সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
21-January,2024 - Sunday ✍️ By- মধুমিতা দে রায় 338

ভুঁড়ির ভারে/মধুমিতা দে রায়

ভুঁড়ির ভারে
মধুমিতা দে রায়

"আবারও শার্ট-এর বোতাম ছিঁড়ে এনেছ?   না: আর তো পারা যায় না।"  আজ জগদীশকাকু অফিসে যাবার আগে শার্ট পরতে গিয়ে দেখে শার্ট-এর পেটের সামনের বোতামটা আবারও ছিঁড়ে গেছে, কাকীমা সেলাই করতে গিয়ে গজগজ করতে শুরু করে, "এই ভুঁড়ির জন্যই এতো পেটের জায়গায় বোতাম ছেঁড়ে। ওই ভুঁড়ি ধরে রাখার আর ক্ষমতা নেই।" কীইবা করে কাকু হাত-পা গুলো ভুঁড়ির তুলনায় লিকপিকে লাগে দেখতে। অথচ কেমন করে যে এই ভুঁড়ি ধীরে ধীরে দেহে আধিপত্য বিস্তার করল কাকু কিছুতেই বুঝে পায় না এমন কীইবা খায় কাকু, যার জন্য এই ভুঁড়ি শরীরে জেঁকে বসল। আর এই অপমান সহ্য হয় না। অফিসে, হাটে-বাজারে যেখানে যায় সেখানেই সকলের চোখ প্রথমেই তার ভুঁড়ির দিকে। অতি পরিচিত কেউ কেউ তো বাঁকা হাসি হেসে বলেও বসে, "কী হে আরও দুই ইঞ্চি বাড়িয়েছ মনে হচ্ছে, হা: হা: হা:", গা জ্বলে যায় এই হাসি শুনলে, তাও সৌজন্যের হাসি হাসতেই হয় এদের কথায়, বহু কষ্টে। বাসে তো সেদিন উল্টো পাশে বসে থাকা নিত্যযাত্রী দুইজন মহিলা ফিসফিস করে বলছিল, "খুব মদ খায় নিশ্চয়ই নইলে এতো বড় ভুঁড়ি হয়?"  
এমনকি বাচ্চাগুলো অবধি....
এইতো সেদিন পাড়ার আসেপাশের কয়েকটা ছোট ছেলেমেয়ে সরস্বতী পুজোর চাঁদা নিতে এসে ওনার বাড়ির গেটে ঢুকতে ঢুকতে বলছে শুনতে পেলেন, "দেখ কতো দেয়, ভুঁড়িজেঠু যা কিপ্টে", বলে বাচ্চাগুলো ফিচকে হাসি হাসছে। কাকু খেপে গিয়ে ঠিক করেই ফেলল দুষ্টু বাচ্চাগুলোকে এক পয়সাও দেবে না, যেমন করেই হোক। বাইরে বের হয়ে কাকু বাচ্চাগুলোকে জিজ্ঞেস করল, "এই আগে সরস্বতী বানান করতো, তারপর চাঁদা পাবি" অমনি একটা ছোট্ট মেয়ে একদম সঠিক ভাবে সরস্বতী বানান বলে কাকুকে বলল, "জেঠু আমরা জানি অনেকেই চাঁদা চাইতে এলে এই বানান জিজ্ঞেস তাই আমরা আগে থেকেই শিখে এসেছি, আর বোকা বানাতে পারবে না", দিতেই হল কাকুকে চাঁদা। 
কাকীমাকে সেদিন একটু ক্ষীরের পাটিসাপ্টা খেতে আবদার করেছিল কাকু, শুনে কাকীমার সে কী রাগ, "আরও মিষ্টি খেয়ে খেয়ে কী ভুঁড়িখানা আরও বাড়াবে ঠিক করেছ?"
 পরদিন বিকেলে সোফায় বসে কাকু টিভি দেখছে এমন সময় কাকীমা এসে পাটিসাপ্টার প্লেট কাকুর টেবিলের মতো উঁচু হয়ে থাকা ভুঁড়ির ওপর বসিয়ে চলে গেলো, ইস এর চেয়ে বড় অপমান আর হয়? না: এর একটা হিল্লে করতেই হবে। পাশের গলিতেই একটা জিম আছে সেখানেই কথা বলে এল কাকু। কাল সকাল থেকেই লেগে পড়তে হবে। সকালে হাঁটা আর বিকেলে অফিস ফেরতা জিমে গিয়ে কসরত্ করে তবে বাড়ি ফিরবে। শুরু হলো ডায়েটও। প্রথম কয়েকদিন খুব কষ্ট হলো। রোজ সকালে লেবু-গরমজল খেয়ে কাকু হাঁটতে যায়, ফিরে এসে এককাপ চা, তারপর ওটস-এর খিচুড়ি আর কম তেলে রাঁধা সব্জি  খেয়ে অফিস, দুপুরে দুরকমের ফল, বাড়ি ফিরে একটু ছোলা বা মটর সেদ্ধ, আর রাতে চিকেন স্টু আর সাথে দুপিস ব্রাউন ব্রেড, কোন সময় একটু কম তেলে রান্না করা ছোট মাছ আর ডিম তাও কুসুম বাদে। উ: জিমের দেওয়া কঠিন ডায়েট মেনে চলা কী যে সে কাজ, আর দু-তিনদিন পর থেকে ব্যায়াম করে সে কী গায়ে ব্যথা। রবিবারের দুপুরে বাড়ির সকলকে কচি পাঁঠার ঝোল দিয়ে ভাত খেতে দেখে যে কষ্ট হয়েছিল বলে বোঝানো যায় না, কিন্তু আয়নার সামনে নিজেকে দেখে লোভ সামলে নেয় কাকু। এই ভুঁড়িটা একটা সবসময়ের বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দিন কয়েক পর সকালে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে কাকু অনুভব করল মাথাটা যেন একটু টলছে, সত্যিই এই কম খেয়ে খেয়ে আর পারা যাচ্ছে না। হাঁটতে হাঁটতে কাকু বাচ্চাদের স্কুলের সামনে এল, বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের স্কুলের গেটে ছাড়তে এসেছে, বেশ ভীড়, কতোগুলো বাচ্চা দৌড়াদৌড়িও করছে। এমন সময় কোত্থেকে একটা গরু খেপে গিয়ে ছুটে এল, হয়তো বাচ্চাগুলোর লাল ইউনিফর্ম দেখে খেপে উঠেছিল। হঠাৎ করে কোথা থেকে কী হয়ে গেল, গরুটা একটা বাচ্চাকে গুঁতিয়ে আবার দৌড়ে পালিয়ে গেল। কাকু হাঁটতে হাঁটতে স্কুলের গেটের সামনে চলে এসেছিল, বাচ্চাটা গরুর গুঁতোয় ছিটকে এসে কাকুর ভুঁড়িতে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ল। এক্ষেত্রে কাকুর ভুঁড়ি যেন স্প্রিং এর ভূমিকা পালন করল, বাচ্চাটা যে গতিতে ছিটকে পড়েছিল সোজা স্কুলের লোহার গেটে ধাক্কা খেলে আর দেখতে হতো না, যা ধাক্কা কাকুর ভুঁড়িই সামলে দিল। কাকু বেচারির ওই ধাক্কায় কীভাবে যেন হাঁটুদুটো ভাঁজ হয়ে গেল, সামনের দিকে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়বার সময় উনি ওঁনার বিশাল ভুঁড়ির ওপর ভর করেই পড়লেন। কারন ভুঁড়িতো শরীরের চেয়ে অনেকটাই উঁচু, তাই স্বভাবতই মুখের আগে ভুঁড়িই মাটিতে পড়ল এবং সেই কারণে নাক-মুখে কোনরকম ক্ষত হল না। সকলে রে রে করে ছুটে এলো ধরাধরি করে তোলা হল কাকুকে। যদিও একটু চোট পেয়েছে কাকু, তবুও একটু লজ্জা পেয়েই বলল, "না না তেমন কিছু লাগেনি"। বাচ্চাটির বাবা কাকুকে বলল, "দাদা, ঈশ্বরের অশেষ দয়া আজ আপনি সামনে চলে এসেছিলেন, ছেলেটা আপনার ভুঁ....মানে পেটে ধাক্কা লেগে কিছুটা হলেও সামলে গেল। নইলে বিশাল বিপদ হতে পারত।" উপস্থিত সকলেই এতে সম্মতি জানাল। "দাঁড়ান আপনাকে একটা টোটোতে তুলে দি, আর এই অবস্থায় হেঁটে যাবেন না।"         
টোটোতে যেতে যেতে কাকু অনুভব করল, আজ কিছুটা হলেও ভুঁড়ি নিয়ে কিন্তু মনে কোন বিরক্তি বোধ হচ্ছে না, কেন জানি না বেশ ফুরফুরে লাগছে মনটা।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri