সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-August,2023 - Sunday ✍️ By- চিত্রা পাল 272

ভীষণ স্যার/চিত্রা পাল

ভীষণ স্যার  
চিত্রা পাল 


অনেকক্ষণ বারান্দায় বসে আছে অজ়েয়। অবশ্য সকালের হাঁটা সেরে আর কিছুটা শরীর চর্চা সেরে এখানে বসেই চা পান খবরের কাগজ পড়া এই সব সারেন। রিটায়ারমেন্টের পরে এটাই হয়েছেওনার রুটিন। তারপরে সূর্য কিছুদূর এগিয়ে গেলে উঠে পড়েন, এক পুবমুখো এই বাড়িটায় রোদ বড় তাড়াতাড়ি ঝামরে পড়ে, আর একটু বাজার কিছু কেনাকাটা যদি থাকে সেগুলো সেরে ফেলবেন বলে। ওনার আজকাল মনে হয় সকালের হাঁটা সেরে ফেরার সময় যদি দোকান টোকান গুলো খোলা থাকতো তো বেশ হতো,তাহলে একেবারে যা যা দরকার সেসব কেনাকাটা সেরে একেবারে বাড়িতে আসতেন, তাহলে আর বেরোতে হতো না,কিন্তু আজকাল সব দোকানগুলোই একযোগে দেরিতে খোলে। একদিন একজন দোকানিকে বলেও ছিলেন, তোমরা একটু সকাল সকাল দোকান খোলার ব্যবস্থা করলে  আমার মত মানুষদের সুবিধে হয়। তখন সে বলেছিলো,  আপনি তো বলছেন, ওই শুধু আপনিই আসবেন, আর সবাই আজকাল দেরীতে ঘুম থেকে ওঠে, বেচাকেনা শুরুই হয় দেরীতে। দোকান খুলে বসে থাকার চেয়ে দেখেছি বাড়ির কাজ সেরে পরে আসাই ভালো, সব দিক থেকে।  এমন অকাট্য যুক্তির কাছে আর কিছু বলার এখন নিজেই উনি সময়টাকে ওদের সঙ্গেই এডজাস্ট করে নিয়েছেন। 
 কিন্তু আজ আর কিছুতেই ওনার সেই সব কাজ সারতে মনের জোর পাচ্ছেন না। কি করে  পাবেন? খবরের কাগজের খবরটা যে ওনার মাথা মন সব শুদ্ধু ভিত একেবারে নাড়িয়ে দিয়েছে। একজন গ্রামের ছেলেমানুষ অল্প বয়সী ছেলে কোলকাতায় পড়তে এসে জীবনহানি হয়ে গেলো। একি সময় এলো,পড়তে এসে ছাত্রাবাসে যে কোন রকম কারণেই জীবন চলে যেতে পারে?  তাহলে লেখাপড়া চলবে কিভাবে, এরকম হলে ওনার নিজের পড়া তোএখানেই ইতি হতো।  যুব সমাজ যদিএমন শিক্ষা বিমুখ হয় তাহলে যে গোটা জাতিটাই ধ্বংস হয়ে যাবে। 
এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে স্মৃতিপটে একেবারে অজানিতে নিজের ছাত্রজীবন  স্কুল জীবন উঁকি দিয়ে গেলো এলোমেলোভাবে। উজানপথে চলতে গিয়ে কত কথা যে মনে পড়ে যায়।  সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে যায় ভীষণস্যারকে। উনি যদি সে সময় রাশ টেনে না ধরতেন তাহলে ইঞ্জিনীইয়ারিং পড়াএ সুযোগ পেতেন না,আর নিজের উপার্জনের আর্থিক স্বাচ্ছল্য না হলে হয়তো এভাবেফ্ল্যাট কিনে এমন  বারান্দায় বসে আরামে নিজের অবসর জীবন কাটাতে পারতেন না। 
সে কতদিন আগেকার কথা। সবে ক্লাস সেভেন থেকে এইটে ওঠা। ঠোটের ওপরে গোঁফের   রোমের উঁকি দেওয়া। অনেক কিছু অচেনাকে জানতে চাওয়ার শুরু হওয়া। ক্লাস নাইনের পল্টুদা তখন ওর গুরু। ওর কাছেই প্রথম ধোঁয়া খেতে শেখা। দু একদিন সবে হাতেখড়ি হয়েছে আরকি। দু এক টান মেরে পোড়ো বাড়ীটা থেকে বেরোতেই একেবারে ভীষণ স্যার সামনে। একেই বলে যেখানে বাঘের ভয়  সেখানেই সন্ধ্যে হয়। এই স্যারকে ওরা মানে ওদের স্কুলের সব বন্ধুরা ভীষণ ভয় পায়। একতো ওনার পড়া ঠিকমতো না হলে, মানে যে বিষয়ই পড়ান না কেন সেটা তাকে করিয়ে ছাড়বেন।কি করে? ওইখানেই তো মজা। ছুটির পরে তাকে উনি নিজে থেকে তাকে পড়া করিয়ে ছাড়বেন। সে ছাত্রের সঙ্গে নিজেও আছেন। আর সঙ্গে থাকে একখানা স্কেল। ওটা ভয় দেখানোর অস্ত্র। প্রথমেই বলে দ্যান, আজ টাস্‌ক না হলে এই স্কেল আর গোটা থাকবে না। নিজে ছাত্রের কাছে থেকে তাকে বুঝিয়ে দিয়ে পড়া করিয়ে নিতেন। আর ছেলেরা ভয়ে হোক ভক্তিতে হোক তাঁর কথা সে সময়ে শুনতো। আর শুনতো বলেই পরবর্তিতে উপকারও পেতো। কিছু দুষ্টুছেলে তাঁর পেছনে লাগতেও ছাড়তো না। তারাই ওনার নাম করণ করে ছিলো ভীষণ স্যার।যে ভীষণভাবে ঘাড়ে ধরে পড়া করিয়ে নেয়।আড়ালে যতই ওনার নামকরণ করুক আর আমরাও দেখে নেবো বলুক সামনে  ভয়ে ভয়েই চলতো। 
আজ সেই ভীষণ স্যর ওর সামনে, আর পড়বি তো পড় একেবারে বামাল সমেত। সেদিন ও বাড়িতে আর বাবার সামনে আসেনি। পরেরদিন ভেবেছিলো স্কুলে যাবে না, কিন্তু কি ভেবে ভয়ে ভয়ে দুরুদুরু বক্ষে স্কুলে গিয়েছিলো।আর সেইদিন অঙ্কক্লাসে পাটিগণিতের অঙ্ক দুটোই ভুল হয়েছিলো। ক্লাস শেষ হবার পরেস্যার ওকে ডেকে বলেছিলেন, আগামীকাল স্কুল টাইমে তোমার  বাবা যেন অবশ্যি অবশ্যি আমার সংগে দেখা করেন।  অন্য কোন জন হলে হয়তো বলতো না, কিন্তু ভীষণ স্যারের আদেশ যে মানতেই হবে।তাই বাবাকে বলতেই হয়েছে । 
   পরেরদিন কি জানি কেন বাবার সঙ্গে দেখা হলো সেই রাতে খেতে বসার সময়ে। বাবা  গম্ভীর হয়ে খাওয়া শেষ করে উঠে যাবার সময়ে বলে গেলেন,কাল বিকেল পাঁচটায় উনি আসবেন, বাড়িতে যেন থাকা হয়।উনি যে কে সে আর বলে দিতে হলো না। এ আদেশ না ফাঁসির নির্দ্দেশ তাও বোঝা গেলো না। আমার মুখ দেখে মা কিছু একটা সন্দেহ করে আমাকে পরে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলো, হ্যাঁরে ইস্কুলে কিছু অন্যায় করেছিস্‌ নাকি? না হলে স্যার বাড়িতে আসবে ক্যানো?আমি মার কাছে বলেছিলাম, কিচ্ছু করিনি মা, তাও ক্যানো আসবে জানিনা’।মা শুধু বলেছিলো ,ঠিক আছে। 
 পরেরদিন স্কুল ফেরত্‌ স্যার এলেন আমাদের বাড়িতে। স্কুলে দেখা হয়েছিলো স্যারের সঙ্গে, কিন্তু স্যার কোন কথাই বলেননি। আমি ভয়ে ভয়ে বাবার পেছনে দাঁড়ালাম। বাবা বললেন, আজ থেকে উনি তোমাকে এখানে অঙ্ক শেখাবেন। উনি যা বলবেন,সেভাবেই চলবে বুঝেচ?আর স্যারকে বললেন, আপনার হাতে দিলাম, দেখবেন,যে ভাবে চললে সুবিধে হয় সেভাবেই চলবেন,প্রয়োজন হলে আমি আছি।
  ভয়ে ভয়েই স্যারের কাছে পড়তে শুরু করলাম। অঙ্ক যে খারাপ পারতাম তা নয়,ওই ভয়ের জন্যেই ভুল হয়ে যেতো সেটা এখন বুঝতে পারি।এর মধ্যে এক কান্ড ঘটলো। দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে আমাদের দেখা হয়ে গেল স্যারের সঙ্গে। বাবা খুব খুশি।পরেরদিন আমরা একসঙ্গে টাইগারহিল যাবো সেটা বাবাই ঠিক করলো। শেষরাতের হিম ঠান্ডায় যখন আকাশের তারা গুলো ঝকঝকে,  আর সবাই গাদা গাদা গরম জামা কাপড়ে ঘুম ঘুম ভাবে গাবদা গোবদা হয়ে গাড়িতে যাচ্ছে টাইগারহিল,সূর্যোদয়ে কাঞ্চনজ্ঞঙ্ঘা দেখার জন্যে, তখন স্যার বললেন,অজেয়, শুনে রাখ, কাঞ্চনজ্ঞঘা পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ, যার অবস্থান নেপাল আর সিকিমের মাঝখানে।এ র পাঁচটি চুড়ো,যার  তিনটি এই সীমানায়, আর দুটো নেপালের তাপলেজাঙে’। অজেয় এটা জানতো না, শুনে মনে রাখার চেষ্টা করে।টাইগারহিলে  যত রাত গিয়ে আঁধার সাদা হয়ে এলো, সময় ঘনিয়ে এলো তত ওর বুক ঢিব ঢিব  করে, কি জানি ঠিকঠাক দেখা হবেতো।কে য্যানো বলে উঠলো, ওই তো। বলা মাত্র সামনের দিগন্তের রংবাহারের মাঝখানে ছোট্টোএকটা লালদানা। কোন এক জাদুকরের ছোঁয়ায় সেটা পলকে নাকের হিরের মতো ঝিকিয়ে উঠলো। সে লাল ক্রমশঃ চিলতে সিঁদুর হয়ে ছড়াতেই  ওপাশের বরফের মুকুট লাল। অজেয় কোন দিক তাকাবে   ভেবে পায় না। একবার এদিক একবার ওদিক করতে থাকে। 
  ফেরার সময় অজেয়র বাবা স্যারকে বলে, এবার আপনি এসেছেন বলে বোধহয় এতভালো সানরাইজ দেখলাম।স্যার হেসে বললেন,অজেয় যে এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছে তাতেই আমি খুশি। পরে ওরাই যে এসব সৌন্দর্যের ধারক বাহক কিনা। স্যার এর এমন  হাসি হাসি মুখে ভালো বেসে কথা বলায় ও অবাক। অপার্থিব সৌন্দর্যের কাছে এসে এত কড়া মাষ্টারমশাই এর এতো পরিবর্তন হয়ে যায়? হবে হয়তো বা।আসলে ও নিজে অংক   বিষয়টাকে ঠিক নিজের বলে  মনে করতো না বলে বোধহয় স্যারকেও কড়া মনে হয়েছিলো, এখন স্যারকে খুব ভালো কাছের মানুষ মনে হয়েছে ওর। এখন থেকে ওই ভীতিটা সূর্য ওঠার পরে কুয়াশা সরে যাওয়ার মতোই সরে গেলো হয়তো।পরবর্তিতে তারই প্রকাশ জয়েন্ট পরীক্ষায়। একবারেই ক্র্যাক  করতে  পেরেছিলো।
   কিন্তু আজকের খবরটা যেন ওনাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই কি যুবসমাজ? র‌্যাগিং এর নামে যথেচ্ছাচার? এরা ভবিষ্যতের কর্ণধার? যে শিক্ষা ব্যবস্থায় শ্রদ্ধা সম্মান স্নেহ কিছু নেই, সততা বিরল প্রজাতির প্রাণীর মতো,সেখানে কোথায় এগোবে এরা? ওকেও এই ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, স্বরবর্ণ উল্টোদিক থেকে বলতে গিয়ে ভুল হয়ে গিয়েছিলো,তার শাস্তি দশ পাতা হাতের লেখা কিংবা একটা খালি টুথপেষ্ট বের করে আর একজনের মুখে লাগানো। সে লাগাতে দেবে না, অথচ ওকে লাগাতে হবে এমনই নির্দ্দেশ, সেই নিয়েও হাতাহাতি। তবে তারপরে আবার বন্ধুত্ব, আবার এর ওর প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়া। সে কবেকার কথা, অথচ মনে হয় এইতো সেদিন। 
  আজকের খবরটা ওকে একেবারে বিমূঢ় করে দিয়েছে। মনে হয় একবার দেখে আসে ওরা কারা? কি করে এসব শিখতে পারলো ? আবার ভাবে, যেভাবে সমাজকে চালাচ্ছে যারা হয়তো তাদেরই তৈরি, না হলে এমন হয় কি করে? আবার মনে পড়লো ভীষণ স্যারকে যাঁর উদ্দেশ্য ছিলো ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়া। সেখানে কোন ফাঁকি ছিলো না। আবার শিক্ষার্থীরও ভয়ে হোক ভক্তিতে হোক সেই মান্যতা দিতে বাধ্য থাকতো,দিতোও । আজ অনেকদিন পরে মনে হলো এখন এই সময়ে ভীষণ স্যারের শাসন খুব দরকার, যিনি বলবেন, ‘তোরা আমার কথা শুনবি না মানে ? না শুনলে এই স্কেল তোদের পিঠের ওপর ভাঙবো’।  আবার একথাও মনে হচ্ছে, সে সময়ে বলেছিলেন, এখন কি পারবেন? এসব প্রশ্নেই এখন নিজে জেরবার।                                   

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri