সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
11-August,2024 - Sunday ✍️ By- গৌতম চক্রবর্তী 309

বাঘ প্রজননের সফল রূপায়ন বেঙ্গল সাফারিতে (প্রথম পর্ব)/গৌতম চক্রবর্তী

বাঘ প্রজননের সফল রূপায়ন বেঙ্গল সাফারিতে (প্রথম পর্ব)
গৌতম চক্রবর্তী

এক আলাদা টান অনুভব করি মহানন্দা অভয়ারণ্যের প্রতি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়ের দশকের প্রথম লগ্নে পড়ার সময়কাল থেকে। কত স্মৃতি জড়ানো অভয়ারণ্যের কোণে কোণে। বেঙ্গল সাফারির সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। আমার প্রথম কর্মজীবন চম্পাসারিতে ‘দৈনিক বসুমতী’ পত্রিকার সাব এডিটর হিসাবে বেঙ্গল সাফারির জন্ম এবং কর্ম দেখেছি। প্রথম চোদ্দ বছর শ্রীগুরু বিদ্যামন্দিরের শিক্ষকতা জীবনও মহানন্দা অভয়ারণ্যের কোলে চম্পাসারিতে। সুকনা, দাগাপুর, রঙটং, মোহরগাঁও গুলমা, শিমুলবাড়ি, রোহিণীকে ঘিরে কত সফর। নস্টালজিক হয়ে যাই। আজকে বেঙ্গল সাফারির প্রথম পর্বে বাঘ প্রজনের সফল রূপায়ন নিয়ে কলম ধরলাম। অবশেষে ২০১৬ সালের ২১ শে জানুয়ারি শিলিগুড়ির অদূরে এই সেবক রোডের পাঁচমাইলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে চালু হয় এই বেঙ্গল সাফারি পার্ক। মোট ২৯৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে চালু হয় মূল প্রকল্পের বেঙ্গল সাফারি পার্ক। ধীরে ধীরে বেঙ্গল সাফারি পার্ক গড়ে উঠলে এরপর একে একে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, পাখি, ঘড়িয়াল, চিতাবাঘ, হাতি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, গন্ডার, কুমির, রেড জাঙ্গল ফাউল, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার সহ একাধিক বন্যপ্রাণী নিয়ে আসা হয় পার্কে। ধাপে ধাপে এনক্লোজার তৈরি করে এই প্রাণীগুলিকে নিজ নিজ এনক্লোজারে ছাড়া হয়। এরপর শুরু হয় সাফারি। প্রথম তিন বছর লোকসানে চলার পর বেঙ্গল সাফারি লাভ করতে শুরু করে। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে প্রায় দেড় কোটি টাকা করে ক্ষতি হয়। অর্থাৎ সরকারকে বছরে দেড় কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিতে হয়। ২০১৮ সালে আয় এবং ব্যয় ছিল সমান সমান। ২০১৯ সালে আর্থিক বছরের প্রথম চার মাস অর্থাৎ গ্রীষ্মকালীন মরসুমে রেকর্ড টিকিট বিক্রি করে বেঙ্গল সাফারি। এই চার মাসে বেঙ্গল সাফারিতে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার ব্যবসা হয়। দর্শকের সংখ্যা বাড়তে থাকার ফলে বেঙ্গল সাফারিকে ঘিরে আরও বেশকিছু নতুন ভাবনাচিন্তা শুরু করে সাফারি কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকার।

২০১৬ সালে বেঙ্গল সাফারিতে যখন চালু হল টাইগার সাফারি সেইসময় নন্দনকানন থেকে কলকাতা চিড়িয়াখানা হয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার শীলা এবং স্নেহাশীসকে আনা হল বেঙ্গল সাফারিতে। টাইগার সাফারিতে দেখা যেত পুরুষ বাঘ স্নেহাশীষ এবং স্ত্রী বাঘ শীলাকে। শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারিতে শীলা এবং স্নেহাশীষকে নিয়ে আসার কিছুদিন পরে পার্কের স্বাভাবিক পরিবেশে এদের সফল প্রজননে ২০১৮ সালের ১১ ই মে বেঙ্গল সাফারিতে জন্ম নেয় তিনটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শীলা জন্ম দিয়েছিল তিনটি সন্তানের যার মধ্যে একটি সাদা বাঘও ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনজনের নাম রাখেন রিকা কিকা এবং ইকা। তিন সন্তানের একটা ছিল অ্যালবিনো। জন্মের কিছুদিন পরেই ফুসফুসের সংক্রমণে মৃত্যু হয় সবচেয়ে ছোট ইকার। এরপর থেকে কড়া নজরদারিতে রেখে শীলার বাকি দুই সন্তানকে বড় করে তোলা হয়। একটি মারা গেলেও শীলা এবং স্নেহাশীসের দুই সন্তান সুস্থ এবং সফলভাবেই বেঙ্গল সাফারিতে বড় হতে থাকে। এই সাফল্যের পরেই বেঙ্গল সাফারিতে প্রজনন কেন্দ্র তৈরি করার ভাবনা আসে রাজ্য সরকারের। বেঙ্গল সাফারির তৎকালীন ডিরেক্টর ধর্মদেও রাই এর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে পাঁচ একর জায়গা নির্ধারণ করে ব্রিডিং সেন্টার তৈরীর অনুমতি চেয়ে সেন্ট্রাল জু অথরিটির কাছে আবেদন করা হয়। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে সেন্ট্রাল জু অথরিটি ব্রিডিং সেন্টার তৈরীর জন্য অনুমতি প্রদান করে। রাজ্য সরকারও আর্থিক বরাদ্দ করলে কাজ শুরু হয়। শুরু হল ব্যাঘ্র প্রজননের পরীক্ষানিরীক্ষা। বেঙ্গল সাফারিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ব্রিডিং সেন্টার বা প্রজনন কেন্দ্র তৈরির জন্য সেন্ট্রাল জু অথরিটির অনুমোদন পাওয়ার পর বেঙ্গল সাফারির পেছনেই ৫ একর জায়গায় তৈরি হতে শুরু করে টাইগার ব্রিডিং সেন্টার। আর্থিক বরাদ্দ পাবার পর কাজ শুরু হয়। স্বাভাবিক জঙ্গলের পরিবেশে তৈরি হয় বাঘের প্রজনন কেন্দ্র।

শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে বেঙ্গল সাফারি পার্কের পেছনদিকে গভীর জঙ্গলে ঘেরা অংশে স্থায়ী বাঘ প্রজনন কেন্দ্র তৈরীর অনুমতি দেয় সেন্ট্রাল জু অথরিটি। অনুমোদন মেলার পরে রাজ্যের বনদপ্তর প্রায় এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই কেন্দ্রের পরিকাঠামো তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু করে। অভয়ারণ্যের প্রায় সাড়ে চার হেক্টর জঙ্গল এলাকা তারজালি এবং কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়। এই এলাকার মধ্যে আলাদা করে বাঘেদের নাইট শেল্টার তৈরি হয়। চিকিৎসার জন্য অথবা গর্ভধারণের পরে প্রসব এবং শাবকদের বড় হওয়ার জন্য কমবেশি চারটে শেল্টার আস্তানা তৈরির পরিকল্পনা গৃহীত হয়। বেঙ্গল সাফারি পার্কের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা নতুন প্রজনন কেন্দ্রের পরিকাঠামো তৈরীর কাজ দেখভাল করতে শুরু করেন। প্রজনন কেন্দ্রের নথিপত্রে শুধুমাত্র বাঘের উল্লেখ করা হয়। মূলত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রটি করা হলেও প্রয়োজনে চিতাবাঘ প্রজননের জন্য ব্যবহার করার সুযোগও রাখার পরিকল্পনা করা হয়। কাজ শেষ হলেই সেন্ট্রাল জু অথরিটিকে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়। সেন্ট্রাল জু অথরিটি পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে বাঘ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর অনুমোদন দিলে সেইসময় ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের টাটা স্টিল জুলজিক্যাল পার্ক থেকে সাফারি পার্কে নিয়ে আসা হয় পুরুষ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিভানকে প্রজননের জন্য। এদের ছাড়াও বাইরে থেকে বাঘ এনে প্রজননের কাজ চলবে বলে বনদপ্তর আধিকারিকরা পরিকল্পনা করেন। আড়াই বছরের স্নেহাশীষকে ক্যাপটিভ ব্রিডিং এর জন্য কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়। সাফারি পার্কে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সাফারিতে বাঘ ছিল চারটা। তারমধ্যে রিকা এবং কিকার বয়স তখন ছিল মাত্র দেড় বছর। ২০১৯ সালে বিভান এবং শীলাকে নাইট শেল্টারে রেখে নতুন প্রজন্মের শাবককে বাইরে ছাড়া হয়। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এনক্লোজারে ছাড়া হয় বিভান এবং শীলাকে। 

এরপর থেকেই শীলা এবং বিভানের মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়ানোর জন্য একাধিক প্রচেষ্টা করে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়ার ফলে তাদেরকে একসঙ্গে সাফারিতে ছাড়া হয়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে। এদের ছাড়াও বাইরে থেকে বাঘ এনে প্রজননের কাজ চলবে বলে বনদপ্তর আধিকারিকরা পরিকল্পনা করেন। এরপর থেকে বেঙ্গল সাফারিতে শীলার বাকি দুই সন্তান এনক্লোজারে  থাকতে শুরু করে। এরই মাঝে বেশ কয়েকবার এই দুই ব্যাঘ্রশাবককে জনসমক্ষে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দুজনের নিরাপত্তা এবং শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। দুজনে আদৌ এনক্লোজারে ঠিকমতো থাকতে পারবে কিনা অথবা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বিভানের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে কিনা সেসব বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য দুজনকে বেশ কয়েকবার এনক্লোজারে ছেড়ে নজর রাখা হয়। দুজনের স্বভাবে সন্তুষ্ট হয় তাদেরকে জনসমক্ষে আনার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ এবং ইতিমধ্যেই ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটির পক্ষ থেকেও সবুজ সংকেত মিলে যায়। শীলা, বিভান, রিকা এবং কিকা চারটে বাঘকে একসঙ্গে এনক্লোজারে রাখার পরিকল্পনা করে কর্তৃপক্ষ। এনক্লোজারের ভেতরে দুটো বাড়তি নজরদারি ভ্যান রাখা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিকল্পনা হয় বেঙ্গল সাফারি পার্কে রয়েল বেঙ্গল বাঘ বিভান এবং শিলার প্রজননের জন্য প্রায় পাঁচ একর এলাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে ক্যাপটিভ ব্রিডিং এর জন্য। এরপর শীলা এবং বিভানের মধ্যে সম্পর্ক আরো নিবিড় হয়। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে শীলা। দ্বিতীয়বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকেই সাফারি পার্কে তৎপরতা বেড়ে যায়। কোনভাবে যাতে পার্কে সংক্রমণ না হয় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অবশেষে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে ভোর পৌনে ৫টা থেকে ৭টা ২০ মিনিটের মধ্যে তিনটি সুস্থ সন্তানের জন্ম দেয় শীলা। খেলার নতুন সঙ্গী পায় খুদে দুই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কিকা, রিকা।

২০১৭ সালে ভয়ংকর করোনাকালে প্রথম দফার করোনার দাপটে সারা রাজ্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লে দেশব্যাপী লক ডাউন শুরু হলে দেশের সমস্ত চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় জু অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। রাজ্য বনদপ্তর এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি পার্কও প্রায় তিন মাস ধরে সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বন্ধ ছিল না রয়্যাল বেঙ্গলের প্রেমপর্ব। আর তার ফলেই করোনা পরিস্থিতে শীলা এবং বিভানের সফল প্রজননে ভোরের আলো ফোটার আগেই বেঙ্গল সাফারিতে তিনটি ফুটফুটে শাবকের জন্ম হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে শালুগাড়ার সাফারি পার্ক বন্ধ থাকলেও নতুন অতিথিদের ভূমিষ্ঠ হওয়ায় খবর সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কনজারভেটর অব ফরেস্ট তথা বেঙ্গল সাফারির ডিরেক্টর ধর্মদেও রাই জানান, শীলা তিনটি সুস্থ শাবকের জন্ম দিয়েছে। শাবক তিনটি তাদের মায়ের দুধ পান করেছে। ফলে সবমিলিয়ে বেঙ্গল সাফারি পার্কে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা বেড়ে হল সাতটি। জানানো হয় এরা প্রত্যেকেই হলুদ কালো ডোরাকাটা। আগামী কয়েকমাস এদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তারপর কিকা, রিকার মত এদেরকেও ভিজিটরদের সামনে হাজির করা হবে। বেঙ্গল সাফারি পার্কে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্ম হবার ফলে খুশির হাওয়া ছিল সাফারি পার্কে। সাফারি পার্কে একের পর এক সফল প্রজননের ফলে খুশির হাওয়া ছিল রাজ্য বনদপ্তরেও। করোনা পরিস্থিতিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সফল প্রজনন এবং তিনটি সুস্থ শাবকের জন্ম আনন্দের খবর। এই আনন্দের খবর সংগ্রহ করতে এবং করোনার সময়কালে কেমন আছে বেঙ্গল সাফারির ব্যাঘ্রকুল জানতে পাড়ি দিয়েছিলাম বেঙ্গল সাফারি। করোনা ভাইরাস এর কারণে সাধারণের জন্য সেই সময় বন্ধ ছিল সাফারি পার্ক। বিশেষ অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করেছিলাম পার্কে লেখার রসদ সংগ্রহের জন্য। এর আগেও শীলা তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছে। সেই সময় একটি সন্তানকে অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি। তাই সেবারে শাবকদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছিল।

দ্বিতীয়বার প্রসবের পর থেকে শীলা সন্তানদের নিয়ে একাই ছিল। যতদিন শাবকরা মায়ের দুধ খাচ্ছিল ততদিন তাদের শীলার সঙ্গেই রাখা হচ্ছিল। সেখানে পার্কের কোনও কর্মী বা চিকিৎসকও যাচ্ছিলেন না। কারণ একবার মানুষের ছোঁয়া লেগে গেলে বাঘিনী সন্তানদের অস্বীকার করতে পারে। সেই সময়ে শীলা তাদের শিকার করা শেখাতে ব্যস্ত ছিল। একদিন মায়ের মুখে করে অন্যত্র যাওয়ার সময় চোট পায় দুটি শাবক। ঘাড়ের কাছে লোম ও মাংস উঠে ক্ষত তৈরি হয়। বিষয়টি লক্ষ্য করেই পার্ক কর্তৃপক্ষ অ্যান্টিবায়োটিক স্প্রে করে। এরপর টাইগার স্টুল হাতে মেখে সাফারির চিকিৎসকরা তাদের ক্ষত পরিচর্যা করে। ক্ষত ভরে উঠলেও ওই জায়গায় লোম গজাতে সময় লাগে। অন্যদিকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুষ্টুমিও বাড়তে থাকে শাবকগুলির। খেলার সময়েও শাবকরা একে অপরকে কামড়ে আঁচড়ে দিচ্ছিল বা থাবা দিচ্ছিল বলে এতে অনেক সময়ই তারা আহত হচ্ছিল। ক্ষত তৈরি হচ্ছিল তিন রয়্যাল খুদের শরীরে। এই পরিস্থিতিতে শাবকদের অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যেহেতু শাবকরা মায়ের দুধ খাচ্ছিল তাই তাদের মায়ের কাছ থেকে সরানো হচ্ছিল না। মায়ের কাছে থাকলেও যাতে তারা আহত না হয় সেজন্যে খেলার সামগ্রীর ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। কাঠের বল থেকে শুরু করে দড়ির দোলনা সহ একাধিক খেলার সামগ্রী শাবকদের দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে তিন শাবককে দেখতে পায় পার্কে আসা দর্শক ও পর্যটকেরা। সাফারির খোলা জঙ্গল ছাড়া ঘেরাটোপেও ওদের দস্যিপনা দেখার সুযোগ মেলে। জন্মের পর থেকে মা শীলার সঙ্গেই ছিল তিন শাবক। কয়েকজন আধিকারিক ছাড়া পার্কে অন্য বনকর্মীদেরও শাবকদের কাছে যেতে দেওয়া হত না। ঘেরাটোপেই দিনভর ছুটোছুটি, লাফালাফি করে দিন কাটছিল। তিন শাবক যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠে। পাঁচ মাস বয়সেই পাঁচিলে পা রেখে তারের মধ্যে দিয়ে উকিঝুঁকি মারা শুরু করে দিয়েছিল শাবকগুলি। 

শীলার তিন সন্তান দুষ্টুমিতে নাজেহাল করে দেয় পার্কের সকলকে। পার্কের কর্তারা বুঝে গিয়েছিলেন যে তিন খুদেকে আর বেশিদিন আটকে রাখা যাবে না। তাই তিন রয়্যাল বেঙ্গল শাবককে মায়ের কোল ছেড়ে খোলা জঙ্গলে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয় পর্যটকদের সঙ্গে পরিচিতি বাড়াতে। আগে একদিন তিন খুদেকে টাইগার সাফারির খোলা জঙ্গলে ছাড়া হয়। তাদের প্রতি নজর রেখেছিলেন বনকর্মীরা। দেখা যায় সেখানে ছুটোছুটি করে রীতিমতো হাঁপিয়ে ওঠে ওরা। ফলে খোলা জঙ্গলে ছাড়া হবে কিনা তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত নির্দিষ্ট ঘেরাটোপে পর্যটকেরা ওদের দেখতে পাচ্ছিলেন। বনদপ্তরের লক্ষ্য ছিল তিনজনকে মানুষের সঙ্গে পরিচিত করানো এবং পাশাপাশি ওদের সাফারির জঙ্গলে থাকার অভ্যাস করানো। অগস্টে তিন শাবকের জন্ম হলেও তখনও নামকরণ হয়নি। এর আগে শীলার আগের তিন শাবক ইকা, কিকা, রিকার নামকরণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে ইকা পায়ে সংক্রমণে মারা যায়। ২০১৬ সালের ২১ শে জানুয়ারি শিলিগুড়ির অদূরে সেবক রোডের পাঁচমাইলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে চালু হয় বেঙ্গল সাফারি পার্ক। মোট ২৯৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে চালু হয় মূল প্রকল্প। বেঙ্গল সাফারি পার্ক গড়ে উঠলে এরপর একে একে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, পাখি, ঘড়িয়াল, চিতাবাঘ, হাতি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, গন্ডার, কুমির, রেড জাঙ্গল ফাউল, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার সহ একাধিক বন্যপ্রাণী নিয়ে আসা হয় পার্কে। ধাপে ধাপে এনক্লোজার তৈরি করে এই প্রাণীগুলিকে নিজ নিজ এনক্লোজারে ছাড়া হয়। এরপর শুরু হয় সাফারি। শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে ওয়েস্টবেঙ্গল জু অথরিটির আধিকারিকদের উপস্থিতিতে সাফারি পার্কে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের সমীক্ষা চলছিল দেখে এসেছিলাম। এই সমীক্ষার পরই আরও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী আনার পাশাপাশি পার্কের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কিছু কাজও করা হবে বলে শুনেছিলাম। সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর কী কী বন্যপ্রাণী আনা হবে তা ঠিক করা হবে। শুনেছিলাম আগামীতে অতিথিও বাড়বে বেঙ্গল সাফারিতে। দ্বিতীয় ধাপের সমীক্ষার পর সাফারি পার্কে আরও বেশ কিছু নতুন প্রজাতির পাখি, পশু আনার কথা রয়েছে। পরিকল্পিত আকারে সেজে উঠুক উত্তরের গর্ব বেঙ্গল সাফারি।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri