সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

বিদ্যাসাগর : সম্পূর্ণ মানুষ/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

বিদ্যাসাগর : সম্পূর্ণ মানুষ 
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

বর্ণপরিচয়ের জনক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একজন সম্পূর্ণ মানুষ ছিলেন। তিনি এমনই একজন  মানুষ  ছিলেন  যাঁকে  দু'শ  বছর পরেও অত্যন্ত  শ্রদ্ধার  সাথে  স্মরণ করা হয়।  বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক  রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী বলেছিলেন, " দুরবিন নামক যন্ত্রটিতে দুরের জিনিসকে কাছে এবং বড় দেখায় কিন্তু পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সামনে পৃথিবীর সব মানুষকে ছোট দেখায়।" 

উনবিংশ  শতাব্দীতে  তিনি সমাজ সংস্কারে এমন কিছু  পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, তা আজ দু'শ বছর পরেও ভাবতে গেলে শিউরে উঠতে হয়। তিনি  কুসংস্কার  বিরোধী  এবং  নাস্তিক মনোভাবাপন্ন মানুষ ছিলেন।  একবার ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বিদ্যাসাগরের সাথে সাক্ষাৎ করে  তার অসীম  জ্ঞান  এবং পান্ডিত্য  দেখে    বলেছিলেন, " এতদিন খাল,বিল,নদী,নালা দেখেছি।  এই প্রথম সাগর দর্শন হ'ল।"

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এর সান্নিধ্যে এসে বিদ্যাসাগর মহাশয় এর মনেও ভক্তিভাবের উদয় হয়।  শ্রীরামকৃষ্ণ মা ভবতারিণীর সাক্ষাৎ দর্শন পেয়েছিলেন একথা আজ সকলেই বিশ্বাস করেন। ঈশ্বরচন্দ্র তার বিদ্যায় বুদ্ধিতে,শিক্ষায় এবং বিশ্লেষণে বিধবা বিবাহের ঘোর বিরোধী রাণী রাসমণী কে, বিধবা বিবাহের পক্ষে আনতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি তার  পুত্রকে একজন  বিধবার সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন। 

কৌলিন্য প্রথায় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মানুষেরা দশ বারো বছর বয়সে চার পাঁচটা বিয়ে করতেন। পঞ্চাশোর্ধ ব্যাক্তিরা অগণিত বিয়ে করতেন। যার সংখ্যা তাদেরও মনে থাকত না। ঈশ্বর চন্দ্র এই প্রথা রদ করেছিলেন। 

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রভূত পরিবর্তন সাধন করেছিলেন। আগে কেবলমাত্র বার্ষিক পরীক্ষার প্রচলন ছিল। তিনি সেই পরীক্ষা থেকে পরিবর্তন করে  মাসিক পরীক্ষার প্রচলন করেছিলেন। তার শৈশব অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে কাটলেও তার মাইনের টাকা দিয়ে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বহু মানুষের তিনি অর্থনৈতিক সহায়তা করতেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত দয়ার সাগর। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের দুঃসময়ে তিনি তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

বিদ্যাসাগরের পরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। আজ দু'শ বছর পর আমাদের  সমাজে  এক অদ্ভুত সময় এসেছে,  চারিদিকে শুধুই ইঁদুর দৌড়। এই আঁধার কেন সে প্রশ্ন সবার মনে বিরাজমান  হলেও, সেই দৌড়ানো থেকে আমরা কেউই বাদ নেই। চারিদিকে এক নিদারুণ আত্মপ্রচার এবং  আত্মসচেতনতার এক উল্লম্ফন বহিঃপ্রকাশ।  আমি বৃহৎ, আমি বিরাট, আমি বিপুল. …. সত্যিই কি তাই?  উত্তরটা হল," না"। বিদ্যাসাগরের জীবন থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ পুরনো ইতিহাস এবং গৌরবগাথার অনুভূতির মধ্যেই নবীন অনুভূতিকে খুঁজে নিতে হবে।  এই নতুন অনুভূতি হল আমাদের নিজস্বতা। বিদ্যাসাগরের যাপন থেকে শিখতে হবে  জীবন বোধ। তবেই এই মূল্যবোধহীন সমাজ আবারও তার হারানো সংস্কৃতি ফিরে পেতে সক্ষম হবে। 

তিনি সংস্কৃত এবং বাংলা ব্যাকরণ-এর বই সরলীকরণ করেছিলেন, সেকথা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আজীবন উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।  যতদিন বাংলা সাহিত্য থাকবে, ততদিন তিনি আমাদের মধ্যে  বেঁচে থাকবেন।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri