সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
13-August,2023 - Sunday ✍️ By- চন্দন খাঁ 414

বিপন্ন বিস্ময়/চন্দন খাঁ

বিপন্ন বিস্ময়
চন্দন খাঁ
---------------------

শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে নিলেন অমলেন্দু স‍্যার। সহকর্মীরা কেউ কেউ হঠকারী সিন্ধান্তটা নিতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু কতদিন আর নিজের অন্তরাত্মার সঙ্গে যুদ্ধ করা যায়! না শারীরিক বার্ধক‍্য এখনো তাঁর শরীরে বাসা বাঁধেনি। তেষট্টি বছর বয়সেও তিনি তেত্রিশের মতো ফিট। কিন্তু কিছু ঘটনা তিনি একেবারেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁর একক প্রতিবাদকে পাত্তাও দিচ্ছিল না কেউ। দিন দিন বড় একা হয়ে যাচ্ছিলেন। নিজের মনেই মাঝে মাঝে বেসিনের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করতেন বহু পুরানো অথচ চির আধুনিক কবিতার সেই অমোঘ পংক্তি --- " যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা!"

   একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে এবং নাইট সকাল সাড়ে দশটা থেকে রাত আটটা অব্দি ক্লাস নিয়েও ক্লান্ত হতেন না তিনি। ছাত্রছাত্রীরা তাঁর একটি ক্লাস মিস করলে মনে করত অস্কার হাতছাড়া হয়ে গেল। যে উপন‍্যাসটি তিনি ডে তে পড়াতেন, যেমন ' 'চতুরঙ্গ ', সেটির ক্লাস করার জন‍্য নাইটের ছাত্ররা সকাল এগারোটায় এসে আবদার করত --- স‍্যার প্লিস আমরা কজন এই ক্লাসটা করতে চাই। জানি বসবার সিট থাকে না। আমরা শেষের দিকে দাঁড়িয়ে শুনব। আমাদের কোনো অসুবিধা হবেনা। প্লিস স‍্যার। " সেইসব জ্ঞানপিপাসু তরুণ মুখগুলি এখনো স্বপ্নে ও কল্পনায় বারবার  ঘুরেফিরে  আসে --- চোখদুটো অজান্তেই ঝাপসা হয়ে ওঠে --- সেই উজ্জ্বল ছাত্রগুলির সঙ্গে এখনো তাঁর যোগাযোগ আছে। তাঁরা প্রায় সবাই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। একাধিক বার তাঁরা নানা সেমিনারে নিজেরা গাড়ি করে নিয়ে গেছে তাঁকে। তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তিনি কেমন করে ভুলে যাবেন?

    কিন্তু গত কয়েক বছর সামনের তিনটি বেঞ্চেও ছাত্র থাকে না। তিনি কি আগের মতো পড়াতে পারছেন না? একদিন সরাসরি ছাত্রদের জিঞ্জাসা করলেন --- আমার ক্লাস কি তোমাদের ভালো লাগে না? একটি ছাত্র বলল --- আপনার ক্লাস স‍্যার খুবই ভালো লাগে। কিন্তু এম এ পাস করে আর চাকরি হবেনা স‍্যার। দেখছেন তো এক হাজার দিন আমাদের দাদা দিদিরা রাস্তায় পোস্টার নিয়ে বসে আছে --- আর অযোগ্যরা ঘুস দিয়ে ---

একমাস আগের একটি ঘটনা --- এক ছাত্র দুবছর হয়ে গেল তাঁর কাছে পি এইচডি করছে। কিন্তু এখনো পযর্ন্ত বারবার বলা সত্ত্বেও একটি অধ‍্যায়ও লিখে জমা দেয়নি। এজন্য তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে বললেন --- তুমি না পারলে ছেড়ে দাও। অন্য একটি যোগ‍্য গবেষক সুযোগ পাবে। সেই রাতেই প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর ফোন --- আরে মশাই আপনি তো গাইড! ও যখন লিখতে পারছে না তখন আপনি লিখে দিন। বাকিটা না হয় পুষিয়ে দেওেয়া যাবে। রাগে সারারাত ঘুম হল না। পরদিন সেই ছেলেটিকে ডেকে বললেন -- দেখো বাবা আমি পুরনো দিনের অধ্যাপক। আজকের দিনে বাতিল। তুমি অন্য কোনো গাইড দেখে নাও।

সতেরো দিন আগের একটি ঘটনা --- বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন অ‍্যাসিস্ট‍্যান্ট প্রফেসর নেওয়া হবে। ইন্টারভিউয়ে যে দুজন তাঁর একটি প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারেনি, যাদের উপস্থাপনা নানা জড়তায় পূর্ণ  তারাই সিলেক্ট হল। পরে শুনেছেন ইন্টারভিউটা ফর শো, আগে থেকেই সব ঠিক হয়ে ছিল।

একা একা নিজের রুমে বসে তাঁর প্রিয় অধ্যাপকদের কথা মনে পড়ে --- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশী, শঙ্করীপ্রসাদ বসু, অসিতকুমার বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় ---   আর মনে পড়ে জীবনানন্দ ---
"আরো এক বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে --- / আমাদের ক্লান্ত --- ক্লান্ত করে --- "

বাড়ি ফিরে রাতে স্ত্রী সুমিত্রাকে সব বললেন। সুমিত্রা সব শুনে শুধু বললেন -" দেখো আর্থিক অনটন আমাদের নেই। একটি সন্তান। সেও চেন্নাইয়ে ডাক্তারী করছে। কিন্তু তোমার সময় কাটবে কীভাবে?" অমলেন্দুবাবু শান্তস্বরে বললেন - "সেসব পরিকল্পনা করে ফেলেছি - সকালে গঙ্গার পারে হাঁটাহাঁটি, তারপর বাগানের মালী, দুপুরে ছাত্রদের মতো পড়াশোনা ; কত বই এখনো ছোঁয়াই হয়নি - বিকেলে ক্লাস পালানো ছাত্রদের মতো তোমাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাব। আর মাঝে মাঝে বেকার দিনগুলোর মতো আশপাশে আবোলতাবোল ঘুরব! প্ল‍্যানটা কেমন?"
ফাটাফাটি! দুজনেই অনেক দিন পর সেই তরুণ দিনগুলির মতো হো হো করে হেসে উঠল।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri