ব্যালকনিটা/দেবইপ্সিতা চ্যাটার্জি
ব্যালকনিটা
দেবইপ্সিতা চ্যাটার্জি
-------------------------
গাড়িটা হঠাৎ ঝাকুনি খেয়ে থেমে গেল, এমনিতেই পাহাড়ী রাস্তা তার ওপর ঘোর বর্ষা বুকটা কেমন ছ্যাত করে উঠলো শক্ত করে দীপ্তর হাতটা চেপে ধরল ঈশিতা,বাসের বাকি যাত্রীরা এই হঠাৎ গতির ছন্দপতনে আচমকা বিহ্বল হয়ে গুনগুন শুরু করল কেউই ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না হঠাৎ করে কি হলো? কন্ডাক্টর বাবু আশ্বস্ত করে বললেন ভয় পাওয়ার কিছু নেই সামনে হঠাৎ করে একটি বড় সাপ চলে এসেছিল সাপটা আস্তে আস্তে রাস্তা পার হওয়ার দরুন গাড়িটি হঠাৎ করে ব্রেক কষতে হয়েছে। সকলকে আশ্বস্ত করে বাসটি আবার চলা শুরু করল কালিম্পং শহরের উদ্দেশ্যে। ছেলেদের স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে যাওয়ায় এবার ওরা প্ল্যান করেছে, লাভা এবং ঋশপ ট্যুরের।
কালিম্পং থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে ওরা যাবে প্রথমে ঋশপএ তারপর সেখান থেকে লাভাতে । বাসটি মোটামুটি নির্দিষ্ট টাইমে কালিম্পং বাস স্ট্যান্ডে এসে থামল। তখন দুপুর দুটো বাজে ঘোর বৃষ্টি। বৃষ্টির আওয়াজে আর ক্ষিপ্রতায় চারিদিক অস্পষ্ট। কিছুক্ষণ গাড়িতে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করে দীপ্ত একটি ছাতা নিয়ে বাসের থেকে নেমে পরল কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি গাড়ি ঠিক করে ঈশিতা এবং দুই ছেলেকে ডেকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো ঋশপ এর উদ্দেশ্যে।
কালিম্পং এর রাস্তা পার হতেই শুরু হলো ঋশপ , এই রাস্তাটা পুরোটাই একটি পাহাড়ি গ্রাম্য রাস্তা কোন পাকা সড়ক নেই এব্র- ক্ষেব্র পাহাড়ি রাস্তা কোথাও রাস্তা নেই বললেই চলে বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে বা ছোটখাটো ধসে রাস্তার কোন অস্তিত্বই টের পাওয়া যাচ্ছিল না। ঈশিতার একটু উঁচুতে ভয় মানে যাকে বলে আর কি ভার্টিগো ফোবিয়া , গাড়িতে যেতে যেতে ঈশিতার খালি মনে হচ্ছিল যদি কোন যাদুতে একবারে পৌঁছে যাওয়া যেত নির্দিষ্ট জায়গায় তাহলে কতই না ভালো হতো। ঈশিতারা যেই রিসর্টটি বেছে নিয়েছিল থাকার জন্য সেটি একেবারেই পাহাড়ি গ্রামের অত্যন্ত প্রত্যন্ত এরিয়া মানে যেখানে ওদের রিসর্টটা ছিল তার পরে আর কোন রাস্তাই ছিল না। তার পরের রাস্তায় কোন গাড়ি যেতে দেওয়ার উপযুক্ত নয়। এ পড়ে যেতে গেলে ট্রেক করে যাওয়া টাই এখানকার রীতি। তবে এই দীর্ঘ জার্নিতে ভয়ংকর রাস্তার রেশের সাথে ইশিতার চোখে একটি হাইড্রেনজিয়ার ভ্যালি পড়েছিল যেটা সে কোনমতেই ভুলতে পারছে না। দীপ্ত কে বারবার বলছিল ফেরার পথে ওই জায়গাটিতে একবারটি নামবো। যেখানে গাড়িটা ওদেরকে নামিয়ে দিল সেখান থেকে ওদের রিসর্টটা কিছুটা নিচে ওরা যখন সেখানে ঢুকলো চারিদিকটা কুয়াশায় ঢাকা আশেপাশের জিনিস ছাড়া বেশি দূরের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। অথচ তখন সাড়ে তিনটা বাজে। রিসর্ট এর কাছে এসে ঈশিতার ভয় এক নিমিষে উড়ে গেল এখন প্রবল ভালো লাগা ঘিরে ধরছে তাকে। তাদের রিসর্ট এর ঠিক পাশেই একটি বন্ধ বাড়ি যার ব্যালকনিটা ঝুলে আছে পাহাড়ের গায়ের থেকে আর কুয়াশামাখা মেঘগুলো বারান্দাটাকে ভরে রেখেছে। যেন চারিদিক থেকে পাহাড়ে ঘিরে রেখেছে ,নিজের বুকের মধ্যে মিশিয়ে নিয়েছে ঈশিতাদের । পাহাড়ের গ্রাম যে এত সুন্দর হয় এখানে না আসলে ঈশিতা হয়তো জানতেও পারতো না । সে প্রান মন শরীর দিয়ে শুষে নিতে থাকল এই সমগ্র ভালবাসা আর ভালোলাগাটুকু।
এত সুন্দর বাড়িটা বন্ধ দেখে ঈশিতার মনে প্রচন্ড কৌতুহল হচ্ছিল , নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে অবশেষে কেয়ারটেকার ছেলেটিকে জিজ্ঞাসাই করে ফেলল যে, বাড়িটি বন্ধ কেন! ছেলেটি জানালো এইটা বাড়ির পিছন দিক গেল বর্ষায় বাড়ির সামনের দিকটা এক প্রচন্ড ধসে পরিবার শুদ্ধু শেষ হয়ে গিয়েছে, ঈশিতার ভালো লাগাটুকুকে মুহূর্তে এক বিষাদ ভরা সন্ধ্যা উপহার দিয়ে গেল।
ওর রুমের জানলা দিয়ে বারান্দাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এই ভোরেও সব দুঃখ কষ্ট ভুলে বারান্দাটা মেঘের সাথে যেন এক মুগ্ধ প্রেমে লিপ্ত যেখানে কোন কিছু শেষ হয় না শুধুই ভালো লাগার রেশ থেকে যায়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴