মজার ছলে/আশিস কুমার খাজাঞ্চি
মজার ছলে
আশিস কুমার খাজাঞ্চি
ঘটনা ঘটে যায়। তাদের কেউ কেউ পরমাত্মীয় হয়ে মনের ছোট্ট কামরায় বড় বড় সংরক্ষিত আসনে রয়ে যায়।
আমার পুরনো স্কুলের ফেলে আসা বিরাট সময়ের দুএকখানি সরস স্মৃতি।
ওখানে আমাদের সহকর্মী সুদেববাবুকে নিয়ে বেশ সময় কাটতো। ওঁর সাথে ঘটা বা ওঁর নিজের ঘটানো কিছু ঘটনার ঘটা অন্যভাবে ভীষণই মজার ছিল। অন্যভাবে শব্দবন্ধটি ব্যবহার করলাম অন্য কারণে।
আমি কোন কোন ঘটনার সাক্ষীও ছিলাম। আবার আগে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা বয়োজ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের আলোচনায় অলস সময়ে স্টাফ রুমে নানা প্রসঙ্গে উঠে আসতো। কোন কোনটি বেশ রসে বসে মাখা এবং উপভোগ্য।
জ্যোতিষীর কবলে পড়ে সুদেববাবু প্রচুর দামী দামী সব পাথর নিতেন এবং দু হাতের আঙ্গুল ভরে আংটি সহযোগে যতগুলি সম্ভব ঐ পথারগুলি পরতেন। বাহুতে চেনের আকারে আরও কমপক্ষে ছয় থেকে সাতটি। জ্যোতিষী বেশ ভালোই কামাচ্ছিল। স্টাফ রুমের আরও দু একজন সহকর্মীকেও ওই জ্যোতিষী ধীরে ধীরে বশে আনা শুরু করেছিলেন। অন্যদিকে আর একজন সহকর্মী রবিবাবু আবার এসবে চরম অবিশ্বাসী। তিনি একদিন সুদেববাবুকে ডেকে বললেন, আচ্ছা সুদেবদা আপনি যে এতো সব পান্না, চুনী, ক্যাটস আই ইত্যাদি পাথরে সারাটা শরীর ভরিয়ে রেখেছেন তা সত্ত্বেও এ হেন রোগ নেই যা আপনার শরীরে নেই। আর আমি আপনাকে একটি মাত্র পাথর দেবো যারপর আপনার আর কোনো পাথরের প্রয়োজন পড়বে না। সেদিন প্রথম পিরিয়ডের দিকে কথাটা বলেছিলেন রবিবাবু। এরপর প্রায় চতুর্থ পিরিয়ড শেষ হতে চললো সুদেববাবু একবার তিনতলা একবার নিচের তলা করে বেড়াচ্ছেন। একটাও ক্লাস নেননি। আর এক বর্ষিয়ান সহকর্মী বিনোদবাবুও ভীষণ রসিক মানুষ ছিলেন। উনি এটা লক্ষ্য করলেন। বললেন কি ব্যাপার সুদেব তুমি তখন থেকে দেখছি ওপর নীচ করে বেড়াচ্ছ, কোনো সমস্যা? সুদেব বাবু বললেন না সেরকম কিছু নয়, ঐ রবি আমাকে একটা জিনিস দেবে বলেছে তাই আর কি। রবিবাবু ক্লাস থেকে নামা মাত্র বিনোদবাবু রবিবাবুকে বললেন এই রবি তুমি সুদেবকে কি একখানা জিনিস দেবে বলেছো দিচ্ছ না কেন, বেচারা সেই প্রথম পিরিয়ড থেকে সিঁড়ি ভেঙে একবার তিন তলায় উঠছে আবার নিচে নামছে , উঠছে নামছে। তোমায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। রবিবাবু বললেন আরে বিনোদদা আমাকে তো ক্লাসগুলো নিতে হবে। তারপর সুদেবদার সাথে কথা বলবো। সময় লাগবে। চতুর্থ পিরিয়ডের পর রবিবাবু সুদেববাবুকে স্কুল বিল্ডিং-এর এক প্রান্তে ডেকে নিয়ে গেলেন। তারপর দু'তিন ফুটের ভেঙে পড়ে থাকা পুরানো একখানা পিলারের অংশ দেখিয়ে বললেন, এই খন্ডটি যদি আমি এখন আপনার মাথায় তুলে দিই যতক্ষণ ওটি আপনার মাথায় থাকবে ততক্ষণ আপনাকে কোন অসুখ অন্তত ছোঁবে না। শুধু মনে হবে কখন ওটা মাথার থেকে নামবে। এতোটা সময় অপেক্ষা করানোর পর এমন কথা শুনে সুদেববাবু একেবারে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন। বললেন আমার সাথে মশকরা করছো ? তখন রবিবাবু বললেন আচ্ছা দাদা, আপনি এমন কোন পাথর নেই যে পাথর ব্যবহার করেননি। অথচ এ পর্যন্ত আপনার কোন অসুখও সারেনি। আসলে সবটাই আপনার মনের অসুখ।
আর একবার সুদেববাবু কোন একটি পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে মার্ক স্লিপ প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন প্রধান শিক্ষক মহাশয় সুদেব বাবুকে ডাকলেন বললেন সুদেববাবু আপনার খাতার বান্ডিল খাতা রাখার শেলফ-এ পড়ে আছে। আপনি বান্ডিলটি নিয়েই যাননি। মার্ক স্লিপটা নিয়ে যান। সুদেব বাবু বড় লজ্জা পেয়ে গেছিলেন। এটার আমি সাক্ষী ছিলাম।
সুদেববাবু অর্থনীতির শিক্ষক ছিলেন। খাতাটি ছিল উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার খাতা। খাতাগুলি মূল্যায়নের মাঝপথে একটি খাতায় ওঁর নজরে পড়ে একটি ব্যাঙের হৃদপিন্ডের ছবি। তখন সুদেববাবু বুঝলেন এটি অর্থনীতির খাতা নয় জীববিদ্যার খাতা। আসলে ঐ বান্ডিলে একটি জীববিদ্যার খাতা ভুলবশত বাঁধা হয়ে গেছিল।
আমার প্রিয় সহকর্মীদের নাম পরিবর্তিত। ওঁরা কেউই আজ আমাদের মধ্যে নেই। এই স্মৃতি চারণ খানিকটা তাঁদেরই উদ্দেশ্যে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴