সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

ভাঙছে, ক্রমাগত ভাঙছে/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

ভাঙছে, ক্রমাগত ভাঙছে
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রিয় নির্ঝর, 
আজ  অনেক  দিন বাদে আবারও  কলম তুলে নিলাম। তোমাকে  চিঠি  লিখে অনেকটাই হালকা হওয়া যায়।  আমাদের  ভারতীয় বিদ্যাভবনের  সান্ধ্য বিভাগের সাংবাদিকতায়  প্রথম  হতেন যিনি  তাঁর  কথা  খুব  মনে পড়ছে। হ্যাঁ,  ঠিকই  ধরেছ, স্বপ্না  লাহিড়ী,  যিনি "মংপু ও রবীন্দ্র সাহিত্য"  নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তাঁর কথা আগেও তোমাকে লিখেছি। গত সপ্তাহে  একটা খারাপ খবর পেলাম। কৈলাস কলোনি থেকে "ফেমিনা" ম্যাগাজিন এর ফ্রীলান্সার সুমিতা সেনগুপ্ত জানালেন, মিসেস  লাহিড়ী আর নেই। দীর্ঘ দিন  রোগভোগের  পর তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। 

স্বপ্নাদি কয়েকটি বিষয় নিয়ে পরপর  এম এ, পাশ করে, আইন নিয়ে পড়াশোনা  করে, ৬৫ বছর বয়সে  সাংবাদিকতা নিয়ে নতুন  দিল্লির  কস্তুরবা গান্ধী মার্গের,  বিদ্যাভবনে ভর্তি হয়েছিলেন। আমাদের থেকে বছর  দশেকের  বড়ো ছিলেন তিনি। তাঁর জীবন  দর্শন থেকে  দুই  বছরের  পাঠক্রম চলাকালীন  যা  শিখেছিলাম, মূল্যবোধের  যা পাঠ আত্মস্থ করেছিলাম  তা সারাজীবনের সঞ্চয়  হয়ে  থাকবে।

স্বপ্না দি'র  মুখে  একান্নবর্তী  লাহিড়ী  পরিবারের  কত কাহিনি  শুনেছি। একবার ক্লাসে  মনমরা  হয়ে বসেছিলেন। তাঁর  উজ্জ্বল  সুন্দর শাড়িতে  মাথায়  কাঁচা  পাকা চুল, কপালে একটা সিঁদুরের বড়ো   টিপ।  একদিন সন্ধ্যায় স্বপ্নাদি খুবই  মনমরা  হয়ে বসেছিলেন। সেই  দৃশ্য  দেখে  কারণ জানতে  চাইলে বলেছিলেন,  "সকালে তাড়া ছিল, শ্বশুর  মশাই  কাগজ পড়ছিলেন,  তার  চায়ের প্লেটটা  তাঁর  হাতে না দিয়ে তার সামনে  রাখা টি টেবিলে রেখেছিলাম।  তাঁর  গম্ভীর দৃষ্টিতে  মনে  হল  তিনি অসম্মানিত হয়েছেন। চায়ের  কাপটা বাবার হাতেই দেওয়া উচিত  ছিল।  তাঁর এক পলকের  চাহনিতে  মনে হল, তিনি  অনেক  কিছু বলতে চেয়েছিলেন। কিছু  না বলার মধ্যে দিয়েও  কত  কিছু  বলা যায়  তাঁর  কাছে জেনেছিলাম।" আজকাল শ্বশুর  পুত্রবধূর এমন সম্পর্ক আমরা ভাবতেই  পারি না।

..... এ আর এমন বড়ো কী বিষয় ? 

....খুব  বড়ো বিষয়, বুঝলে? 

বোধ  করি  মিসেস  লাহিড়ীর মৃত্যুতে  একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। 

আমাদের সমাজে  শাঁখা - সিঁদুরের  চল তো সেই কবেই উঠেই   গেছে। নারী ক্ষমতায়নের যুগে কবেই  উবে গেছে এয়ো  স্ত্রীদের সম্ভ্রম। খসে  গিয়েছে  স্ত্রীলোকের  মাথার  কাপড়। অশালীন পোশাক আসাক আর অশ্লীলতায় মুখ লুকিয়েছে সভ্যতা। স্যাটেলাইট ইনভেনশনের যুগে কেবল এর মাধ্যমে ড্রয়িং রুমে ঢুকে পড়েছে পশ্চিমি সভ্যতা। 

সেদিন   প্রাত:ভ্রমণে আমার সামনে  দিয়ে হেঁটে  কলেজ যাচ্ছিল পাড়ার  মেসের শর্মিলা। আমার  সামনেই রাস্তার মোড়ের ডাস্টবিনে ছুঁড়ে  মারল খালি সিগারেটের  প্যাকেট। যে আমি একদিন আঁতকে উঠেছিলাম কোলকাতার  ব্যাঙ্কশাল  কোর্টের  রাস্তায়, জিনস  আর  টপ  পরা মেয়েদের  হাতে  জলন্ত সিগারেট দেখে,  সেই আমি আবারও  হতাশ হলাম। তাহলে আমার  পাড়ার  মেসের মেয়েরাও  স্মোক করে? 

 সেদিন  পাড়ায়  এক কাকিমার  মৃত্যুতে  তাঁর বাড়িতে গিয়ে একটা কথা কানে এল।  "দোকান থেকে শাঁখা, সিঁদুর, আলতা  নিয়ে আসতে  হবে। মায়ের পায়ের আলতা  লাগিয়ে ছবি  তুলতে হবে যে।"

একান্নবর্তী  পরিবারের ভাঙন  ভেঙেছে  মূল্যবোধকে। ভাঙন ধরেছে পাড়ার  সংস্কৃতিতে। এখন সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফিরলে  পাড়ার  দাদা - কাকারা জিজ্ঞেস  করেন না, "দেরি হল কেন?" আমাদের সময় হোটেলে  ভাত খাওয়া  এবং সিনেমা হলে  হিন্দি সিনেমা দেখা অপরাধ হিসেবে দেখা হত। সেসব দিন এখন আর কোথায়? হয়তো  আগামী দিনগুলোতে  কোন  ছাত্র মুখে সিগারেট নিয়ে বলবে, "ফায়ার প্লিজ"। মূল্যবোধের এমন  অবক্ষয় দেখব কখনো  ভাবিনি। 

আশা করি  তোমরা কুশলেই আছ। বড়োদের  প্রণাম ও ছোটদের  স্নেহাশিস দিও। চিঠি  দিও। 

 ইতি  ব্যানার্জিদা।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri