সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

বৈশাখী বিকেলকে/আশিস কুমার খাজাঞ্চি

বৈশাখী বিকেলকে 
আশিস কুমার খাজাঞ্চি


প্রিয় বৈশাখী বিকেল,
                             কেমন আছ জানতে চাওয়াটা আমারই বোকা বোকা মনে হবে। কিছু মনে কর না, চিঠি লেখার অভ্যেসটা অনভ্যাসের মরু সাহারায় আজ। হাজারবার ভাবি তোমায় একখানা জমাটি পত্র লিখি। লিখি লিখি কিন্তু লেখা আর হয়ে ওঠে না। যা হয় আর কী।
এই অচেনা বৈশাখী মেজাজে শুধুমাত্র আমার বেড়ে ওঠার গাঁয়ের পটে সেই চেনা বৈশাখী আবহেই তোমায় রাখি, কেমন। আজ আর বৈশাখকে বৈশাখীতে পাই না, না জ্যৈষ্ঠকে জ্যৈষ্ঠতে। পাওয়ার সুযোগকে না পাওয়ার সিন্দুকে আমরাই প্রতি মুহূর্তে জমিয়ে চলেছি। সময় পাল্টেছে, পট পাল্টেছে, আবহাওয়া পাল্টেছে, আবহও পাল্টেছে। তবুও ছেলে বয়সের বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে তোমার পান্থশালায় মন কেমনের খামারে হামাগুড়ি দিয়ে তোমায় জাগিয়ে রাখি।
স্কুল ব্যাগ বলে কিছু ছিল না। স্কুল থেকে ফিরে হাতের বইখাতা কটি বাড়িতে খাটের উপর ছুঁড়ে ফেলে পেটের বায়না কিঞ্চিৎ মিটিয়ে নিতেই হত। তারপর হ্যান্ড-পাম্পারে ফুটবলে হাওয়া ঠাসা এবং বল হাতে মাঠে দৌড়। মাঠ মানে তো সেই ফসল উঠে যাওয়ার পরের বিস্তৃত একফসলি ধানক্ষেত। মাঝেসাজে চড়া রোদ্দুর আমাদেরকে সেজো ঠাকুরদাদের ডালপালা ছড়ানো আম গাছগুলির নিচে বসিয়ে অপেক্ষায় রাখত। রোদের জ্বালাধরা আদর কমলে বাকি সদস্যেরা একে একে আসবে, তবেই খেলা শুরু। খেলার শেষে ফুটিফাটা হালকা ঘাসে ঢাকা মাঠে বসে ছোটবড় সব্বাই মিলে কী মিশেলি আড্ডায় মেতে উঠতাম! কার কত ভুল হল, কী হলে কী হতে পারত, কোন্ পাড়ার কে কত ভালো খেলে এসব। তখন ফাঁকা মাঠে এপাড়া ওপাড়ায় প্রচুর ফুটবল খেলা হত। শুনেছি আজকাল মুঠোফোনের আশিসে সেসব কালিন্দি-রায়মঙ্গলের ঘোলা স্রোতে ভেসে গেছে। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সে দৃশ্যে দর্শকের চেয়ারেও আর কোনো আসন মেলে না।
আঁধার ছোঁয়া শুরু হলে মাঠে চরে বেড়ানো যে যার গরু নিয়ে বাড়ি ফিরব। এমন সময়ে গোটা পশ্চিমের আকাশ সিঁদুরে রূপ বদলাতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে মেঘেদের নিকষ কালো ঘনিয়ে আসা। ক্ষ্যাপা আড়ালে ঢেকেছে তখন লালছে আকাশ। ঘন ঘন বিদ্যুতের চমকানি ধমকানি। বাড়ির পথে দু-এক পা বাড়াতেই ধুলো উড়িয়ে কাল-বোশেখীর ধুন্ধুমার পদাবলী। সে ভয়াল আয়োজনে এক অদ্ভুত ভালোবাসার আবেদনপুষ্ট ছিল। ঝড়ের ঐ সাতসুর-নাদের বনেদিয়ানা আজকেও ভাসিয়ে রেখেছি তোমার ভেলায়। আমাদের পোষ্যেরা কমবেশি সবাই তো প্রকৃতিতে আবহাওয়াবিদ, তাই ঝড়ের আগাম সংকেতে প্রায় সকলেই আগেভাগে গোয়াল মুখো হয়। ঐ বেপরোয়া ব্যাকরণ না মানা দাপুটে ঝড়, তার সাথে ঝেপে আসা বৃষ্টিতে বেপরোয়া আমাদের আম কুড়ানোর ধুম। কে কটা কুড়াতে পারে। আর তারপর গাছের মালিকের 'বকুনি', 'তাড়া'র মতো মসলা তো আছেই। সব নিয়ে এক বসন্ত উৎসবের আমেজ। বৃষ্টিতে মাটির সোঁদা গন্ধ আজ আর পাই না বললে তুমি ভাববে এটা বাড়াবাড়ি। কিন্তু বিশ্বাস কর সেই গন্ধ যেন আমাদের গ্রামের সেই মেঠো ঘাস জমিতেই থেকে গেছে, বাড়ির উঠানে রয়ে গেছে, সেই মাটির পথেই শুয়ে আছে।
কাগজফুলে রঙিন বেশের পালকি কাঁধে লালনীল শার্টপ্যান্টে লাঠি হাতে বেয়ারারা পালকি নিয়ে হালকা চালে ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে, রাস্তা ডিঙিয়ে হন্ হন্ এগিয়ে যাচ্ছে এপাড়া থেকে অন্য কোনো পাড়ায়। না ওদের "হুন্ হুনা রে হুন্ হুনা.." গাইতে কখনো শুনিনি, তবে ব্যান্ডপার্টি ছিল। ছিল তাদের গরিবানা মতে ঢাক-ঢোল-সানাই -এর সমবেত নহবত। আর রংবেরঙের পোশাকের বরযাত্রী তো থাকতেই হবে। সবার পিছনে সর্ববাহী স্বর্গরথের মতো কলের গানের সরঞ্জামের বাক্স লম্বা বাঁশে ঝোলানো। বাঁশের দু প্রান্ত দুই বাহকের কাঁধে। বাঁশে বাঁধা লম্বা মাইক। গান বাজছে "শ্যামলা গাঁয়ের কাজলা মেয়ে জল ভরিতে যায়.....", "ওগো বকুল তুমি ফোটো .....", "ও নদীর রে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে...."। সারাটা আমি ঘিরে ওই ছবি, গানের কলিরা। খেলার মাঠের পাশ কাটিয়ে কোনো বরের পালকি এগোতে দেখলে খেলা ফেলে বরের পালকি আটকাতে দৌড়াতাম সবাই। সে তো শুধু মজাই ছিল না, তাতে ছিল ঐ বেলার আয়েশ। কিছুটা হলেও তখন মনে হত হিম্মত, এখন মনে মনে ভাবি আর হাসি। অন্য কিছু নয় একটা মাঝারি মানের ফুটবল কেনার জন্য চাঁদা আদায় করতেই পালকি রোখা। সেটা একটা চল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অভ্যস্ত বরপক্ষের বরকর্তা অগত্যা ঘামে ভেজা পাঞ্জাবির পকেটে অতিকষ্টে হাত ডুবিয়ে অতিকিপ্টেমিতে দু'দশ টাকা নারাজী হয়ে হাতে গুঁজে দিত। এত সবের পর পালকি ছাড়া পেত। দু'চার কথা যে শুনতে হত না তা নয়। সেসব এখন কেবলই ছবি...! 
তুমি শেষ বেলার দর্শক, তোমায় ভর করেই সে সব কথা কাহিনী। তোমায় শুধু মনে করিয়ে দেওয়া। 
অসম্ভব ঘুড়ি ওড়ানোর নেশা ছিল। আয়তাকার ছোটবড় কত ঘুড়ি বানিয়ে উড়িয়েছি তোমার প্রশ্রয়ে। বড় ঘুড়িগুলোর গায়ের জোরও ছিল বটে। খোলা মাঠে বলিষ্ঠ বাতাসে লাটাই ধরে ঘুড়ির পথে ল্যাজেগোবরে দৌড় বারবার ফিরিয়ে আনে সময়টাকে। হার মানলে লাটাই ধরে বসে পড়তাম। মাটিতে লাটাইয়ের লাঠি চেপে বসিয়ে ঘুড়ি আর বাতাসের দ্বৈত শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে ঘুড়িকে বশ মানিয়েছি। কখনো কখনো গাছের ডালে কিংবা ছাদের রেলিং এর গায়ে বেঁধে রাখতাম। ঘুড়িরও স্বাধীন হতে স্বাদ হয়। মাঝে মাঝে বাতাসের বন্ধুত্বে মোটা সুতো ছিঁড়ে পাখি হয়ে যেত। সত্যি বলতে কী কথাগুলো তোমায় যখন লিখছি ওই মাঠে তোমার শূন্য ভেলায় সেই সময়ের সাথসুখে ভাসছি।
পঁচিশে বৈশাখের সাদামাটা অনুষ্ঠানকে ঘিরে অসম্ভব উন্মাদনা ছিল আমাদের। কালবৈশাখীর বেরসিক ঝড়ের দুরন্ত দস্যিপনায় একাধিকবার পন্ডও হয়েছে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান। সেই তুমিগুলো অনেকখানি সাময়িক মনখারাপের শরিক ছিলে।
তোমার গয়নাগার থেকে একে একে কালবৈশাখী ঝড়, পালকির দোলা, পাড়ায় পাড়ায় ফুটবল, ঘুড়ির অক্লান্ত উড়ান সকলে ছুটি নিয়েছে।
জানো বৈশাখী বিকাল, তোমায় আবার ঠিক তেমন করে পেতে খুব খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু ওই যে, নিঠুর সময়ের নিপাট "না বলে দেওয়া" ...........।
                
                           ইতি--
                                       পথ চাওয়া

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri