে পরিচয় পর্ব বর্ণনা করেছেন অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে।
'মুই রাজবংশী না হও। তাহ কেনং করিয়া যে'রাজবংশী ভাষা বান্ধব সম্মান' পাইনো ধন্যবাদ জানাবার ভাষায় খুঁজিয়া পাওনা।এই গান খান ফম পড়িল।"পরের জায়গা পরের জমি/ঘর বানাইয়া আমি র ই/আমি তো আর ঘরের মালিক নই"
সংসার জীবন ছেলে স্ত্রী সকলের কথাই রাজবংশী ভাষায় লিখেছেন।প্রচুর সম্মাননা পেয়েছেন।কতনা বিখ্যাত জায়গায় সেমিনার করেছেন উল্লেখ আছে।
ব ইটি এক কথায় প্রাবন্ধিক উমেশ শর্মার বিপুল বিচিত্র জীবনের ধারাবাহিক অনুপুঙ্খ। স্থানীয় ভাবেই সুন্দর মুদ্রণ। প্রকাশক 'কামতাপুর ভাষা একাডেমী,জলপাইগুড়ি।রাজবংশী ভাষা যদিও তাঁর মাতৃভাষা নয়, তবু এ সাবলীল প্রচেষ্টা আমাদের বিস্মিত করে বৈকি। ভাল লাগে গ্রন্থটি লেখক ও তাঁর সময়ের ধারাভাষ্য রক্ষা করেছে। ইতিহাসের সংরক্ষণ ঘটিয়েছে। এই কারণেই মূল্যবান।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴