ভাঙা ঘুমের উৎসব/নীহার জয়ধর
ভাঙা ঘুমের উৎসব
নীহার জয়ধর
হোগলা পাতার বিছানায় সন্ধ্যা রাত্তির গাঢ় হয়ে ওঠে, ঘুম। হেরিকেনের যৌবনের ধারে কোনদিনই মুগ্ধ নয় পাখি সব বালকের রব। মাঘের ভোরের পিঠে দিদি উঠে পড়ে, মায়ের দশ হাতের ভয়। আঙুল ফুটে উঠলে কান্নায় ভেজে না-বোঝা ব্রতের সুর। বরিশালের বালক দেব ভাষা শেখেনি। ঠাকুর্দা স্নান করে তুলসী তলার মাটির শীতলতা মেখে নিতেন কন্ঠে, বাহুমূলে, নাভিতে। তাঁর গীতার কর্মযোগ। কৃষ্ণশ্লোকের ব্যাখ্যার বাংলায়।
“ভাদ্রের কুড়ি / জল হয় বুড়ি।” বুড়ি জলে পেকে ওঠে জিওল। হিজলের ফল টুপ করে ভেসে ওঠে, কূর্ম অবতার । নীলকণ্ঠ ফুল ফুটতে থাকে, নীল রঙে সুন্দি শাপলা যেন আধুনিকা ঠোঁটে ওষ্ঠরঞ্জনী। উত্তুরে বাতাস বেহায়া হাতে-পায়ে, দুর্গা চণ্ডী কালী শীতলা। জারুল, বকুল, এক এক ফুলের রঙে গন্ধে এক একজন। চোখ বুজলে ওরা ফুল হয়ে গায়ে ঝরে, শীতকাঁটা রোম তীব্র হয়ে আসে। তখন জামা গায়ে দিতে হয়। ভালো লাগা শিরশির করে কেননা, দুর্গাই ভগবতী। মায়ের মতো কড়া। কার্তিক তেমন শয়তান, একটা সুপারি গাছ থেকে আর একটায়, সেখান থেকে আর একটায়; সেও কি ঠাকুর দেখে বেড়ানো দুরন্ত দাদা ? যার মতো হতে আর কতদিন ? লক্ষ্মীপূজার নাড়ু খেয়েই যার পেটমোটা; সে ইঁদুরে কীভাবে চড়ে ! কীভাবে তাঁর হাতিশূঁড়। লজ্জা লাগে, দৃষ্টি চুরি করি লক্ষ্মী আর সরস্বতীতে। ববিতা দিদির মতো সুন্দর, ভালো লাগতে, লাগতে, দিন কেটে যায়। ঠাকুরমার মার দেওয়া শাড়ির শব্দে রাতে স্বপ্ন আসে। স্বপ্নে আসে তারা, সেই যাদের বুঝতে পারি না, মাঘ মণ্ডলের ব্রত করে যারা, তাদের ভয় টেনে রাখে, ভয়ে ডুবে যাওয়ার টান।
গত বর্ষায় ফোঁড় তোলা কাঁথা টেনে নিতে নিতে ঘুম পা তুলে দেয় পিঠে। ঠিক ভোরের আগে, তারও একটু আগে, যখন অন্ধকার দেবীর গায়ের মতো, সূর্য কমলা হয়নি তখনও। বাসি মুখে ওঠা দিদির মতো সাদাটে সকাল – নমস্কার, আকাশবাণী কলকাতা, এখন মহিষাসুরমর্দিনী…
এখন সব জানি, দুর্গা কালী শীতলা সকলে ঘুরে গেছে একে একে। এক কালীখোলা ভয়, এক একলালজিহ্বা আতঙ্ক ঘন হয়ে থাকে আমাদের কোলায়। উলম্ব সূর্যের হাহাকারে ঘুমসহ উড়ে গেছে সব। ভোরের অনেক আগের ভোরে একা হয়ে উঠি, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র থাকেন না সে আঁধারে। মাংসের বাসি গন্ধ দরোজা-জানালা বন্ধ ঘরে গঙ্গার জলের মতো ঘোলাটে। সমতনের মুখের দিকে চাই, ঘুম ভাঙানো আলোর গান শোনা উচিত ওর । মায়ের মতো দুর্গা, বন্ধু বা ভাইয়ের মতো, বান্ধবী বা বোনের মতো, এবং জিম করা পেটানো চেহারার মহিষাসুরকে যেন চিনে নিতে পারে। যে কোনো ঋতুর বিপর্যয়ে চিনে নিতে পারে, আলোর বেণুর শিকড়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴