ভিটামিন সি/দেবদত্তা বিশ্বাস
ভিটামিন সি
দেবদত্তা বিশ্বাস
মাথার উপর বনবন করে ঘুরতে থাকা ফ্যানটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন সুজিত সমাদ্দার। ফুল স্পিডে চলা ফ্যানটাও আজকাল বিট্রে করছে ওনার সাথে। ফ্যান থেকে ঠাণ্ডা হাওয়াটা সোজাসুজি নিচে নেমে মশারিতে ধাক্কা খেয়ে অভিমুখ পরিবর্তনে ঘুরঘুর ঘূর্ণি হয়ে তড়াক করে যেন আছড়ে পড়ছে আশেপাশে। উফ্! বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে শরীরটাতে। এমনটা আগে কখনো হয়নি তো। কিন্তু অস্বস্তিটা ঠিক কোথায় ঠাহর করতে সময় লাগল আরো কিছুক্ষণ। দাঁতের মাঝে একটা চিনচিনে ব্যথা শিরার মধ্যে দিয়ে পাঁচ পা এগিয়ে তারপর উপশিরার নতুন রাস্তা ধরে দশ পা লাফিয়ে সোজাসুজি আঘাত হানছে মাথার পিছন দিকটায়। এই অস্বস্তিকর ব্যথায় কাহিল হয়ে ঘাম দিচ্ছে সারা শরীর জুড়ে। এমনটা হবে নাই বা কেন? হুজ্জুতি তো কম হল না সারাটা দিন। বউ মানুষ কোথায় লক্ষ্মীমন্ত হয়ে সংসারে মন দেবে তা নয় কে দুটো কটূ কথা শুনিয়েছে সেই নিয়ে স্ত্রী বেলা দেবী গাল ফুলিয়ে বসে আছেন সারাদিন। সংসারে থাকতে গেলে কথায় কথায় মেয়ে মানুষের অত আত্মসম্মানবোধ দেখালে চলে না। সুজিতবাবুও দিয়েছেন আচ্ছা করে তাল ঠুকে। এসব কথা পুনরায় মনে করতেই মাথার শিরাগুলো রাগে ফুলে ওঠে সুজিতবাবুর। নিজের অজান্তেই মেজাজ হারিয়ে যেই না দাঁতে দাঁত চেপে কড়মড়িয়ে উঠেছেন অমনি ক্যানাইন আর প্রিমোলারের মাঝখান চিড়ে বেরিয়ে এলো থোকা থোকা রক্ত। ব্যস! যখন তখন নার্ভ ফেইলিওরের রোগীর এমন রক্তপাতে অবধারিতভাবে হাত পায়ে ধরল কাঁপুনি। শুনছ? কোথায় গো? এ কোন জন্মের ঘুম ধরল তোমায়? শুনতে পাচ্ছ না নাকি? বাকি রাতটা হাঁকডাক ছোটাছুটিতেই কাটিয়ে দিলেন দুই দম্পতি।
-হুমম! সিমটমস অফ স্কার্ভি। জ্বর-টর আসে নাকি আপনার? কোন দুর্বলতা? হাতে পায়ে চুলকানি ফুসকুড়ি?
- না তেমন তো কিছু দেখিনি ডাক্তারবাবু। শুধুই ননস্টপ রক্ত। আর ওই হাতে-পায়ে কাঁপুনি।
- সে তো আজকের নয় ডাক্তারবাবু, খিঁচুনি কাঁপুনি ওনার অনেকদিনের ব্যারাম। পাশ থেকে টিপ্পনী কাটেন বেলা দেবী।
- ওও! ওষুধগুলো লিখে দিলাম সময়মতো নেবেন। ভিটামিন সি-এর কমতি বুঝলেন। ও আর কিছু নয়। ডাক্তারবাবুর কৈফিয়ৎ।
বিকালের দিকে রক্তপাত একটু কমলে যেই না টিভির রিমোট হাতে সুজিতবাবু বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিয়েছেন অমনি দাঁত খিঁচিয়ে পাশের ঘরে রুটি বেলতে বেলতে বেলা দেবী বলে উঠলেন বড় পুরুষ মানুষ হয়েছেন আমার। কোথায় সংসারের জন্য দুপয়সা ঘরে নিয়ে আসবেন তা নয় কেমন পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন দেখ। ও বাড়ির টেপির বাবা নাই নাই করে পঞ্চাশ ভরি সোনা গড়িয়ে দিয়েছেন টেপির মাকে। আর আমার কপালে ছাই। যেই না কথা অমনি সেই ক্যানাইন আর প্রিমোলারের ঠিক মাঝখান দিয়েই অঝোর রক্তপাতে ভেসে গেল বেলা দেবীর মুখখানা। কাঁপুনিটাও শুরু হল ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায়।
ব্যাপারখানা যে খুব স্বাভাবিক নয় বুঝতে সময় লাগল আরও কদিন। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ বদলেও কাজ হল না বিশেষ কিছু। এত হুজ্জতির মধ্যে আবার কাজের মেয়েটা কাজ বাদ দিয়েছে কদিন হল। একে শরীর খারাপ তারমধ্যে এসব টালবাহানা বড্ড বিরক্তিকর। বেলা দেবী অসুস্থ শরীরে হাতের কাজ সারতে সারতে কাজের মেয়েটিকে মনে মনে শাপ শাপান্ত করছিলেন এমন সময় গেটে কড়া নাড়ার শব্দে তাকিয়ে দেখেন চাঁপা দাঁড়িয়ে। আনন্দে দুই পাটি দাঁত বেরিয়ে এলেও খানিক বাদে ব্যাপারখানা শুনে চোখ কপালে ওঠে সমাদ্দার দম্পতির। ঠিক একই রকম উপসর্গ নিয়ে কদিন হল চাঁপাও এক্কেবারে কাহিল। ওই দুটো দাঁতের মাঝখান দিয়েই রক্তটা। সাথে হাতে পায়ে খিঁচুনি আর কাঁপুনি। শুধু তাই নয় ও পাড়ার মল্লিকবাবুর বাড়িতেও নাকি মল্লিক জায়া একই রকম সমস্যায় শয্যাশায়ী।
- খিচুনি কাঁপুনি আগে কোনদিন হয়েছে কি? দাঁতে দাঁতও লাগে নাকি?
- না ডাক্তারবাবু, হয়নি তো। কাঁচুমাচু মুখে উত্তর দেয় চাঁপা।
- বুঝলেন সমাদ্দারবাবু, দেখে শুনে যা মনে হচ্ছে আপনার রোগীর এ মৃগী ছাড়া অন্য কিছু নয়। খিঁচুনি দিয়ে দাঁতে দাঁত লেগেই রক্তপাত। ওষুধ দিচ্ছি। নেক্সট টাইম হলে খেয়াল রাখবেন ওই দাঁতে দাঁত যাতে চেপে না বসে।
-এ আবার তুই কি ব্যারাম ধরালি রে চাঁপা? ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করেন সমাদ্দার ঘরনী। একে নিজের জ্বালায় মরছি তার ওপর তোর আবার নতুন রোগ।
সমাদ্দারবাবু প্রেসক্রিপশনটা নেড়েচেড়ে বলেন তা তোর জলে বা আগুনে ভয় টয় লাগে নাকি? খিঁচুনি ধরল কেন? কি করেছিলি বল তো?
- কি আর করব দাদা? ছিলাম মল্লিক বাড়িতে। বৌদির সাথে গল্প করছিলাম। মল্লিক বৌদি মাঝে মাঝে আমায় ডেকে নিয়ে পাড়ার খোঁজখবর নেন। এই তো ঘোষ বাড়ির ছেলে বৌমা হপ্তাখানেক হল ভিন্ন হয়েছে বাপ মায়ের থেকে। তা সে কথা কি আর বলতে পারলুম। তার আগেই তো দুজনের একসাথেই.... ব্যথায় কাতরে ওঠে চাঁপা ।
দিন যায় হপ্তা যায়। রোগ নিয়ে ভোগান্তি বাড়ে সকলের। ডাক্তারের ওষুধ খুব একটা কাজে লাগেনা কারোরই। এরইমধ্যে চাঁপা খোঁজ নিয়ে আসে শহরে আরও কিছু এমন একই রোগের রোগী পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন। ডাক্তারের চেম্বারে ভিড় বাড়ছে প্রত্যহ। কেউ ছুটছে ডেন্টিস্টের কাছে, কেউ দেখাচ্ছে ফিজিশিয়ান, কেউ তো সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে সার্জেনের চেম্বারে। পেপার জুড়ে বড় বড় করে অজানা রোগের খবর। আক্রান্তের সংখ্যা একশ ছুঁইছুঁই। পরদিনই তা আবার বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে ।
- যাচ্চলে! এ আবার কি নতুন উৎপাত শুরু হলো? যেখানেই যাও শুধু রোগ নিয়ে কথা। পেপারটা খাটের উপর ছুঁড়ে ফেলেন সমাদ্দারবাবু।
- বাসন মাজতে মাজতে চাঁপা বলে আমাকে তো ও পাড়া থেকে কাজে যেতে বারণ করেছে দাদা। আজকাল আমার ধারকাছও কেউ মারাতে চাইছে না।
বেলা দেবী বলেন, পিংকির মা সেদিন আমায় ফোন করে খোঁজ খবর নিয়ে বলল সকলের নাকি ভয় রোগটা ছোঁয়াচে নয় তো?
- আবার কি করোনা ফিরে এলো বৌদি? কাঁচুমাচু মুখ করে চাঁপা। বাকিরা নিরুত্তর।
ধীরে ধীরে শহরের প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। জরুরি বৈঠকে বসে হর্তাকর্তারা। এ আবার নতুন কোন ভাইরাসের উপদ্রব হল নাকি শহরে? ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞদের ডাক পড়ে। চারিদিকে অঘোষিত লকডাউন কার্যকর হয় যেন। কেউ কারো বাড়ি যায় না, কেউ কাউকে ছুঁয়ে দেখে না। মুনাফা লোটে কিছু চালাক ব্যবসায়ী। কে আবার রটিয়ে দেয় অ্যালোভেরা যুক্ত মাউথ ওয়াস ব্যবহারে উপশম হবে রোগের। প্রয়োজন থাকুক আর না থাকুক বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় মাউথ ওয়াস। কালোবাজারি জেঁকে বসে শহরটাতে। রতন দোকানি দ্বিগুণ দামে মাউথ ওয়াস বেঁচে লাভের টাকা গুনে খিক খিক করে হাসে। যেই না তার দুপাটি দাঁত খিলখিলিয়ে উঠেছে অমনি ওই একই জায়গায় দাঁতের গোড়া বেয়ে গলগলিয়ে বেরিয়ে এলো রক্ত। 'ও মাগো !ও বাবাগো!' চিৎকারে শুরু হল কাঁপুনি। বাকিটা গতানুগতিক।
হঠাৎ একদিন সাতসকালে চাঁপা দু পায়ে নাচতে নাচতে ঢোকে সমাদ্দার বাড়ি। বেলা দেবী বলেন, এমন দুর্দিনে মেয়ের আবার রং লেগেছে দেখ।
- রং নয় বৌদি, রং নয়, সাক্ষাৎ ধন্বন্তরির খোঁজ পাওয়া গেছে। এই দেখ আমার দাঁতের অসুখ একেবারে হাওয়া। অ্যা.........
সমাদ্দার ঘরনী দাঁত পর্যবেক্ষণ করে বলে, রাতারাতি এমন সুস্থ হলি কি করে? একি ম্যাজিক নাকি?
-ম্যাজিক নয় বৌদি । আমার বাড়ির পাশে একজন ডাক্তার এসেছেন কদিন হল। নাম ধনা ডাক্তার। দুটা গুলি মুখে পুরতেই সকলেই একদম ফিট। গিয়ে দেখে আস কেমন লম্বা লাইন লেগেছে চেম্বারের সামনে। তুমি আর দাদাও চল একদিন ডাক্তারবাবুর কাছে।
ধনা ডাক্তারের খ্যাতি গিয়ে কানে উঠল স্থানীয় নেতার।
- বলিস কি? এত ভিড় হচ্ছে ডাক্তারের চেম্বারে? বিদেশ থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসেছে নাকি?
- সে জানি না দাদা। শুধু লাইনের বহর নিজের চোখে দেখে এলাম। উত্তর দেয় ক্যাডার গোছের ছোকরা।
- তাহলে তো রোজগার হচ্ছে ভালই। কি বলিস? নেতা একটু থেমে বলেন।
- দেখ তো তবে কোনো সেটিং করা যায় নাকি। আমি না হয় কিছু পেশেন্ট জোগাড় করে দেব। পেশেন্ট প্রতি কত কমিশন দিতে রাজি হন একটু খোঁজ খবর কর। নেতার মুখের বাঁকা হাসি যেই না একটু চওড়া হয়েছে অমনি পানের পিকের সাথে বেরিয়ে এল থোকা থোকা রক্ত।
চোখ মুখ বেজার করে নেতা ছুটলেন ডেন্টিস্টের কাছে।
-কি বুঝছেন ডাক্তারবাবু?
-ব্যাপার তো তেমন গুরুতর নয়। কিন্তু অসুখটা সারছে না কেন বুঝতে পারছি না।
- শুনছি আজকাল ধনা ডাক্তার না কে এসেছেন তার ওষুধ অব্যর্থ কাজ করছে?
গলা সপ্তমে চড়িয়ে ডাক্তার বলেন, সব বুজরুকি বুঝলেন। যে ওষুধ দিচ্ছেন তা ভিটামিন সি ছাড়া আর কিছুই নয়। সে ওষুধ তো আমিও দিতে পারি। তবু আমার নিজেরই অসুখটা সারছে না কদিন হলো। আমার তো মনে হয় ব্যাটা মগজ ধোলাই করে নাম কিনছে বড়।
- বলেন কি? তাহলে তো ব্যাপার গুরুতর। এমন একটা লোককে সমাজে প্রশ্রয় দেওয়া একেবারেই অনুচিত। মাথা নাড়ে নেতা।
- একে একেবারে জেলে পুরে ফেলা দরকার। চেঁচিয়ে ওঠে ডাক্তার।
জরুরী বৈঠক তলব হয় প্রশাসনের তরফ থেকে। ঠিক হয় ধনা ডাক্তারকে ধরতে গেলে প্রথমে পুলিশ মোতায়েন করতে হবে শহরটাতে। ব্যাটা যদি পালিয়ে যায়। আবার হতেও তো পারে বড়োসড়ো কোন গ্যাং এর সাথে যুক্ত। এবারে সকলে মিলে চেপে ধরতে হবে ডাক্তার ব্যাটাকে। যেমন প্ল্যান তেমন কাজ। দিনক্ষণ, সময় মিলিয়ে ডাক্তার, প্রশাসন, পুলিশ, নেতা সকলে মিলে হাজির হন ধনা ডাক্তারের চেম্বারে। পিছে পিছে তখন অজস্র জনতার ভিড়। সমাদ্দারবাবুও উঁকি দিচ্ছেন ভিড়ের মধ্যেখান থেকে। ডাক্তারকে কোন সুযোগ না দিয়ে হুড়মুড়িয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে পুলিশ বাহিনী। কেউ খোঁজে ঘরের ভেতর, কেউ খুঁজতে যায় ছাদে, কেউবা বাথরুমের দরজা ভাঙে। কিন্তু যে মানুষটা কাল রাত অব্দি রোগী দেখেছে স্বাভাবিকভাবে সে আজ এমন উধাও হল কি করে? তার উপর এত নজরদারি এড়িয়ে পালিয়ে সে যাবে কি করে?
হঠাৎ এক ছোকরার চোখ পড়ে পিছনের দিকের উঠানের পাশে একটা ছোট্ট ঘরে। ঘরটার দরজা ভেঙে ঢুকতে সকলেই তাজ্জব। এ তো এক আজব দুনিয়া। নানা রংয়ের রঙিন ঘষা কাঁচের জানালা ঘরটার রং পাল্টে দিচ্ছে মুহুর্মুহু। নাগাড়ে বেজে চলছে কিছু উইন্ড চাইম। ঘরময় আজব সব যন্ত্রপাতি। ডাক্তারবাবু চেঁচিয়ে ওঠেন বলেছিলাম না এ ব্যাটা মন্ত্রতন্ত্র জানা বুজরুকি। বশীকরণ টরণ জানে বোধহয়। ঘরটার মাঝখানের টেবিলে একটা খোলা ডায়েরি আর পেন। নেতা গিয়ে তুলে ধরে ডায়েরিটা। তাতে মুক্তাক্ষরে লেখা প্রশ্ন থাকলে লিখতে হবে। ভীতু নেতার হাত পা শিরশিরিয়ে ওঠে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে এ তো দেখি প্ল্যানচেটের মতো ব্যাপার স্যাপার। সবাই একটু ঢোক গেলে। কে লিখবে ভাবতে ভাবতে ডাক পরে একজন প্যারানরমালিস্টের। এরপর পেনটা চলতে থাকে ওনার হাত ধরে।
প্রশাসনিক কর্তা প্রশ্ন করেন -কে আপনি?
- আমি তুমি আর তুমিই আমি।
- মানে? কি হেঁয়ালি করছেন? নাম কি বলুন আপনার?
- ওই যে ধনা ডাক্তার।
- নিজেকে ডাক্তার বলা হচ্ছে। ডাক্তারি সার্টিফিকেট আছে?
- না।
-তাহলে ডাক্তারি করছেন কিভাবে?
- মানুষ বুঝে।
ডাক্তারবাবু চেঁচিয়ে ওঠেন, বলেছিলাম না সব বুজরুকি। উনি হিপনোটাইজ করতে জানেন ভালো। ভিড়ের মাঝে গুন গুন শব্দ ওঠে।
কর্তা ব্যক্তি সকলকে থামিয়ে বলেন
- তা আপনি পালিয়ে গেলেন কেন?
-পালিয়ে তো যাইনি। এখানেই তো রয়েছি। আপনারা চিনতে পারছেন না।
- আহ! আবার হেঁয়ালি হচ্ছে?আপনি ট্রিটমেন্টটা করতেন কিভাবে বলুন?
- সে তো আপনারাই নিজেদের দাঁতগুলো কে ধাঁরালো বানিয়েছেন শান দিয়ে। আমি তো শুধু দাঁতের ধার কমিয়ে দেই। সাথে দুটো ভিটামিন সি।
-আমরা দাঁতে শান দিয়েছি? কিভাবে?
- আপনাদের পাশবিক প্রবৃত্তি যখন মানবিক প্রবৃত্তির ঊর্ধ্বে চলে যাচ্ছে তখনই পশুর মত ক্যানাইন গুলো হয়ে উঠছে ছুঁচালো আর প্রিমোলার মানবিক গুণগুলোকে করে দিচ্ছে চূর্ণ। ফলস্বরূপ মুখ কেটে রক্তপাত।
ডাক্তার বলে, যে ভিটামিন সি আপনি দিচ্ছেন সেই ভিটামিন সি আমরাও দিচ্ছি রোগীকে। কোন যাদুবলে আপনার ওষুধ কাজ করছে বলুন তো?
-আমার ওষুধ দু চারটি জিনিসের কম্বিনেশন ভিটামিন সি, ভালোবাসা, সহমর্মিতা।
এত বড় জমায়েতটা হঠাৎ কেমন চুপ করে যায় । যাকে বলে পিন ড্রপ সাইলেন্স।
জোরে শ্বাস নেন কর্তা ব্যক্তি। আপনার আসল পরিচয়টা একটু খুলে বলুন তো?
অনেকক্ষণ পেনটা একটা ও আঁচড় কাটে না।
তারপর ধীরে ধীরে লিখে চলে শেষ কটা লাইন।
- ইঁদুর দৌড়ে ছুটতে থাকা মানুষগুলো যখন গতি বাড়িয়ে ক্ষিপ্র হয়ে ওঠে তখন সে ভুলে যায় তার মাঝেও রয়েছে মানবিক মন। বিবেচনা করার শক্তি। আসল মানুষটা লুকিয়ে থাকে তাদের অন্তরাত্মার কোথাও একটা। আমি সেই বিবেক। অবচেতনে প্রচ্ছন্ন প্রতিটি বিবেক। আমি 'বিবেক গুপ্ত রয়।'
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴