সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
23-April,2023 - Sunday ✍️ By- গৌতম চক্রবর্তী 332

বাঘ এবং ভালুক প্রজননের সফল রূপায়ন বেঙ্গল সাফারিতে/গৌতম চক্রবর্তী

বাঘ এবং ভালুক প্রজননের সফল রূপায়ন বেঙ্গল সাফারিতে
গৌতম চক্রবর্তী
-----------------------------------------------------------

এপ্রিল মাসের ‘সহজ উঠোনে’র বিষয় ছিল আমার অতি প্রিয় ‘উত্তরের জঙ্গল’। তাই সাপ্তাহিক লেখাতে বেছে নিয়েছিলাম উত্তরের তিনটে অভয়ারণ্যের তিনটি বন্যপ্রাণের প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, আচার-আচরণ, ত্রিকোণ প্রেম, মিলনান্তক এবং বিয়োগাত্মক কাহিনী। বক্সা-চাপরামারি-গরুমারার হাতি, জলদাপাড়ার গন্ডার, নেওড়াভ্যালির ভালুককে নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে লিখে ফেললাম বিভিন্ন গল্প নামক সত্যঘটনা যা চলচ্চিত্রে রূপায়িত হলে উপযুক্ত হাতে যদি চিত্রনাট্য রচিত হয় তাহলে প্রচুর বিনোদনের খোরাক দেবে। আজকের বিষয়ের লোকেশন মহানন্দা অভয়ারণ্যের বেঙ্গল সাফারি এবং আজকের গল্প খুব কাছ থেকে দেখা এবং শোনা রয়েল বেঙ্গলের গল্প যার নায়ক স্নেহাশিস এবং নায়িকা শীলা এবং উদীয়মান নায়ক বিভান। এদের সংসারেও আছে ত্রিকোণ প্রেম, ভাব ভালোবাসা, দাম্পত্য, ভালোলাগা, খারাপলাগা, খুনসুটি, রাগ, অভিমান। পাশাপাশি শোনাবো রিকা, কিকা, ইকার গল্প। আর শোনাবো হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার ধ্রুব এবং ফুরবুর সফল প্রজননের গল্প। লেখাটা যখন তৈরি করছি সেই সময়তেই খবর পেলাম ভালুকের সফল ক্যাপটিভ ব্রিডিং হয়েছে বেঙ্গল সাফারিতে। প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই বেঙ্গল সাফারির ডিরেক্টর কমল সরকারকে খবরটি শেয়ার করার জন্য। পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা জানাই তৎকালীন ডিরেক্টর ধর্মদেও রাইকে যিনি করোনার সময়কালেও বেঙ্গল সাফারিকে নিয়ে প্রচুর পরিকল্পনা করেছিলেন এবং দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে আমাকে সমৃদ্ধ করেছিলেন এবং আমাকে লেখার অনুমতি দিয়ে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছিলেন। সাফারির ডিরেক্টর দাওয়া সাঙ্গু শেরপাকেও ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই শিক্ষিকা সোনিকা শর্মাকে যিনি বেঙ্গল সাফারির কিকা নামে সাদা বাঘকে দত্তক নিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানাই সাফারি পার্কের ডিরেক্টর বাদল দেবনাথকে। আসলে বেঙ্গল সাফারির সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। এক আলাদা টান অনুভব করি মহানন্দা অভয়ারণ্যের প্রতি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়ের দশকের প্রথম লগ্নে পড়ার সময়কাল থেকে। কত স্মৃতি জড়ানো অভয়ারণ্যের কোণে কোণে। 

আমার প্রথম কর্মজীবন চম্পাসারিতে ‘দৈনিক বসুমতী’ পত্রিকার সাব এডিটর হিসাবে বেঙ্গল সাফারির জন্ম এবং কর্ম দেখেছি কতবার। প্রথম চোদ্দ বছরের শিক্ষকতা জীবনও মহানন্দা অভয়ারণ্যের কোলে চম্পাসারিতে। সুকনা, দাগাপুর, রঙটং, মোহরগাঁও গুলমা, শিমুলবাড়ি, রোহিণীকে ঘিরে কত সফর। নস্টালজিক হয়ে যাই। এই লেখাটা যখন লিখছি তখন বেঙ্গল সাফারিতে হিমালয়ান ব্ল্যাকবিয়ারের  সফল প্রজননের ফলে এসেছে নয়া অতিথি। বছর পাঁচেক আগে দার্জিলিং চিড়িয়াখানা সংলগ্ন এলাকা থেকে হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার ধ্রুবকে উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে সিকিম এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ফুরবুকে। এরপর দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় কিছুদিন রাখা হয়েছিল ওই দুজনকে। সেখান থেকে দুজনকে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে পাঠানো হয়। সঙ্গে জেনিফার নামে আরও একটি ভালুককেও পাঠানো হয় শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি পার্কে। যে সময় ধ্রুব এবং ফুরবুকে উদ্ধার করা হয়েছিল সেই সময়ে তাদের বয়স ছিল ১১ এবং ১৩ বছর। সাফারি পার্কে আনার পর এখানকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তাদের কিছু দিন সময় লেগে যায়। ২০১৯ সাল থেকেই দুজনের মধ্যে সখ্যতা তৈরি করতে তৎপর হয় সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ধ্রুব এবং ফুরবুর মধ্যে মিলনের পর অগাস্টের মাঝামাঝি গর্ভবতী হয় ফুরবু। ছয় মাসের গর্ভাবস্থা পার হবার পর গত ২৭ শে মার্চ সন্ধ্যায় সাফারি পার্কের শেল্টারে সন্তানের জন্ম দেয় ফুরবু। গত ১০ বছরে এরাজ্যে হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ারের ক্যাপটিভ বৃডিং হয়নি বলেই দাবি করেছেন সাফারি পার্কের কর্তারা। সিডিউল তালিকায় ভালনারেবল হিসাবে চিহ্নিত হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার। বাঘের পর ভালুকের ক্যাপটিভ বৃডিং সফল হওয়ার ফলে সাফারি পার্কে স্হায়ী প্রজনন কেন্দ্র চালু করার দাবি উঠেছে। সাফারি পার্কের কর্তারা এই স্বীকৃতির জন্য জোরদার তদবির করছেন রাজ্যের মাধ্যমে।

আসলে লিখতে বসেছিলাম বেঙ্গল সাফারির সফল ব্যাঘ্র প্রজনন নিয়ে। কিন্তু ব্যাঘ্র প্রজনের পাশাপাশি হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ারের সফল প্রজননও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ সালে বেঙ্গল সাফারিতে যখন চালু হল টাইগার সাফারি সেইসময় নন্দনকানন থেকে কলকাতা চিড়িয়াখানা হয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার শীলা এবং স্নেহাশীসকে আনা হল বেঙ্গল সাফারিতে। টাইগার সাফারিতে দেখা যেত পুরুষ বাঘ স্নেহাশীষ এবং স্ত্রী বাঘ শীলাকে। শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারিতে শীলা এবং স্নেহাশীষকে নিয়ে আসার কিছুদিন পরে পার্কের স্বাভাবিক পরিবেশে এদের সফল প্রজননে ২০১৮ সালের ১১ ই মে বেঙ্গল সাফারিতে জন্ম নেয় তিনটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শীলা জন্ম দিয়েছিল তিনটি সন্তানের যার মধ্যে একটি সাদা বাঘও ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনজনের নাম রাখেন রিকা কিকা এবং ইকা। তিন সন্তানের একটা ছিল অ্যালবিনো। জন্মের কিছুদিন পরেই ফুসফুসের সংক্রমণে মৃত্যু হয় সবচেয়ে ছোট ইকার। এরপর থেকে কড়া নজরদারিতে রেখে শীলার বাকি দুই সন্তানকে বড় করে তোলা হয়। একটি মারা গেলেও শীলা এবং স্নেহাশীসের দুই সন্তান সুস্থ এবং সফলভাবেই বেঙ্গল সাফারিতে বড় হতে থাকে। এই সাফল্যের পরেই বেঙ্গল সাফারিতে প্রজনন কেন্দ্র তৈরি করার ভাবনা আসে রাজ্য সরকারের। বেঙ্গল সাফারির তৎকালীন ডিরেক্টর ধর্মদেও রাই এর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে পাঁচ একর জায়গা নির্ধারণ করে ব্রিডিং সেন্টার তৈরীর অনুমতি চেয়ে সেন্ট্রাল জু অথরিটির কাছে আবেদন করা হয়। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে সেন্ট্রাল জু অথরিটি ব্রিডিং সেন্টার তৈরীর জন্য অনুমতি প্রদান করে। রাজ্য সরকারও আর্থিক বরাদ্দ করলে কাজ শুরু হয়। শুরু হল ব্যাঘ্র প্রজননের পরীক্ষানিরীক্ষা। বেঙ্গল সাফারিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ব্রিডিং সেন্টার বা প্রজনন কেন্দ্র তৈরির জন্য সেন্ট্রাল জু অথরিটির অনুমোদন পাওয়ার পর বেঙ্গল সাফারির পেছনেই ৫ একর জায়গায় তৈরি হতে শুরু করে টাইগার ব্রিডিং সেন্টার। আর্থিক বরাদ্দ পাবার পর কাজ শুরু হয়। 

স্বাভাবিক জঙ্গলের পরিবেশে তৈরি হয় বাঘের প্রজনন কেন্দ্র। শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে বেঙ্গল সাফারি পার্কের পেছনদিকে গভীর জঙ্গলে ঘেরা অংশে স্থায়ী বাঘ প্রজনন কেন্দ্র তৈরীর অনুমতি দেয় সেন্ট্রাল জু অথরিটি। অনুমোদন মেলার পরে রাজ্যের বনদপ্তর প্রায় এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই কেন্দ্রের পরিকাঠামো তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু করে। অভয়ারণ্যের প্রায় সাড়ে চার হেক্টর জঙ্গল এলাকা তারজালি এবং কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়। এই এলাকার মধ্যে আলাদা করে বাঘেদের নাইট শেল্টার তৈরি হয়। চিকিৎসার জন্য অথবা গর্ভধারণের পরে প্রসব এবং শাবকদের বড় হওয়ার জন্য কমবেশি চারটে শেল্টার আস্তানা তৈরির পরিকল্পনা গৃহীত হয়। বেঙ্গল সাফারি পার্কের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা নতুন প্রজনন কেন্দ্রের পরিকাঠামো তৈরীর কাজ দেখভাল করতে শুরু করেন। প্রজনন কেন্দ্রের নথিপত্রে শুধুমাত্র বাঘের উল্লেখ করা হয়। মূলত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রটি করা হলেও প্রয়োজনে চিতাবাঘ প্রজননের জন্য ব্যবহার করার সুযোগও রাখার পরিকল্পনা করা হয়। কাজ শেষ হলেই সেন্ট্রাল জু অথরিটিকে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়। সেন্ট্রাল জু অথরিটি পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে বাঘ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর অনুমোদন দিলে সেইসময় ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের টাটা স্টিল জুলজিক্যাল পার্ক থেকে সাফারি পার্কে নিয়ে আসা হয় পুরুষ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিভানকে প্রজননের জন্য। এদের ছাড়াও বাইরে থেকে বাঘ এনে প্রজননের কাজ চলবে বলে বনদপ্তর আধিকারিকরা পরিকল্পনা করেন। আড়াই বছরের স্নেহাশীষকে ক্যাপটিভ ব্রিডিং এর জন্য কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়। সাফারি পার্কে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সাফারিতে বাঘ ছিল চারটা। তারমধ্যে রিকা এবং কিকার বয়স তখন ছিল মাত্র দেড় বছর। ২০১৯ সালে বিভান এবং শীলাকে নাইট শেল্টারে রেখে নতুন প্রজন্মের শাবককে বাইরে ছাড়া হয়। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এনক্লোজারে ছাড়া হয় বিভান এবং শীলাকে। 

এরপর থেকেই শীলা এবং বিভানের মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়ানোর জন্য একাধিক প্রচেষ্টা করে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়ার ফলে তাদেরকে একসঙ্গে সাফারিতে ছাড়া হয়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে। এদের ছাড়াও বাইরে থেকে বাঘ এনে প্রজননের কাজ চলবে বলে বনদপ্তর আধিকারিকরা পরিকল্পনা করেন। এরপর থেকে বেঙ্গল সাফারিতে শীলার বাকি দুই সন্তান এনক্লোজারে  থাকতে শুরু করে। এরই মাঝে বেশ কয়েকবার এই দুই ব্যাঘ্রশাবককে জনসমক্ষে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দুজনের নিরাপত্তা এবং শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। দুজনে আদৌ এনক্লোজারে ঠিকমতো থাকতে পারবে কিনা অথবা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বিভানের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে কিনা সেসব বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য দুজনকে বেশ কয়েকবার এনক্লোজারে ছেড়ে নজর রাখা হয়। দুজনের স্বভাবে সন্তুষ্ট হয় তাদেরকে জনসমক্ষে আনার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ এবং ইতিমধ্যেই ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটির পক্ষ থেকেও সবুজ সংকেত মিলে যায়। শীলা, বিভান, রিকা এবং কিকা চারটে বাঘকে একসঙ্গে এনক্লোজারে রাখার পরিকল্পনা করে কর্তৃপক্ষ। এনক্লোজারের ভেতরে দুটো বাড়তি নজরদারি ভ্যান রাখা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিকল্পনা হয় বেঙ্গল সাফারি পার্কে রয়েল বেঙ্গল বাঘ বিভান এবং শিলার প্রজননের জন্য প্রায় পাঁচ একর এলাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে ক্যাপটিভ ব্রিডিং এর জন্য। এরপর শীলা এবং বিভানের মধ্যে সম্পর্ক আরো নিবিড় হয়। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে শীলা। দ্বিতীয়বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকেই সাফারি পার্কে তৎপরতা বেড়ে যায়। কোনভাবে যাতে পার্কে সংক্রমণ না হয় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঠিক সেই সময় শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে ভোর পৌনে ৫টা থেকে ৭টা ২০ মিনিটের মধ্যে তিনটি সুস্থ সন্তানের জন্ম দেয় শীলা। খেলার নতুন সঙ্গী পায় খুদে দুই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কিকা, রিকা। 

ভোরের আলো ফোটার আগেই বেঙ্গল সাফারিতে তিনটি ফুটফুটে শাবকের জন্ম হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে শালুগাড়ার সাফারি পার্ক বন্ধ থাকলেও নতুন অতিথিদের ভূমিষ্ঠ হওয়ায় খবর সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কনজারভেটর অব ফরেস্ট তথা বেঙ্গল সাফারির ডিরেক্টর ধর্মদেও রাই জানান, শীলা তিনটি সুস্থ শাবকের জন্ম দিয়েছে। শাবক তিনটি তাদের মায়ের দুধ পান করেছে। ফলে সবমিলিয়ে বেঙ্গল সাফারি পার্কে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা বেড়ে হল সাতটি। জানানো হয় এরা প্রত্যেকেই হলুদ কালো ডোরাকাটা। আগামী কয়েকমাস এদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তারপর কিকা, রিকার মত এদেরকেও ভিজিটরদের সামনে হাজির করা হবে। সবমিলিয়ে পার্কে রয়েছে তিনটি স্ত্রী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শীলা, কিকা ও রিকা। এদের মধ্যে কিকা সাদা ডোরাকাটা। শীলার পুরুষসঙ্গী বিভান। বেঙ্গল সাফারি পার্কে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্ম হবার ফলে খুশির হাওয়া ছিল সাফারি পার্কে। সাফারি পার্কে একের পর এক সফল প্রজননের ফলে খুশির হাওয়া ছিল রাজ্য বনদপ্তরেও। করোনা পরিস্থিতিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সফল প্রজনন এবং তিনটি সুস্থ শাবকের জন্ম সত্যি আনন্দের খবর। এই আনন্দের খবর সংগ্রহ করতে এবং করোনার সময়কালে কেমন আছে বেঙ্গল সাফারির ব্যাঘ্রকুল জানতে পাড়ি দিয়েছিলাম বেঙ্গল সাফারি। করোনা ভাইরাস এর কারণে সাধারণের জন্য সেই সময় বন্ধ ছিল সাফারি পার্ক। বিশেষ অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করেছিলাম পার্কে লেখার রসদ সংগ্রহের জন্য। এর আগেও শীলা তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছে। সেই সময় একটি সন্তানকে অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি। তাই সেবারে শাবকদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস কিকা এবং রিকাকে আনন্দে জলকেলিতে মাততে দেখেছিলাম। দুই বোনের ভালবাসায় ভরা খুনসুটি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। লকডাউনে সমস্ত রকম সাফারি বন্ধ থাকার ফলে পশুরা ছিল বেজায় খুশি। সেই সময় একটি লেপার্ড সিম্বাকে নিয়ে আসা হয়েছিল বেঙ্গল সাফারি পার্কে। লকডাউনে ছুটির মেজাজে ছিল সে। দেখেছিলাম নিজের এনক্লোজারে থাকা দড়ি ধরে দোল খাচ্ছে। বাইরে থেকে কে তাকে ডাকছে সেদিকে কোন নজর নেই। 

উত্তরের তীব্র গরমে সেই সময়ে সামার ভ্যাকেশনে মজেছিল শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি পার্কের খুদে সিম্বা, জেনিফার, রিকা এবং কিকারা। লোকচক্ষুর আড়ালে খেলায় মত্ত ছিল সাফারি পার্কের আদুরেরা। আর তাদের এই কীর্তি দেখে বেজায় খুশি ছিলেন পার্কের কর্তারা। আসলে উত্তরের এই অঞ্চলে সেই দুদিন খুব গরম পড়েছিল। দেখেছিলাম তাই হিমালয়ান ব্ল্যাকবিয়ারদের বরফ দেওয়া হয়েছিল। তারা বরফ পেয়ে বেজায় খুশি ছিল। গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত সাফারি পার্কের চারটি হিমালয়ান ব্ল্যাকবিয়ার এর জন্য কর্তৃপক্ষ বরফের ব্যবস্থা করতেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেছিল ড্যাডি, জেনিফার, ধ্রুব এবং ফুরবু। ব্ল্যাকবিয়ারদের মধ্যে ছোট ধ্রুবকে বরফ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজের এনক্লোজারে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে দেখেছিলাম। তারপর  বরফ নিয়ে খেলা শুরু করে দেয়। ঠিক যেন টানা স্কুল চলার পর ছুটির মেজাজ। সকালে উঠেই জলকেলি, বরফ নিয়ে খেলা। দেখেছিলাম কেউ আবার খোশমেজাজে আপন-মনে দোলনায় ঝুলে চলেছে। সময়মতো এসে খাবার খেয়ে দে ছুট। সেই ধ্রুব এখন সদ্য বাবা হয়েছে। ঠিক যেন নিজের শিশুদের সামার ভ্যাকেশনে মজা করতে দেখা গিয়েছিল। পার্কের মধ্যে বড় হওয়া এই খুদেদের প্রতিটি মুহূর্তের ছবি ছিল আর্কাইভে সংগ্রহ করে রাখার মত। কি অদ্ভূত সমাপতন। এই তীব্র গরমে সন্তানকে কোলছাড়া করছে না দম্পতি। সব সময় কোলে কোলেই রাখছে সদ্যোজাতকে। নিয়মিত দুধ পান করাচ্ছে ফুরবু। পাশাপাশি ভাবে নিজেও ঠিক সময়ে খাবার খাচ্ছে। এই মুহূর্তে তাকে বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দুধ ছাতু কলা দিয়ে শেক বানিয়ে খেতে দেওয়া হচ্ছে। গরম বেশি থাকার জন্য ডায়েটে প্রচুর পরিমাণ জল এবং তরমুজ জাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে। সেন্টারের সামনে এয়ারকুলার বসানো হয়েছে। শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য স্নানের জল এবং বরফ দেওয়া হচ্ছে। আসলে মা হওয়া কি মুখের কথা!

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri