বাসন্তিক চিঠি
বাসন্তিক চিঠি
সুমনা ঘোষ দস্তিদার
--------------------------
শোনো,
আর কবে বুঝবে? সত্যিই কি বোঝো না তুমি? স্কুলে যাবার পথের ধারে ওই যে কেটে নেওয়া ধানের,কেবল মাত্র শুকনো গোড়াটুকু পড়ে রয়েছে যেখানে, তার গা লাগোয়া যে মাঠ, ডাইনে জল শূন্য কাদার মাখা বিল, সেখানে শত শত পরিযায়ী পাখি ভিড় জমিয়েছে। সারা দিন কত কথা ওদের, কত আদর, ডানায় ডানা ছুঁয়ে রোদ মেখে ওড়াউড়ি। আমি ভাবতে থাকি, তুমি উঁচু গলায় আমায় ডাক নামে ডাকছো। আকাশে আঙুল তুলে দেখাচ্ছ তাদের উড়ে চলা। এতটাই কাছে দাঁড়িয়েছ, তোমার শরীরে ঢেলে দেওয়া সুগন্ধি আমার শ্বাস ভরিয়ে তুলছে। কিন্তু ডাকলে না তুমি...
আমার জানলা দিয়ে যে পদ্মপুকুর দেখা যায়, সেখানে এখন গোল গোল সবুজ পাতাকে ঠেলে শালুকেরা মাথা তুলেছে। সেবার লিখেছিলে, আমি যেদিন খোলা চুলে বাসন্তী রঙা শাড়ি পরবো, গুঁড়ো টিপ থাকবে কপালে, সেদিন তুমি শালুক তুলে দেবে আমায়। ফুলের নিচে লম্বা ডাঁট তোমার পাঞ্জাবি ছুঁয়ে দুলছে, বুকের কাছে গোছ করে ধরা শিশির ধোয়া শালুক। তুমি এক পা, দু পা করে এগিয়ে আসবে, আমি দূর থেকে তোমার পা ফেলা গুনতে থাকব, আর কতবার পা ফেললেই আমি ছুঁয়ে ফেলতে পারি তোমায়! প্রতিদিন কত শালুক ফুটছে তবু তুমি তো এলে না?
তুমি দেখোনি, ক্ষেতের পর ক্ষেত সর্ষা ফুলে কেমন ঢেউ তুলেছে? মাটি সব ঢেকে গেছে হলুদ রঙে রঙে । মিষ্টি গন্ধ হাওয়ায় ভাসছে। তুমি দেখেছিলে, কাল ভোরে কী ভীষণ কুয়াশায় ঝাপ্সা ছিল চতুর্দিক? সব গাছ কুয়াশা মেখেছিল আদরের মতো। নুয়ে পড়েছিল সোহাগ ভারে। রাতভর সে আদরের টুপটুপ মিষ্টি আওয়াজ শুনছিলাম। কত শুকনো পাতা ঝরে বিবর্ন হচ্ছে দিনে দিনে। আমি প্রতিক্ষণে কান পেতে রয়েছি, পায়ের ভারে সে পাতা ভাঙার আওয়াজ শুনব বলে। তুমি আসনি। আজও এলে না তুমি!
আমি সেদিনও মুঠোভরে রঙ নিয়ে অপেক্ষায় থাকবো তোমার। সাক্ষী থাকবে বসন্তচাঁদ, দেখব, সে ভরা চাঁদের রাতেও কীভাবে এড়িয়ে যেতে পারো আমায়।
- আমি
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴