বেঙ্গল সাফারির হিমালয়ান ব্ল্যাকবিয়ারদের গল্প/গৌতম চক্রবর্তী
বেঙ্গল সাফারির হিমালয়ান ব্ল্যাকবিয়ারদের গল্প
গৌতম চক্রবর্তী
শিলিগুড়ির কংক্রিটের জঙ্গল আর যানজট পেরিয়ে সেবক রোড ধরে একটু এগোলেই পথের দুধারে মহানন্দা অভয়ারণ্য শুরু। অরণ্যের বুক চিরে দুধারে মসৃণ পিচপথ তীরের মত সোজা চলে গেছে দূরে নীল পাহাড়ের দিকে। ১৮ মাইল দূরত্বে মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি। আবার পাশাপাশি শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বৈকুন্ঠপুরের গহীন জঙ্গল। একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা। পাশেই পথের দুধারে শালগাছের জঙ্গল। শিলিগুড়ি পেরিয়ে সেবক রোডের এই অংশটা মহানন্দা অভয়ারণ্যের অন্তর্গত। এই পথে এলে আমার মন ভালো হয়ে যায়। মিষ্টি হালকা হাওয়া বয়ে যায় এখানে। সে হালকা হাওয়ায় বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে পায়ে চলা যেসব কাঁচা পথগুলো চলে গেছে নিবিড় জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এদিক ওদিক, তারই একটা ধরে কল্পনায় হাঁটা দিই। পৌঁছে যাই সুদূর অতীতে। মাথার উপরে নীলাভ আকাশের সঙ্গে রাস্তার পাশের সবুজের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। দুপাশে ঘন পত্রশোভিত সবুজ বনানী। জঙ্গল যেন পথের দখল নিতে রাস্তার উপর ঝাঁপিয়ে আসতে চায়। প্রচণ্ড গরমে মানুষ যখন দিশাহারা হয়ে পড়েন তখন বৈকুন্ঠপুর জঙ্গল বা ডুয়ার্সের জঙ্গলে চলে যাওয়া যায় একটু সবুজের বুকে জিরিয়ে নিতে। সেবক রোড ধরে মহানন্দা অভয়ারণ্যের বুক চিরে কালো কুচকুচে রাস্তাটা যেন সাপের মতো পাহাড়ের কোলে অদৃশ্য হয়ে গেছে। ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ আর হালকা সতেজ হাওয়ায় ভারী মন ভালো করা পরিবেশ। আমার দিল খুশ হয়ে যায়। হারিয়ে যাই এদিক ওদিক। কিন্তু সত্যি সত্যি হারিয়ে যেতে পারলাম কই? চিরটাকাল তো নির্দিষ্ট পথরেখা ধরেই যাতায়াত। সেবক রোড এর ভিড়, শালুগাড়া বাজার, শালুগাড়া বৌদ্ধ গুম্ফা, সাতমাইল, মহানন্দা অভয়ারণ্য পেরোলেই সেবকের সবুজ পাহাড়। সেভকগামী রাস্তার দিকে যেতে শালুগাড়া অতিক্রম করলেই ফৌজি ক্যান্টনমেন্ট এলাকা পার হয়ে জাতীয় সড়কের ধারে তৈরি হয়েছে বেঙ্গল সাফারি পার্ক। তারপরেই নীরব এবং নিস্তব্ধ শালকুঞ্জ। বন দফতরের উদ্যোগে চমৎকার পিকনিক স্পট। ডানদিকে ক্যান্টনমেন্ট ছাড়িয়ে বিট অফিস।
২০২২ সাল। উত্তরের এই অঞ্চলে দুদিন খুব গরম পড়েছিল। সেদিন সকাল সকাল সোনিকার ফোন। সোনিকা শর্মা। শিলিগুড়ির একটি প্রাইভেট ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা। সোনিকা বেঙ্গল সাফারির কিকা নামে সাদা বাঘকে দত্তক নিয়েছেন। সোনিকার সঙ্গে আমার বেঙ্গল সাফারিতেই আলাপ। একটি সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিয়েছিল বনদপ্তর। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে রাজ্যের চিড়িয়াখানাগুলিতে থাকা বন্যপ্রাণীদের পোষ্য নেওয়ার নিয়ম চালু করেছিল বনদপ্তর। এ জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আবেদন করতে হবে। নিয়ম ছিল কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা যদি কোনও বন্যপ্রাণীকে পোষ্য নিতে চান তা জানিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে আবেদন করবে। এরপর বনদপ্তর বিষয়টি খতিয়ে দেখে ওই ব্যক্তি বা সংস্থাকে একটি শংসাপত্র দেবে। এরপর থেকে চিড়িয়াখানা পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁদের মতামত গ্রহণ করা হবে। ওই ব্যক্তি তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনও অনুষ্ঠানও চিড়িয়াখানায় নেওয়া পোষ্যের সামনে পালন করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের বাইরে থেকেই তা করতে হবে। যিনি বা যাঁরা ওই বন্যপ্রাণীকে পোষ্য হিসেবে গ্রহণ করবেন তাঁদের নাম, পদ প্রভৃতি ওই পোষ্যের ঘেরাটোপের বাইরে লেখা থাকবে। সোনিকা শিলিগুড়ি শহরের বনেদী পরিবারের গৃহিনী। সে এসেছিল সাদা বাঘ দত্তক নিতে। পরবর্তীকালে সোনিয়ার অভিজ্ঞতা ইনটারভিউ আকারে সংগ্রহ করতে গিয়ে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। সোনিকার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। সোনিকার কাছ থেকেই খবর পেলাম হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ারের সফল ক্যাপটিভ ব্রিডিং হয়েছে বেঙ্গল সাফারিতে। ফোন করলাম বেঙ্গল সাফারির প্রাক্তন ডিরেক্টর ধর্মদেব রাইকে যিনি করোনার সময়কালেও বেঙ্গল সাফারিকে নিয়ে প্রচুর পরিকল্পনা করেছিলেন এবং দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে আমাকে সমৃদ্ধ করেছিলেন এবং আমাকে লেখার অনুমতি দিয়ে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছিলেন। তিনি সাফারি পার্কের বর্তমান ডিরেক্টর কমল সরকারের ফোন নম্বর দিলেন এবং প্রয়োজনীয় অনুমতির জন্য যা বলা বা করা প্রয়োজন তা করে দেবেন বলে জানালেন।
আসলে আমার অতি প্রিয় উত্তরের তিনটে অভয়ারণ্যের বন্যপ্রাণের প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, আচার-আচরণ, ত্রিকোণ প্রেম, মিলনান্তক এবং বিয়োগাত্মক কাহিনী নিয়ে কলম ধরেছি। বক্সা-চাপরামারি-গরুমারার হাতি, জলদাপাড়ার গন্ডার, নেওড়াভ্যালির ভালুককে নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে লিখে ফেললাম বিভিন্ন গল্প নামক সত্যঘটনা যা চলচ্চিত্রে রূপায়িত হলে উপযুক্ত হাতে যদি চিত্রনাট্য রচিত হয় তাহলে প্রচুর বিনোদনের খোরাক দেবে। মহানন্দা অভয়ারণ্যের বেঙ্গল সাফারির রয়েল বেঙ্গলের গল্প বলেছিলাম যার নায়ক স্নেহাশিস এবং নায়িকা শীলা এবং উদীয়মান নায়ক ছিল বিভান। এদের সংসারেও আছে ত্রিকোণ প্রেম, ভাব ভালোবাসা, দাম্পত্য, ভালোলাগা, খারাপলাগা, খুনসুটি, রাগ, অভিমান। বেঙ্গল সাফারির সফল ব্যাঘ্র প্রজনন নিয়ে লিখেছিলাম। আজ শোনাবো হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার ধ্রুব এবং ফুরবুর সফল প্রজননের গল্প। ব্যাঘ্র প্রজননের পাশাপাশি হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ারের সফল প্রজননও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কৃতজ্ঞতা জানাই বেঙ্গল সাফারির ডিরেক্টর কমল সরকারকে, দাওয়া সাঙ্গু শেরপাকে, কৃতজ্ঞতা জানাই সাফারি পার্কের ডিরেক্টর বাদল দেবনাথকে। প্রবেশ করলাম বেঙ্গল সাফারিতে। আমার এক আত্মীয়ের বেঙ্গল সাফারি দেখার অদম্য ইচ্ছা ছিল। তা পূরণ করার জন্য ওনাকে সঙ্গী করে গরমেই সফর করতে চলে এলাম বেঙ্গল সাফারিতে। দেখলাম উত্তরের তীব্র গরমে সামার ভ্যাকেশনে মজেছে শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি পার্কের খুদে সিম্বা, জেনিফার, রিকা এবং কিকারা। লোকচক্ষুর আড়ালে খেলায় মত্ত ছিল সাফারি পার্কের আদুরেরা। আর তাদের এই কীর্তি দেখে বেজায় খুশি ছিলেন পার্কের কর্তারা। সেই সময়ে দেখেছিলাম হিমালয়ান ব্ল্যাকবিয়ারদের বরফ দেওয়া হয়েছিল। তারা বরফ পেয়ে বেজায় খুশি ছিল। গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত সাফারি পার্কের চারটি হিমালয়ান ব্ল্যাকবিয়ার এর জন্য কর্তৃপক্ষ বরফের ব্যবস্থা করতেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেছিল ড্যাডি, জেনিফার, ধ্রুব এবং ফুরবু। ব্ল্যাকবিয়ারদের মধ্যে ছোট ধ্রুবকে বরফ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজের এনক্লোজারে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে দেখেছিলাম। তারপর বরফ নিয়ে খেলা শুরু করে দেয়।
ঠিক যেন টানা স্কুল চলার পর ছুটির মেজাজ। সকালে উঠেই জলকেলি, বরফ নিয়ে খেলা। দেখেছিলাম কেউ আবার খোশমেজাজে আপন-মনে দোলনায় ঝুলে চলেছে। সময়মতো এসে খাবার খেয়ে দে ছুট। ঠিক যেন শিশুদের সামার ভ্যাকেশনে মজা করার দৃশ্য। পার্কের মধ্যে বড় হওয়া এই খুদেদের প্রতিটি মুহূর্তের ছবি ছিল আর্কাইভে সংগ্রহ করে রাখার মত। কি অদ্ভূত সমাপতন। বছর পাঁচেক আগে দার্জিলিং চিড়িয়াখানা সংলগ্ন এলাকা থেকে হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার ধ্রুবকে উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে সিকিম এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ফুরবুকে। এরপর দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় কিছুদিন রাখা হয়েছিল ওই দুজনকে। সেখান থেকে দুজনকে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে পাঠানো হয়। সঙ্গে জেনিফার নামে আরও একটি ভালুককেও পাঠানো হয় শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি পার্কে। যে সময় ধ্রুব এবং ফুরবুকে উদ্ধার করা হয়েছিল সেই সময়ে তাদের বয়স ছিল ১১ এবং ১৩ বছর। সাফারি পার্কে আনার পর এখানকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তাদের কিছু দিন সময় লেগে যায়। ২০১৯ সাল থেকেই দুজনের মধ্যে সখ্যতা তৈরি করতে তৎপর হয় সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। সেই ধ্রুব বাবা হল। ধ্রুব এবং ফুরবুর মধ্যে মিলনের পর গর্ভবতী হয় ফুরবু। ছয় মাসের গর্ভাবস্থা পার হবার পর ২৭ শে মার্চ সন্ধ্যায় সাফারি পার্কের শেল্টারে সন্তানের জন্ম দেয় ফুরবু। গত ১০ বছরে এরাজ্যে হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ারের ক্যাপটিভ ব্রিডিং হয়নি বলেই দাবি ছিল সাফারি পার্কের কর্তাদের। সিডিউল তালিকায় ভালনারেবল হিসাবে চিহ্নিত হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার। বাঘের পর ভালুকের ক্যাপটিভ ব্রিডিং সফল হওয়ার ফলে সাফারি পার্কে স্হায়ী প্রজনন কেন্দ্র চালু করার দাবি ওঠে। সাফারি পার্কের কর্তারা এই স্বীকৃতির জন্য জোরদার তদবির করেন রাজ্যের মাধ্যমে। বাঘের পরে ভাল্লুক। শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি পার্কে সুস্থ সন্তানের জন্ম দেয় হিমালায়ান ব্ল্যাক বিয়ার ফুরবু। নতুন অতিথিকে নিয়ে ভালুক বাবা মা যেমন খুশি, তেমনই আনন্দিত ছিল সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।
শুনলাম তখনও সদ্যোজাতকে মা ফুরবু নিজের কাছ ছাড়া না করার ফলে তার লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। বনকর্তাদের প্রাথমিক ধারণা ছিল স্ত্রী শাবকের জন্ম দিয়েছে ফুরবু। তখনো চোখ ফোটে নি ভালুক শাবকের। তিন-চারদিন সন্তানের সেভাবে যত্ন নিচ্ছিল না সে। তাই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। প্রজনন সফল হওয়ার ফলে ফুরবু এবং সন্তানের মধ্যে যাতে কোনরকম সংক্রমণ না ছড়ায় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। দেখেছিলাম তীব্র গরমেও সন্তানকে কোলছাড়া করে নি দম্পতি। সব সময় কোলে কোলেই রেখেছিল সদ্যোজাতকে। নিয়মিত দুধ পান করিয়েছে ফুরবু। শুনেছিলাম পাশাপাশিভাবে নিজেও ঠিক সময়ে খাবার খায়। তাকে বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে দেওয়া হয়। দুধ ছাতু কলা দিয়ে শেক বানিয়েও খেতে দেওয়া হয়। গরম বেশি থাকার জন্য ডায়েটে প্রচুর পরিমাণ জল এবং তরমুজ জাতীয় খাবার দেওয়া হয়। সেন্টারের সামনে এয়ারকুলার বসানো হয়েছে। শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য স্নানের জল এবং বরফ দেওয়া হয়ছে। আসলে মা হওয়া কি মুখের কথা! খোশমেজাজে পার্কে নিজেদের খেলায় ব্যস্ত ছিল বন্যপ্রাণীরা। বেঙ্গল সাফারির হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার ড্যাডি। বিধিনিষেধের মধ্যে নতুন খেলায় ব্যস্ত ছিল ড্যাডি। উল্টোদিকে চলছিল, ছুটছিল। আবার ঘুরে গিয়ে ছুটে ছুটে আসছিল। ড্যাডির সেই কীর্তি দেখে অবাক বেঙ্গল সাফারি কর্তৃপক্ষ। রোজই তাদের নিত্যনতুন খেলা ক্যামেরাবন্দী করেছেন পার্কের আধিকারিকেরা। তবে ড্যাডিকে দেখে অবাক হয়েছেন সকলে। নিজের ঘরের কাছে ড্যাডি উল্টোভাবে চলা শিখেছে। কয়েকদিন ধরে নিয়ম করে সে উল্টোদিকে চলেছে। আবার কখনও সেভাবেই উল্টোদিক করে ছুটেছেও। ফের কিছুক্ষণ কাঠের বল নিয়ে খেলেছে। আবার ছুটে এসে একই কাণ্ড করেছে। পার্কে ৪ টি ভল্লুক ছিল। কিন্তু তার মধ্যে ড্যাডি আগাগোড়াই একটু দুষ্টু স্বভাবের। কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছিল সে উল্টোদিকে চলছে। নিজে থেকেই করছে তা। ভিডিয়ো করলে তা দেখে আবার তেড়েও আসছিল। ড্যাডির এই নতুন অভ্যেসের ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমেও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
শালুগাড়ার অদূরে মাত্র ৫ কিমি দূরে বেঙ্গল সাফারি উদ্যান বা পার্ক। পূর্বে নাম ছিল সোরিয়া রোবাস্টা। ২৯৭ হেক্টর জমির উপরে অভিনব, অনিন্দ্য সুন্দর খোলামেলা বন্য প্রাণীদের স্বাভাবিক বিচরণ নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। গাড়িতে বসেই দেখতে পেলাম ভালুক হেঁটে যাচ্ছে। ঝোপঝাড়ে দুষ্টু লেপার্ড উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। বাঘিনী ছানাপোনাদের নিয়ে বসে আছে কিংবা খুনসুটি করছে। ভাবাই যায় না ঘিঞ্জি পরিবেশ, হট্টগোল থেকে মুক্ত হয়ে বেঙ্গল সাফারিতে বেড়ানো। এখানে এলে মন ভাল হয়ে যায়। মনের আনন্দের খোরাক পাওয়া যায় সাফারির মাঝে। চমৎকার রেস্তোরাঁয় চা, কফি পকোড়া খেলাম। গাছগাছালি আর পাখির কলতানে মুখরিত বেঙ্গল সাফারি। আগামীতে পক্ষীবিতান এবং প্রজাপতি পার্ক চালু হবে শুনেছিলাম। নিশাচর প্রাণীও দেখা যাবে বেঙ্গল সাফারি পার্কে। তাদের জন্য তৈরি হচ্ছে রাতের পরিবেশ। শুনলাম রাজ্যের মধ্যে প্রথম নকচারনাল হাউজ তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বেঙ্গল সাফারিতেই। এলাম হাতি সাফারির জন্য নির্দিষ্ট জোনে। ১৯৮৭ সালে শোনপুরের পশুমেলা থেকে কেনা হয়েছিল তিনটে হাতি। তৎকালীন তিন বনকর্তা নিজেদের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে তিনটি হাতির নামকরণ করেন শর্মিলা, উর্মিলা এবং প্রমীলা। তিন দশকের মধ্যে কোন হাতি তেমন সমস্যায় ফেলেনি বনদপ্তরকে। তিনটি হাতির মধ্যে উর্মিলা যথেষ্ট বাধ্য এবং বুদ্ধিমতী। শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি পার্কে হাতি সাফারি শুরু হবার পর বক্সা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল কুনকি হাতি উর্মিলাকে। কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখার পর উর্মিলাকে দিয়ে শুরু হয়েছিল বেঙ্গল সাফারির হাতি সাফারি। ক্ষুরধার বুদ্ধির জন্য বেঙ্গল সাফারি কর্তৃপক্ষের প্রথম পছন্দই ছিল উর্মিলাকে। অনেকে আবার উর্মি বলেও ডাকতেন হাতিটিকে। খোশমেজাজে থাকত উর্মিলা। মাঝেমধ্যেই শুঁড় উঁচু করে পার্কের কর্মীদের যেন বলে আমি তোমাদেরই লোক। তাই নতুন পরিবেশ হলেও উর্মিলাকে নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি বেঙ্গল সাফারি কর্তৃপক্ষের। উর্মিলাকে মহানন্দা অভয়ারণ্যের গলিপথ চিনিয়েছে তার মাহুত। অজানা জন্তুর উপস্থিতি টের পেলে সঙ্গে সঙ্গে গতি শ্লথ করে বিষয়টা বুঝিয়ে দিয়েছে মাহুত বন্ধুকে। বেঙ্গল সাফারিতে আরো একটা কুনকি হাতিকে নিয়ে এসে চলছে হাতি সাফারি। সারাদিন প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে আর একটু অন্যরক্ম সময় কাটিয়ে ফিরে এলাম বাড়ির পথে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴