বেলা দে-র আলোচনায় অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়-এর 'অভিশংসন'
বেলা দে-র আলোচনায় অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়-এর 'অভিশংসন ও অন্যান্য'
প্রথমে বলি অশোকদা মানে অশোক গঙ্গোপাধ্যায় জনপ্রিয় একজন মানুষ, আমার প্রিয় লেখক এবং ভাললাগার মানুষ।
প্রায় দুবছর আগে একদিন আমার বাড়ির বিপরীতে তার ভাগ্নীবাড়িতে এবং আমাকে "অভিশংসন" গল্পগ্রন্থটি দিয়ে যান,বইটিতে পাঁচখানা গল্প রয়েছে, প্রত্যেকটা গল্প অসাধারণ এবং নামের সাথে বইটির সাযুজ্যও রয়েছে।প্রথম গল্প অভিশংসনের বিশেষত্ব খাটি বাস্তব থেকে তুলে আনা, কয়েক বছর আগে অশোকদার লেখা একটা নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল সেখানেও দেখেছি নিত্যকার ঘরোয়া কাহিনী নিয়ে ঘটনা, বেশ লেগেছে আমিও সাধারণ জীবন নিয়ে লিখতে পছন্দ করি। অভিশংসন অতি বাস্তব এক চিত্রপট এবং প্রাসঙ্গিক, কাঠগড়ার যে ছবি এঁকেছেন সেখানে রাজসাক্ষী হল বিচারক ঠাকুমার এক কিশোর নাতি আর অবুঝ বয়সী নাতনি, নাবালক শিশু দুটি অজান্তেই সংসারের সত্যি ঘটনার বিবৃতি দিয়েছে মৃত বিচারক ঠাকুমার কাছে তাদের বর্ষীয়ান দাদু নিতান্তই ভালো মানুষ শুধু দিয়েই গেছেন পাননি কিছুই। ওই যে কাঠগড়ায় জীর্ণ মলিন বস্ত্রে নতমুখে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দাদু, কিছুক্ষণ আগে তিনি ভেন্টিলেশনে আচ্ছন্ন হয়ে ছিলেন মারা গেছে কিনা জানিনা,জানে শুধু নার্স ডাক্তারেরা। ডানদিকের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো কেতাদুরস্ত সুপুরুষ আমার বাবা ভাস্কর রায়, চিরদিনের মুখচোরা সংসারের শান্তি রক্ষার জন্য প্রতিবাদের ভাষা বিসর্জন দিয়েছেন মা ভাস্বতী রায়ের অধিকারের লড়াইয়ের কাছে। মাকে সবাই ভয় পেয়েছে ভালোবাসেনি কেউ অপরের দু:খে তার মন কাঁদে না। আমার ঠাকুমা অকালে চলে গেলেও তাঁর আফসোসও কিছু কম ছিল না, তিনি নিজে বিচারক গীতায় হাত দিয়ে বলুক না। বিচারক স্ত্রী কে শঙ্করলাল বলেন এখনো কেউ জানেনা আমি মারা গেছি, ছেলে বউ শুনলে মৃত্যুর দু:খের চাইতে বেশি দু:খ পাবে নার্সিং হোমের বিল মিটিয়ে দেবার দায়বদ্ধতায় আবার সুখানুভূতি মিলবে আমার মৃত্যুর দাম সাড়ে এগারো লাখ শুনে সমীহও করবে। বিচারক স্ত্রী এবার বলে তুমি আমাকে ভালবেসেছ বলে বিয়েও করনি সন্তানদের জড়িয়ে বেঁচে ছেলে তা বলে কি সুযোগ পেলে বিয়ে করতে না করনি সেটা তোমার মহত্ব। পুত্র ভাস্কর কাঠগড়ায় দাঁড়ায় এবং সব দোষ স্বীকার করে নেয় ভাস্বতী আমাকে সমস্ত বঞ্চনার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। ভাস্বতীও নিজের ভুল বুঝতে পারে গল্পের শেষে দেখা যায় সবাই মনস্তাত্ত্বিক ঘটনার স্বীকার, প্রত্যক্ষভাবে কাউকেই দায়ী করা যায় না, কমবেশি ভুলভ্রান্তি অভিমান সবারই আছে।শেষাংশে লেখক কিছু সদোপদেশ দিয়েছেন সম্মলিত আত্মত্যাগ ছাড়া কোনো পারিবারিক বন্ধন সম্ভব নয়। শেষপর্বে দেখা যায় পরিবার মানে এক পবিত্র সুন্দর ফুলবাগান। "টাইটানিক পয়েন্ট" গল্পে জানা যায় অরুণার জীবনের করুণ প্রশান্তকে ঘিরে।
ভালবেসেও বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত, খুবই মনকাড়া গল্প। তৃতীয় গল্পেও পারিবারিক ভাবনা পরিস্ফুট, বৃদ্ধাশ্রমে জীর্ণ তক্তপোশে নিজের মা কে শায়িত ঘরবন্দী অবস্থায় রেখে এসে অনুতাপের দগ্ধ হয়েছে পুত্র মনু মায়ের পার্থিব সুখ কেড়ে নিয়েছে সে। কৈফিয়ত দিতে হয়েছে নিজের সন্তানের কাছেও, এখানেও পারিবারিক টানাপোড়েন। শেষের গল্পেও ওঠে পরিবার এবং জলপাইগুড়ি শহরের চেনা জগত চেনা পরিবেশ মূলত গল্পের বিষয়। তাঁর নিজের পাড়া, তিন নম্বর ঘুমটি,স্টেশন, অশোকদার সব গল্পই খুব সহজ সাবলীল উল্লেখযোগ্য। অভিশংসন" গল্পটা গভীর চিন্তাপ্রসূত এবং বর্তমান সমাজের জীবনশৈলীর প্রকাশ।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴