সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

বাংলাদেশ : ২১ শে ফেব্রুয়ারি/প্রশান্ত নাথ চৌধুরী

বাংলাদেশ : ২১ শে ফেব্রুয়ারি
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী 
-----------------------------------

আমরা ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বেরিয়ে পড়লাম আমার ভাললাগার শহর বরিশাল ছেড়ে ঢাকার পথে। দুপুরে পৌঁছলাম ভারত সেবা সঙ্ঘের প্রাণপুরুষ শ্রীশ্রী প্রণবানন্দজীর জন্ম ভিটে ও আশ্রমে, মাদারিপুর জেলার বাজিতপুর গ্রামে। ওই রাস্তায় বড় গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না আমরা টোটো চেপে আশ্রমে এলাম। বেশ বড় এলাকা জুড়ে আশ্রম। ভক্তদের থাকার ব্যবস্থাও বেশ. ভাল। ওখানেই ছিমছাম নিরামিশ খাওয়া হলো দুপুর বেলায়। প্রণবানন্দজীর জন্মভিটে কাছেই যেখানে তিনি জন্মেছিলেন  ১৮৯৬সালের ২৯ শে জানুয়ারী । দর্শন সেরে অনেকটা পথ পেরিয়ে  পদ্মার উপর নতুন সেতু অতিক্রম করে অবশেষে ঢাকায় পৌছালাম বেশ রাত করে। 
বোধহয় ১০-১২ তলা হবে যে হোটেল স্পাসিফিক-এ আমরা দু-রাত কাটিয়েছিলাম। হোটেলের লবিতে দেখা হলো একদল সুন্দরী তরুনীর সঙ্গে। ওরা কাশ্মীর থেকে বাংলাদেশে ডাক্তারী পড়তে এসেছে। আমাদের দলের মহিলাদের সঙ্গে ওদের বেশ ভাব হয়ে গেল। ঘনঘন ছবি উঠছিল।

পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উদযাপন চাক্ষুষ করা জীবনের এক স্মরনীয় অভিজ্ঞতা । শুনেছি রাত বারটায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুস্পস্তবক ও মালা দিয়ে   ভাষা শহীদদের সম্মান জানিয়ে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস  পালনের সূচনা করেন। ওই সময় আবার বাংলা দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে বিপুল উৎসাহে পক্ষকাল ব্যাপি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
ধর্মের ভিত্তিতে ১৯৪৭ এ দেশ স্বাধীন হলে পূর্ববঙ্গ পূর্ব পাকিস্থান নামে আত্মপ্রকাশ করে। পশ্চিম পাকিস্থানের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে পশ্চিমের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্থানের রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দু। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে সারা পূর্ব বঙ্গে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যদা দাবি করে গণআন্দোলন গড়ে ওঠে। ছাত্র সমাজ গর্জে ওঠে। সেই ক্ষোভ দমন করার জন্য সুরক্ষা বাহিনী আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালনা করে ২১ শে ফেব্রুয়ারী  ১৯৫২ সনে। শহীদ হয়েছিলেন রফিক, আব্দুল জাব্বার, সালাম, বরকত ও অন্যান্যরা। ১৯৯৯ সনে ইউনেস্কোর সভায় বাংলাদেশের দাবি মেনে ২১ শে ফেব্রুয়ারী  দিন টিকে  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যদা দেওয়া হয়। এরপর ২০০০ সাল থেকে ওই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে।
বন্ধুবর দেবপ্রসাদ বহুবার বলেছে আমাদের কত বড় দেশ কিন্তু কোন রাষ্ট্রীয় উৎসবের দিন নেই। ওদিকে বাংলাদেশে নববর্ষের দিনটি কিন্তু রাষ্ট্রীয় উৎসবের দিন হিসেবে পালিত হয়। আর ২১ শে ফেব্রুয়ারী  তাদের রাষ্ট্রীয় শহীদ স্মরণের দিন।

মালপত্র ঘরে ঢুকিয়ে, দ্রুত ফ্রেস হয়ে নিয়েছিলাম। বাইরে এসে একটা রিক্সা নিয়ে শহরের ওই এলাকা ঘুরে এক কাপ চা খেয়েই হোটেলে ফিরে এসে দেখি আমার স্ত্রীর পরিবারের ঢাকায় কর্মরত জামাই বাপি এসেছে। ওর সঙ্গে প্রথমবার দেখা, খুব ভাল ছেলেটি। 
সেদিন ডিনার টেবিলে বিপ্লববাবু বললেন "কাল সকালে বাস চলবে না। আপনারা রিক্সা বা অটোতে দোয়েল চত্বরে নেমে, হেঁটে ভাষা শহীদ স্মারক স্তম্ভে পৌঁছে ফুল দিতে পারেন। কাছাকাছি ঘুরে দুটোর মধ্যে এসে লাঞ্চ সারবেন। কালকের লাঞ্চে পদ্মার ইলিশ থাকবে ।
এবছর ২১শে ফেব্রুয়ারী ' ভাষা শহীদ দিবস'-এ বাংলা দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে উত্তরবঙ্গ থেকে প্রায় ৩০ জন উপস্থিত ছিলাম। সে এক অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা । রাত বারটা থেকেই মানুষের মিছিল চলছিল শহীদ বেদীর উদ্দেশ্যে। কালো পাঞ্জাবি পরা তরুন, কালো পাড় শাড়ী পরা তরুণীদের মুখে দেশাত্মবোধক গান, হাতে ফুলের সম্ভার। পুলিশের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না, তার দরকারও ছিল না। 

আমরা গিয়েছিলাম সকাল দশটায় ভীড়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে। ঘোষকের সঙ্গে দেখা করে বললাম  "আমরা ভারতবর্ষ থেকে এসেছি। শ্রদ্ধা জানাতে চাই।" একটা কাগজে লিখে দিলাম 'জলপাইগুড়ির লেখক ও শিল্পী সমাজের পক্ষে'। মাইকে ঘোষিত হল প্রশান্ত নাথ চৌধুরীর নাম। উত্তর বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণীদের পক্ষে রণজিৎ মিত্রের নাম এবং  পরিচিতি। আমরা সবাই একসঙ্গে পুষ্প স্তবক অর্পন করেছিলাম। 
হাজার হাজার মানুষ চলেছিল যেন শহীদ তর্পনে। বাংলাদেশের বিভিন্ন‌ প্রান্তের মানুষ‌ এসেছিলেন। নোয়াখালির এক স্নিগ্ধ মেয়েকে 'তুমি' সম্বোধনে আলাপ‌ করছিলাম।পরে জেনেছিলাম মেয়েটি নোয়াখালি কলেজে ইংরাজী‌ সাহিত্যের অধ্যাপিকা।বলেছিলাম 'অধ্যাপিকাকে তুমি বলে ডেকেছি মনে কিছু  করো না'। সে বলেছিল 'আমার বাবা মা তুই  বলে ডাকে। সেটাই তো বাঙ্গালীদের সংস্কৃতি'। এরপর কি আর বলতে পারি। 

কর্তৃপক্ষ চা-পানে আপ্যায়িত করলেন। আলাপ হল বেশ কিছু গুনীজনের সঙ্গে। বাংলাদেশের এমন আপ্যায়ন মনে রাখার মতো। আমাদের দলের অনেকেই ব্যস্ত অন্যকে দিয়ে নিজের ছবি তোলাত। আমি ছবি তুলে দিয়ে, তাদের মাঝেমধ্যে খুশী করতাম। 
শহীদবেদীতে মাল্যদানের সময়  আমাদের প্রচুর ছবি উঠেছিল।  সঈদ ইকবাল খান ওই দেশের একজন সাংস্কৃতিক ও সমাজ কর্মী ।  রণজিৎ ও আমি ইকবাল সাহেবের হাতে আমদের রচিত বই  তুলে দিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় ওদের কৃষক সমিতির  অফিসে আড্ডা দিয়েছিলাম।
মাল্যদানের পর আমরা ছাত্রদের হস্টেল জগন্নাথ হল ঘুরে দেখলাম সঙ্গে ছিলেন শ্রী সুখঢাঁদ সরকার, অধ্যাপক। হলে -র সামনে পুকুরের মাঝে বিশাল এক সরস্বতী  প্রতিমা ।  হলটি ১৯২১ সনে প্রতিষ্ঠিত। এমন ২৪ টি  হল আছে'। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ৮৬ টি ডিপার্টমেন্ট আছে। ১২ জন ডিন আছেন। সবচেয়ে বড বিভাগ 'বাংলা'। সংস্কৃত পড়ানো হয়ে  বর্তমানে   ১০০ জনের মত ছাত্রছাত্রী আছে। তার ৮০℅  শিক্ষার্থী কিন্তু হিন্দু নয়। 
এখানেই রণজিৎ তার মোবাইল ফোনটি হারিয়ে ফেলেছিল। আজকাল আমাদের সবার  মোবাইল ফোনে নানা তথ্য রক্ষিত হয়। আবার আমরা বিকেলে থানায় যাওয়া ঠিক করলাম। দুঃখ ভুলে
আমরা এলাম ঢাকেশ্বরী  কালিবাড়ি । পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর সঙ্গে আলাপ হয়েছিন। ওখানেই দেখা হলো বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতশিল্পী শুভ দেব মশায়ের সঙ্গে। ফিরে এলাম হোটেলে। বেশ বড়  দু টুকরো ইলিশ সহযোগে লাঞ্চ। 

আমরা ইকবাল সাহেবের সঙ্গে কথা বলে বিকেলে‌ থানার সামনে ছোট্ট একটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়ালাম । কাছেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল  ইসলামের সমাধি। দুটি পুলিশ অফিসার চা পান করছিলেন তারা শুনে বলল মেলার মাঠে অফিসটিতে খোঁজ করতে। উনারা আমাদের চা খাওয়ালেন। আর একবার  ইকবাল সাহেবের সঙ্গে মাঠে গেলাম। লাভ হল না।
চললাম বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের অফিসে  ওখানে ছিলেন‌ সভাপতি বদ্রুল ইসলাম, গার্মেন্ট ওয়াকার্স ফেডারেশনের লাভলি ইয়াসমিন  আর এপার বাংলা থেকে নদীয়ার  খেলাফত মন্ডল ও বহরমপুরের  তরুন  সৌরভ ঘোষ। সাউথ এসিয়ান পিপলস ফোরাম নিয়ে আলোচনা হলো। ওরা বলছিল কমন ওয়েলথ ভূক্ত দেশের মধ্যে ভিসা কেন? এন আর সি বন্ধ হোক, তিস্তার জলবন্টন নিয়ে আলোচনা চলুক ইত্যাদি ইত্যাদি । আমাদের অংশগ্রহণ সীমিত ছিল। তবে ওদের আন্তরিকতা অবশ্যই  তারিফ যোগ্য। একটু রাত করেই হোটেলে ফিরলাম।   কাল ভোরে রওনা দেব  চট্টগ্রাম, কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ। আবার আসব ঢাকায় ২৫ শে ফেব্রুয়ারি ।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri