সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
07-January,2024 - Sunday ✍️ By- দেবাশীষ বক্সী 290

মটরশাকের ঘন্ট/দেবাশীষ বক্সী

মটরশাকের ঘন্ট 
দেবাশীষ বক্সী

শীতের সকাল। ফুরফুরে ঠান্ডা বাতাস বইছে। লিচু গাছের ফাঁক গলে এক জায়গায় ভারি মিষ্টি রোদ মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। একখানা কাঠের চেয়ারে হট্টগোপাল পত্রানবীশ বসে রোদের তাপ নিচ্ছেন। বাতাসে সর্ষে ফুলের হালকা গন্ধ। 

হট্টগোপালবাবুর বয়স নব্বই। আগের মতো কাজ করতে না পারলেও এখন কর্মক্ষম। কাজের ফাঁকে বয়সকাল হতেই সব্জী লাগানো তাঁর শখ। আগে নিজেই করতেন, এখন ভক্তসখা নামে এক কাজের লোক রয়েছে। তবে তিন পালং মটরশাকের ক্ষেতটি তিনিই দেখভাল করেন। এই তো সকাল সকাল মটরক্ষেতে জঞ্জাল পরিষ্কার করে, মাটি নরম করে, জল দিয়ে, এক ঝুড়ি মটর শাক তুলে রান্নাঘরে স্ত্রীর হাতে দিয়ে এসেছেন। তবে স্ত্রী হেমাঙ্গী সুন্দরী মুখে কুলুপ এঁটে সেই শাক গ্রহণ করেছেন তা অবশ্য নয়। 

হেমাঙ্গীবালা সুন্দরীর বয়স হয়েছে। যৌবন কালে দেড় যুগ ধরে তেরোটি সন্তান প্রসব করে মেজাজ খানা বড্ড খিটখিটে হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সংসারে এক দঙ্গল মানুষজন নিয়ে কম ঝামেলা পোয়াতে হয় না। স্বামী মানুষটিও একটু নাছোড় প্রকৃতির। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন মটর শাকের ঘন্ট না হলে বুড়োর চলে না। শুধু কি তাই ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতে সেই ঘন্ট দিতে হবে। শাকের গন্ধ, আদার পরিমান, ডালের বড়ি দাঁতে পড়লে যাতে কুড়মুড়িয়ে শব্দ তোলে সেই সব দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয় । আজ সকাল থেকে হেমাঙ্গীর মটকাখানা গরম হয়ে রয়েছে। অবশ্য তার যথেষ্ট কারন রয়েছে। এই অঞ্চলে হনুমানের একটু উপদ্রব রয়েছে। পাশের জঙ্গল থেকে প্রায়ই দু চারটি হনুমান বাড়ীতে চলে আসে। আজ নাকি হেমাঙ্গী চাক্ষুস দেখেছে, উঠোনের পেয়ারা গাছের ডালে বসে পা দোলাতে দোলাতে একটি ধেড়ে হনুমান হেমাঙ্গীর চোখে চোখ রেখে টুস করে চোখ মেরে নাকি  ফিচিক করে হেসেছে। হনুমানটির এই অশালীন আচরণ হেমাঙ্গী কোন ভাবেই ভুলতে পারছে না। অতএব, হট্টগোপাল যখন শাকের ডালি স্ত্রীর হাতে অর্পন করে ফোকলা দাতে একটু মুচকি হেসেছেন, হেমাঙ্গী নিজেকে আর বসে রাখতে পারলেন না। ভয়ানক রেগে লোভী, নুলো, বুড়োভাম, মিনসে ইত্যাদি ইত্যাদি শব্দ দিয়ে ঝাঁঝালো বাক্য গঠন করে শারিরীক অঙ্গভঙ্গি মাধ্যমে স্বামীর উদ্দেশ্যে বিষাক্ত তীরের ফলার মতো নিক্ষেপ করতে থাকেন। আঙুরের থোকার মতো এত ছেলেপুলে, নাতি নাতনি থাকায় সেই কাল হতে প্রত্যহ ইংরাজী লেটার দিয়ে শব্দগঠন শুনতে শুনতে দুই তিনটি ইংরাজী নোংরা শব্দও তিনি স্বামীকে শুনিয়ে ছাড়লেন। যেমন অ্যাস,  ডাঙ্কি, অক্স, ডাঙ্কিস চাইল্ড ইত্যাদি ইত্যাদি । 

বেলা হয়েছে। কাক ডাকা দুপুর ঘনিয়ে এলো বলে। 
স্ত্রীর বাক্যবানে বিধ্বস্থ হট্টগোপাল বাবু ঝাঁঝড়া বুক নিয়ে রোদে বসে রয়েছেন। মনখানা একদম ভালো নেই। সামান্য মটর শাকের ঘন্ট নিয়ে এতটা তির্যক বাক্য শুনতে হবে তিনি ভাবেননি। নেশা বা ভালোবাসা বলতে তো ঐটুকু। মনে পড়ে ছোটবেলা থেকেই এই ঘন্টের প্রেমে হট্টবাবু হাবুডুবু। মনে আছে একবার মটরশাকের ঘন্টের সুগন্ধে আত্মবিস্মৃত হয়ে তিনি তিনপাতা কবিতা লিখে ফেলেছিলেন। আর একবার , জিহ্বার সাথে শাকের সঙ্গমে বিভোর হয়ে খাওয়ার পাতে পাক্কা দশ মিনিট ঘুমিয়ে পরেছিলেন। কিন্তু হেমাঙ্গীর এতটা রাগ হওয়াটা আদৌও সুস্থতার লক্ষণ কী? তাঁর কোন ভয়ানক অসুখ হয়নি তো? হট্টগোপালের বুকখানা সহসা কেঁপে ওঠে। তিনি মনস্থির করেন যে ভাবেই হোক স্ত্রীর রাগ ভাঙিয়ে আজই চন্ডীতলায় রাখেহরি বাড়ুজ্জ্যের "মারে কে" হোমিও ক্লিনিকে নিয়ে যাবেন । 

মধ্যাহ্ন ভোজের সময় হয়েছে। অভিমানী হট্টগোপাল বাবু ধরে নিয়েছেন আজ মটর শাকের ঘন্ট ছাড়াই মধ্যাহ্নকালীন আহার তাঁকে সারতে হবে। এ যেন ঠিক ফুটবল ছাড়া ফুটবল খেলা। তাই তিনি বিদগ্ধ কোচের মতো অন্যান্য পদগুলি কখন কার সাথে ভক্ষন করলে  এই পরাজয়ে কিছুটা সম্মান বজায় রাখতে পারবেন, তারই ঘুটি সাজাতে লাগলেন। কিন্তু রান্নাঘরে পিঁড়িতে উপবীত হয়ে তিনি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে দেখেন হেমাঙ্গীবালা কাঁসার থালায় ধোঁয়া ওঠা ভাত ও জামবাটি ভরা মটর শাকের ঘন্ট দিয়ে স্বামীর পাশে একখানা পাখা নিয়ে আসন কুটে বসে পড়েছেন। হেমাঙ্গী হালকা পাখার বাতাস দিতে দিতে অন্য পদগুলি এগিয়ে দিয়ে, মটর শাকের ঘন্ট কেমন হয়েছে জানতে চান। স্ত্রীর এমন মধুর বাক্য হট্টগোপালকে বাক্যহারা করে তোলে। স্বামীর দৃষ্টিশক্তি নিয়ে হালকা অভিযোগ করে আদেশের সুরে হেমাঙ্গী বলেন, "কাল সকালে তুমি আর আমি মিলে কচি মটর শাক তুলব । আজ বুড়ো মটর শাক বাছতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া তোমার দাঁতের যা অবস্থা নরম শাক রান্না না করলে খাবে কি করে!"

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri