সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
24-December,2023 - Sunday ✍️ By- অমিতাভ গোস্বামী 272

বিজনে নিজের সঙ্গে নিজে/অমিতাভ গোস্বামী

বিজনে নিজের সঙ্গে নিজে
অমিতাভ গোস্বামী
             
"এমনও তো হয় কোনদিন
            পৃথিবী বান্ধবহীন
    তুমি যাও রেলব্রিজে একা

  ধূসর সন্ধ্যায় নামে ছায়া
             নদীটিও স্থিরকায়া
   বিজনে নিজের সঙ্গে দেখা।"
             
 সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অমোঘ উচ্চারণ। ভারতীয় দর্শনের ও মূল কথা আত্মানাং বিদ্ধি। নিজেকে জানা। যে আমিত্বকে ঘিরে আমাদের এত আয়োজন তাকে জানতে গেলে চিনতে গেলে কোন এক বিজনে নিজের মুখোমুখি দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন।কিন্তু সত্যিই কি আমরা নিজেকে জানতে পারি, নিজেকে বুঝতে পারি? এ এক দুরূহ কাজ। প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ মনে করতেন মানুষকে সত্যিকারের জানা সম্ভব তার স্বপ্ন কে জানার মধ্য দিয়ে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের স্বপ্ন কি স্থিতিশীল ? মানুষ কি চিরদিন একই স্বপ্ন দেখে? সত্যিই এ বড় কঠিন প্রশ্ন। যখন নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি তখন অনুভব করি স্বপ্ন দেখার চোখ এবং হৃদয়াবেগ সময়ান্তরে ক্রমশ পরিবর্তিত হয়।
      মনে পড়ে ছেলেবেলায় বাবার সাথে বাংলাদেশ ভ্রমণের স্মৃতি। শাহজাদপুরের কাছে চলন বিলের উপরে বজরা নৌকায় চলেছি। বর্ষাকাল। বর্ষার চলনবিল সাগর সম। যেদিকে তাকাই জল আর জল। অতি দূর তীরে ছায়াময় গ্রাম নজরে পড়ে। মাঝে মাঝে পাশ দিয়ে ছল ছলাত শব্দ তুলে দু একটি নৌকা যাচ্ছে।মাঝি চাচা গান গাইছিলেন। কি গান সেটা আজ আর মনে নেই। কিন্তু সেই অদ্ভুত ভালো লাগার স্মৃতি আজও উজ্জ্বল। বাবা বলছিলেন এই আমাদের পূর্বপুরুষের ভিটে মাটির দেশ। বিশ্বকবির সোনার বাংলা/ নজরুলের বাংলাদেশ/ জীবনানন্দের রূপসী বাংলা/ রূপের যে তার নাইকো শেষ / বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। সেদিন মনে হয়েছিল- মাঝি চাচা কত সুখী মানুষ! এই পরমা প্রকৃতির মধ্যে তার বসবাস ।যাওয়া আসা। যদি মাঝি চাচা হতে পারতাম!
          
     প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হওয়ার ঠিক পরেই আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র বাবা একদিন আমাকে জলপাইগুড়ি জেলা গ্রন্থাগারের সদস্য করে দিলেন। বিরাট বিশ্ব আমার সামনে উন্মোচিত হয়ে গেল। ভূতের গল্প ,রহস্য রোমাঞ্চ, অভিযানের গল্প ,ইতিহাস আশ্রয়ী গল্প, দেশ বিদেশের গল্পের অনুবাদ যা পাচ্ছি সব গোগ্রাসে গিলছি। একেকটা বই দুদিনে শেষ করে আবার বই আনতে যেতাম। অবাক বিস্ময়ে লাইব্রেরিয়ান কাকুকে দেখতাম আর ভাবতাম যে ঐ বিপুল বই এর সাম্রাজ্যের অধীশ্বর তিনি। যখন যে বই ইচ্ছে সেটাই তিনি পড়তে পারেন। উনি কি সুখী মানুষ!ভাবতাম বড় হয়ে লাইব্রেরিয়ান কাকু হব।
            আমার বাবা ছিলেন শিক্ষক। তাই শিক্ষকদের বরাবরই বাড়তি সমীহ করতাম। বাবা ছিলেন আমার কাছে এক বিপুল তথ্য ভান্ডার। যখন যে প্রশ্নের উত্তর চাই বাবাকে জিজ্ঞেস করতাম। বাবা অংকের শিক্ষক হলেও ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃত, বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস সমস্ত বিষয়েই তাঁর অদ্ভুত জ্ঞান ছিল। তিনিই ছিলেন আমার কাছে সিধু জ্যাঠা। ভাবতাম শিক্ষকরা বুঝি এমনই হয়! মনে মনে খুব ইচ্ছে হতো বড় হয়ে শিক্ষক হব।
       যৌবনের একটা বিরাট অংশ জুড়ে ছিল দিন বদলের স্বপ্ন। শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন। যে সমাজ নিরন্ন মানুষের কান্নার দাগ মুছে দেবে। আজও যখন আমার দেশে ক্ষুধা ,দারিদ্র্য, যন্ত্রণার হাহাকার শুনি, দেখি মানুষের দ্বারা মানুষের নিপীড়ন, মনুষ্যত্বের অবমাননা তখন মনের অন্দরমহলে উঁকি মারে সেই স্বপ্ন। পরান মাঝি হাঁক দেয়।মনে মনে বলি 'একটু পা চালিয়ে ভাই।'
              বাস্তবের কঠোর ও কঠিন মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামের মধ্যে সংসারের আবর্তে আমাদের অনেক স্বপ্নই হারিয়ে যায় মনের অন্তরালে । মানুষের মন বড়ই বিচিত্র এবং জটিল। কোন নির্দিষ্ট গণ্ডিতে তাকে আবদ্ধ করা যায় না। এ যেন এক হিমশৈল যার মাত্র পাঁচ ভাগ দৃশ্যমান বাকি পঁচানব্বই ভাগই অদৃশ্য।সর্বদাই আমাদের মনের মধ্যে খেলা করে 'যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না।'এতই বিচিত্র মনের গতিবিধি যে-'সে যখন জলে থাকে তখন স্থলের জন্য লালায়িত হয়, যখন স্থলে থাকে তখন জলে সাঁতার দেবার জন্য তার অসীম আকাঙ্খার উদ্রেক হয়।'
             
       তথাপি 'এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা সত্য ; তবু শেষ সত্য নয়'। এক বিপন্ন বিস্ময় আমাদের রক্তের ভেতরে খেলা করে। তাই কোন এক উদাসী বিকেলে বা ধূসর সন্ধ্যায় বা বর্ষণ সিক্ত রাতে নিজের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে যায়। হারানো প্রেমে মন ব্যাকুল হয়ে গেয়ে ওঠে 'কতদিন দেখিনি তোমায় তবু মনে পড়ে তব মুখখানি'! ফেলে আসা দিনের স্মৃতি মনকে ভারাক্রান্ত করে। মনে হয় 'কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই- আজ আর নেই'।এক অদ্ভুত স্মৃতি কাতরতা গ্রাস করে। ভাবি 'পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন'। না পাওয়ার ব্যথা, এক স্বপ্ন ভাঙা শোক হৃদয় রক্তাক্ত করে। গোপন দহনের তীব্র আগুনে প্রতিদিন নিঃশব্দে দগ্ধ হতে হতে নির্জনে তিস্তা পারে বসে পড়ন্ত বিকেলে উচ্চারণ করি-
 
"ইস্টিশানে অতি ক্ষীণ আলো
         তাও কে বেসেছে ভালো
         এত প্রিয় এখন দ্যুলোক 

     হে মানুষ, বিস্মৃত নিমেষে
              তুমিও বলেছ হেসে
  বেঁচে থাকা স্বপ্নভাঙা শোক!"

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri