সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
19-February,2023 - Sunday ✍️ By- রাজর্ষি দত্ত 529

বসন্তবিলাস

বসন্তবিলাস
রাজর্ষি দত্ত
--------------

শিমূল গাছের বীজগুলি ফেটে হালকা তুলো ভাসছে হাওয়ায়। তাদের ফিনফিনে সাদা ভাসমান শরীরে কেউ খেলাচ্ছলে আলতো করে ছুঁড়ে দিচ্ছে পড়ন্ত বেলার কমলা আবিরের রং।
সরকারি আবাসনের তিনতলার ছাদ থেকে জিয়ন তাকিয়ে দেখে এসব। সেখান থেকে স্পষ্ট চোখে পড়ে খেলার মাঠখানি – আজ অবশ্যি তার কিছুটা বিয়ের প্যান্ডেলে ঢাকা।
আধো অন্ধকার নামতেই আবাসনের ফ্ল্যাটগুলির বাতি জ্বলে উঠছে এক এক করে। ঝকমক করে উঠলো প্যান্ডেলের রকমারি আলোক সজ্জা। থমকে থাকা বোবা বাতাসে লাগলো ‘পিলু’ রাগের মূর্ছনা – ওস্তাদ বিসমিল্লা খানের সানাইয়ের ধুনে।
‘যা ভেবেছি তাই ! এই তো আমার ভাবুকচন্দ্র দাদা – আরে মা তোকে খুঁজছে অনেকক্ষণ…’ মীরু উঠে এসেছে ছাদে। উফফ, একটু একা থাকতে দেবে না কেউ। ‘তুই যা, আমি আসছি পরে…’ বিরক্তি চেপে জিয়ন বলে।
–‘না, এখুনি চল। রেডি হতে হবে তো ! দিয়াদির বিয়ে বলে কথা !’  
–‘আমি বিয়েতে যাব না এটা কতবার বলা চাই ?’
–‘শোন দাদা, তুই যাকে ভালবাসিস-’
–‘পাকামি বন্ধ করবি? মাঝে মাঝে ভুলে যাস তুই আমার থেকে অনেক ছোট – নয় বছরের –’
রেগেমেগে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকা মীরুর গলা গমগমে শোনায় – ‘সব কিছুতেই আমি…এখন আমাকেই মেজাজ…ভাল করলি না…’
কথাটা ঠিকই। জিয়নের এবার খারাপ লাগে। গত দুর্গা পূজায় আবাসনের মণ্ডপে আটপৌরে স্টাইলে তুঁতে জামদানি পরা অচেনা মেয়েটিকে যখন পাকা হাতে ঢাক বাজাতে দেখেছিলো তখন তারও বুকের ভেতর বেজে উঠেছিলো আরেক বাদ্যি। ‘স্যান্যাল কাকুর মেয়ে – ওরা পিঠোপিঠি দুই বোন – দিয়া আর হিয়া। এখানে নতুন এসেছে…’ মীরুই তখন খবরিলাল। জিয়ন কি করেই বা জানবে ? বছর দেড়েক নতুন চাকরি পেয়ে ও ঝাড়গ্রামে থাকে। কালে-ভদ্রে ছুটিতে আসা হয়।
‘আয় আলাপ করে দি –’ অষ্টমীর দুপুরে মণ্ডপের পাশে খাবার ব্যাবস্থা - আবাসনের সকলের জন্য। সেখানে এক টেবিলে দুই বোনের মুখোমুখি দুই ভাই-বোন।  লুচি, ছোলার ডাল,পোলাও – এসবের কোন আলাদা স্বাদ পাচ্ছে না জিয়ন। শেষপাতে পান্তুয়ার অর্ধেকটা মুখে পুরে বা-গাল টোপা করে ‘উঠি’ বলে ঘাড় কাত করে দিয়া চলে গেল হাত ধুতে। ওর দিদি মুচকি হাসল ‘কিছুই তো খেলে না – খিদে নেই বুঝি ?’
ঝাড়গ্রামে ফিরে রাত জেগে ‘আপন মনের মাধুরী মিশায়ে’ একটা লম্বা চিঠি লিখেছিল। বড়দিনের ছুটিতে এসে  মীরুকে ডাকপিয়নের কাজটা চাপালো। সিল করা খামের উপর লেখা ছিল ‘দিয়া – তোমাকে !!’ 
‘সরি দাদা, তুই রং নম্বরে কল করেছিস । দিয়াদি এনগেজড । ওকি ! অমনি তোর মুখটা কালো হয়ে গেলো ? মাইরি বলছি, ওর সব ঠিক করা…আচ্ছা বাবা, আমি দেবো, ওর হাতেই দেবো…কিন্তু তাতে কি হাওয়া ঘুরবে ? দেখি তোর প্রেমপত্র নাম্বার ওয়ানের দম কত !’ 
লাভ লেটারে যে লাভ কিছুই হয়নি তা না বললেই হয় ।
একদিন দিয়াকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখে পিছু নিয়েছিলো । কিন্তু কথা বলা সাহসে কুলোয়নি ।উলটে দিয়ার মুখ দেখে মনে হয়েছে একসাথে বসে খাওয়ার কথা ও খাবারের আইটেমগুলির মত বিলকুল হজম করে ফেলেছে।
বরং ওর দিদি একদিন বাড়িতে এসেছিলো। মীরুর সাথে কিসব ফালতু বকবক করতে। থেকে থেকে ওর ঝাড়ি মারা আর ফিচেল হাসি দেখে জিয়নের মনে হল এও পাক্কা চিঠিটা পড়েছে ।
বছরের শেষ ঋতু, ঋতুরাজ বসন্ত এসে গেলেন গুটি গুটি পায়ে। রঙের উৎসব আর ঠিক দুদিন পরেই । ঝাড়গ্রামের রাঙা মাটি, পলাশের রক্তিম মেদুরতায় মাখা মহুয়ার নেশার মত আচ্ছন্ন মনটাকে নাম-না-জানা ফুলের উপত্যকায় আশ্চর্য নরম হলুদ আলোয় উড়তে থাকা অগুন্তি প্রজাপতির মত ভাসিয়ে দিয়ে জিয়ন পৌঁছালো বাড়িতে।
আর ঘরে ঢুকেই সেইরকম একটা স্বপ্নের প্রজাপতিকে খামের ভেলভেটে সেঁটে থাকতে দেখলো-যার নিচে জ্বলজ্বলে সোনালি রঙে লেখা ‘দিয়া ওয়েডস মিতুন ’…
হৃৎপিণ্ডের অলিন্দ-নিলয়-শিরা-ধমনী সব যে কবে পাতা না দেখা ছোট ছোট আমের মুকুলের মত ঢেকে গেছে জিয়ন তা টের পায়নি । এবার বুঝলো দমকা হাওয়ার চোট ! হাড়ে হাড়ে টের পেলো ঝড়ে পরা মুকুল পারিয়ে গেলে ব্যাথাটা কোথায় গিয়ে লাগে !
সারাদিনের সঙ্গী ব্যাথাটাকে নিয়ে অন্ধকার ঘরে এখন একলাই বসে আছে জিয়ন । গলাটা খুস্ খুস করছে বলে গার্গেল করতে গিয়ে জিভে ছ্যাঁকা খেয়েছে একটু আগেই । এমনি সময় হাঁফাতে হাঁফাতে মীরুর আবির্ভাব –
-‘এই দাদা – দিয়াদি তোর সাথে কথা বলবে – পার্সোনালি – এখুনি ’ 
এবার একটা দুলুনি টের পেল জিয়ন । তার বিছানাটা যেন দুকূল ছাপানো নদীতে ভাসমান কোন নৌকো । জানালা দিয়ে গলে আসা ত্রয়োদশীর চাঁদের আলো নৌকোয়, নদীর জলে লুটোপুটি খাচ্ছে । জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ স্পষ্ট শোনা যায় বুকের ভেতর ।
-‘শিগগির চল, আর সময় নেই…’
যে ঘরে দিয়ার থাকবার কথা, সেখানে বিছানায় একলা বসে আছে ওর দিদি। কনের চাইতে কোন অংশে কম সাজেনি মেয়েটা ।
ওর আশ্চর্য সুন্দর টানা টানা চোখ দুটিকে কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়ে তাতে ডুবিয়ে রাখলো জিয়নকে। এদিকে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে থাকে জিয়নের । বেশ কিছুটা সময়… ধীরে ধীরে চোখের পলক স্থিমিত হয়ে নেমে এল নিচে।
-‘তুমি দিয়াকে খুব ভালোবাসো, তাই না ?’ গলাটা কেমন যেন ধরা ধরা ।
জিয়ন কি বলবে ? এতক্ষণ ডুবে থাকার পর ওর এখন দম নেবার সময় ।
-‘ইস, যদি সত্যি ভালোবাসতে…দিয়ার কপালে কি এমন ভালোবাসা আছে ? কে জানে ?’
জিয়নের থমকে থাকা মুখের দিকে জলভরা চোখে তাকিয়ে সে বললো ‘তোমার চিঠি পড়েছি । বারবার…অনেকবার ! এমন চিঠি আমাকে আগে কেউ কোনওদিন লেখেনি, জানো ? যদি কেউ লিখতো, তবে এক দৌড়ে পালিয়ে যেতাম সব ছেড়ে । যাক সে কথা ! তোমার একটা ভুল খালি শুধরে দিচ্ছি- চিঠিটা তুমি লিখেছ দিয়াকে, কিন্তু পড়ে বুঝলাম ওতে আছে হিয়ার কথা…আমার বোনের কথা…ঐ দেখো সে তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে…’
ঘরের এলিডি বাল্বগুলি যেন হঠাৎ ম্যাজিকের মত বনে গেছে রঙবেরঙের ঝাড়লণ্ঠনে। সানাইয়ের সুরে এবার মঙ্গলধুনের তান । রজনীগন্ধার বাগানে বয়ে চলছে মিঠে মৃদু দখিনা বাতাস । প্রজাপতির ঝাঁক কোথা থেকে উড়তে উড়তে এল রামধনু রঙের ডানা মেলতে মেলতে…
ভ্রান্তিবিলাস ? নয়তো কি ?
পিলপিল করে একদঙ্গল মেয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছে । তার মধ্যে থেকে জিয়নকে হাত ধরে টেনে বাইরে এনে ফেলে মীরু বলল - ‘কি খাবি? কফি, পকোড়া, ফুচকা না আইসক্রিম ?’
-‘তেঁতুল জল !'

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri