ভাগ্যের চাকা/চন্দন খাঁ
ভাগ্যের চাকা
চন্দন খাঁ
আজ কলেজের প্রথম দিন। শ্যামল বাইক নিয়ে এল অমলের বাড়ি -- কী রে এখনো রেডি হোসনি?
-- এই হয়ে গেছে। চুলটা আঁচড়েই ---
চালসার একটা দোকানে দাঁড়িয়ে দুজনেই সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বলল -- আজ থেকে আমরা মুক্ত, পাখির মত স্বাধীন। স্কুলে শালা হেডস্যার কথায় কথায় টিসি দেবার ভয় দেখাতো! এখন কলেজে এসবের বলাই নেই। চুটিয়ে পার্টি করব আর দেদার সিগারেট খাব। আর সেই সঙ্গে ---
-- কী করবি?
-- প্রেম করব।
-- ক্লাস করবি না?
-- আমরা কি লেখাপড়া করে ইসরোর বিজ্ঞানী হয়ে চাঁদে বিক্রম পাঠাব? আমার দাদা আমার থেকে হাজার গুণের মেধাবী ছাত্র ছিল। সংস্কৃতে পিএইচডি করে এখন একটা হোটেলে পাঁচ হাজার টাকায় হিসাব দেখাশোনা করে।
-- তোর দাদাকে দেখে মাইরি খারাপ লাগে। পাড়ার সবাই এক সময় বলতো কমলদার মত বিদ্বান, বুদ্ধিমান, পরোপকারী ছেলে হয় না! সেই কমলদা এখন শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে , কারো সঙ্গে একটা কথা বলে না!
-- ছাড়তো দাদার কথা! ও একটা ম্যাদামারা ছেলে।
-- টিয়াদির বিয়ে হয়ে যাবার পর ---
-- হ্যাঁ ছেলেবেলার প্রেম। দাদা টিয়াদিকে কিছুতেই ভুলতে পারেনি। আমি ভাই দাদার মতো গুডবয় নই। কলেজে প্রবেশের আগেই তিনটে প্রেম হয়ে গেছে এখনো এন্তার বাকি! জীবনটা এনজয় করার জন্য বস!
শ্যামল বাইকে স্টার্ট দেয়। অমল পিছনে বসে শ্যামলকে জড়িয়ে ধরে একটা হিন্দি গান শুরু করে। শ্যামল সেই গানের সুরে শিস দিতে থাকে।দুজনে যেন শোলের বীরু আর জয়।
কলেজে ঢুকেই দেখে প্রচুর ছেলেমেয়ে --- কেউ গল্প করছে, কেউ মেয়ে দেখছে, কেউ আবার কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে, আবার কেউ রুটিন দেখে ক্লাসে ঢুকে যাচ্ছে। শ্যামল বলল -- কী রে ক্লাস করবি না কি?
-- ধ্যুর। চল ইউনিয়নে বসি।
ইউনিয়নে তখন চারজন সিনিয়র দাদা ক্যারাম পিটছে আর বিড়ি টানছে। একজন আরচোখে দেখে জিজ্ঞাসা করলো -- নতুন মাল মনে হচ্ছে?কোন সেম?
-- ফার্স্ট সেমিস্টার দাদা।
-- ও! পার্টিটা মন দিয়ে আর জান দিয়ে করতে হবে কিন্তু!
-- অবশ্যই দাদা।
-- বাইক নিয়ে কলেজ আসছিস! মানে বড়লোকের ছেলে?
-- না -- মানে --
-- চারটে সিগারেট ছাড়তো! আরে কি দেখছিস বে? চারটে সিগারেট বের করতে বলেছি, কিডনি দিতে বলিনি!
অমল বলল -- হ্যাঁ দাদা ; দি -- দিচ্ছি!
-- যা কলেজটা ভালো করে ঘুরে দেখ। সাড়ে বারোটার একটা মিটিং আছে তখন টাইমে চলে আসবি।
শ্যামল আর অমল কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসল। অমল বলল -- এক বছর পর আমরাও সিনিয়র হয়ে যাব, তখন এরকম রোয়াব নিয়ে আমরাও জুনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলব। অন্যের পয়সায় সিগারেট খাব কি বলিস! শ্যামল বলল -- আজ কলেজের প্রথম দিন, একটাও ক্লাস করবি না? অমল বলল -- তুই শালা বিধবা জেঠিমাদের মতো কথা বলিস! দেখ এখন লেখাপড়া করে কিছু হবে না। পকেটে মাল্লু দরকার। আমাদের গ্রামের পটাদাকে দেখ --- সেভেন পর্যন্ত পড়েনি ; অথচ পার্টি করে কি পেল্লাই বাড়ি! পুলিশের বড়বাবু পর্যন্ত স্যার স্যার করে।
-- তাহলে পটাদাই তোর আইডল?
আলবাত!
-- পটাদার কাছেই এখন প্রকৃত বেঁচে থাকার মন্ত্র আছে।
-- বাজারে কিন্তু পটাদার নামে নানা বদনাম শোনা যায়!
-- সে তো মধুসূদন থেকে গান্ধীজী সবার নামেই নানা বদনাম আজো শোনা যায়! আরে ওসব থাকবে। আমার লক্ষ্য হলো যখন যে দল ক্ষমতায় আছে তার সঙ্গে লেপ্টে থাকা। আবার যখন অন্য দল ক্ষমতায় আসবে তখন সে দলে সুযোগ বুঝে ভিরে যাওয়া --- ব্যাস ---তাহলেই কেল্লাফতে। পুলিশ তোমার বডিগার্ড হয়ে ঘুরে বেড়াবে!
-- তুই শালা একদিন বড় মন্ত্রী হবি!
-- এখনকার রাজনীতিতে লেখাপড়া দিয়ে কিছু হয় না। একটু গরম গরম বক্তৃতা আর উপরের স্তরের নেতাদের চোখে পড়ার জন্য তাকে ভগবান বানিয়ে স্তুতি করা। দেখবি ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে!
-- তুমি বস কলেজে ঢুকতে না ঢুকতেই পাকা পলিটিশিয়ান হয়ে উঠেছ। পায়ের ধুলো দাও গুরু!
-- ধ্যুর। এখন অনেক বাকি। তবে বড় লিডার আমি হবই। এ দুনিয়ায় পাওয়ারই শেষ কথা। যার হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে তার সব আছে। আর যারা ছাপোষা তারা শালা হাসপাতালে নোংরা মেঝেতে ঘেয়ো কুকুরের মতো ধুলোবালি মেখে মশা মাছির আড়তে শুয়ে থাকে। আর পলিটিশিয়ানদের জন্য উডবার্ণ ওয়ার্ড রেডি। সর্বদা তৎপর মেডিকেল বোর্ড।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴