বুধুয়া সোরেণ ও ঈশ্বরের পুত্র/স্বর্ণজিৎ ভদ্র
বুধুয়া সোরেণ ও ঈশ্বরের পুত্র
স্বর্ণজিৎ ভদ্র
কুয়াশার আড়ালে ক্ষীণ চাঁদের ছায়া ফেলে সিলভার ওক,
দুপাশ থেকে বুড়ো চাগাছগুলির ফিসফিস শব্দ কানে আসে।
বুধুয়া সোরেণ জানে ওরা কী বলে।
ঢাঁই করা সবুজ কচি পাতার তাজা গন্ধ—
এখনও মাঝে মাঝে সাইরেনের শব্দে বুধুয়ার ঘোর লাগে।
বিলি কাটা পাহাড়ি ঢালের গায়ে ঝুরি পিঠে অসমাপ্ত গল্প—
ফিরতি পথে পড়ন্ত রোদে বোনা স্বপ্নজালের টুকরো
এখনও আছে কিছু এদিক ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে।
হাঁপ ধরে বুধুয়ার, এপথে আসা হয়নি বহুদিন,
তবে খুব চেনা পথ, ঠাহর করে চলে।
সে অনেক দিনের কথা, প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার আসত
এমিলিয়ার হাত ধরে, দুজনে একসাথে চড়াই ভাঙত।
শীর্ণ অশক্ত দেহটাকে টানতে টানতে ফটকের সামনে এসে দাঁড়ায়,
শক্ত রাস্তায় লাঠিটা দুবার ঠকঠক করে উবু হয়ে জোরে শ্বাস নেয়।
ত্রিকোণ গির্জার উঁচু মাথা থেকে ঝোলা টিমটিমে হলুদ আলোয়
নিঃসঙ্গ স্প্রুস গাছের সরু পাতা চুঁইয়ে নেমে আসে অবসর।
উঁকি দেয় নিটোল কালো ঝলমলে হাসিমুখ,
চুলার লাল আঁচে পিছলে পড়া এমিলিয়ার তেলতেলে মসৃণ শরীর।
বুধুয়ার আদরের ‘কুরি’।
দূর থেকে ভেসে আসা দ্রিমি দ্রিমি তালে টগবগে গরম ভাতের গন্ধ মেশে।
রাত বাড়ে, বুধুয়া সোরেণের নেশা চড়ে।
আচমকা বিকট এক কর্কশ পাখির ডাক
অদূরে গির্জার অন্ধকার দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে থমকে যায়।
ঝাপসা চোখ, দুহাত মেলে দাঁড়িয়ে থাকা যীশু।
ধীর পায়ে এগিয়ে যায় এমিলিয়ার স্বামী।
শিশির ভেজা ঘাসের গালিচায় খসে পড়ে লাঠি,
জাপটে ধরে নিষ্প্রাণ স্থবির যীশুর সুঠাম বক্ষ।
দুঃসহ অভুক্ত ক্লেশের বিনিময় হবে আজ,
যন্ত্রণাক্লিষ্ট প্রাণ আজ পরখ করবে ঈশ্বরের পীড়া।
আত্মস্থ করবে যীশুর সমস্ত ক্ষতের ব্যথা।
ভূমধ্যসাগরের তটে জমা শতাব্দী প্রাচীন অশ্রুধারা নামে
ক্ষুধার্ত বুধুয়ার গাল বেয়ে।
সিক্ত হয় ডুয়ার্সের বন্ধ বাগানের কুলি লাইন।
বুধুয়া অনুভব করে দুটি হাতের স্পর্শ।
ক্রুশের ক্ষত থেকে শোণিত উষ্ণ ধারা নেমে আসে তার পিঠ বেয়ে।
ক্রমশ কোমল হয়ে আসা ভাস্কর্যে অসংখ্য শানিত তীক্ষ্ণ শলাকা।
বুধুয়ার আলিঙ্গন আরও দৃঢ় হয়,
বিদ্ধ হয়ে নিতে চায় যন্ত্রণার শেষ আস্বাদন।
বন্ধ বাগানের বুভুক্ষু শ্রমিকের ভিড়ে হারিয়ে ফেলে নিজেকে।
বহু দূরে কোনো এক আস্তাবলে,
ভোরের প্রথম আলোয় বেথলেহেম শহরকে খুব চেনা লাগে বুধুয়ার।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴