সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
26-March,2023 - Sunday ✍️ By- অতনু চন্দ 643

বসন্ত ফিরে ফিরে আসে/অতনু চন্দ

বসন্ত ফিরে ফিরে আসে
অতনু চন্দ
------------------------------

 "Door bell" টা আর্তনাদ করে বেজে উঠতেই বাইরের ঘরের সোফায় বসা শংকর সচকিত হয়ে প্রশ্ন করে —- কে !? 
দরজার ওপার থেকে উত্তর ভেসে আসে, আপনার চিঠি আছে।
 এবার একটু যেন অবাক হয় শংকর! ভাবে, আজকাল তো চিঠি-পত্র তেমন একটা আসে না, আজ আবার ডাকপিয়ন দরজায় এসে চিঠি দিচ্ছে কি ব্যাপার! পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে ডাকপিয়নকে ধন্যবাদ দিয়ে চিঠি গুলি নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। আবার সোফায় বসে শংকর দেখে যে একটা "Inland letter" ও একটি ঁগঙ্গা লেখা সাদা খাম এসেছে। সকাল সকাল ঁগঙ্গা লেখা খামটা খুলে দেখতে ইচ্ছে না করায় শংকর "Inland letter"টা খুলে পড়তে শুরু করে।                                                            – শঙ্কু,
অনেকদিন তোমার সাথে দেখা সাক্ষাত হয় না। তুমি এখন কোথায় কি অবস্থায় আছ কিছুই জানি না তাই তোমাদের পুরনো ঠিকানায়ই চিঠিটা দিলাম। অবশ্য জানি না পাবে কিনা !
আগামী সোমবার অর্পিতার পারলৌকিক কাজ এবং তার ঠিক তিনদিন পর নিয়মভঙ্গ অনুষ্ঠান। আমি জানি অর্পিতার পারলৌকিক কাজে তুমি আসবে না তাই নিয়মভঙ্গের অনুষ্ঠানেই এস। জানি না তোমাদের পুরানো বাড়িতে তুমি এখন থাক কিনা! জানলে নিজে গিয়ে তোমাকে নিমন্ত্রণপত্র দিয়ে আসতাম। "By Post" এই চিঠি দিলাম যদি পাও সে আশায়।                                 অর্পিতার দাদা সহ আমরা সকলে অর্পিতার শেষ কাজের জন্য আমাদের এখানকার আদি বাড়িতেই এসেছি। আসলে তোমার একটা জিনিস আমার কাছে গচ্ছিত আছে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে অর্পিতা সেটা তোমাকে ফেরত দিয়ে দিতে অনুরোধ করেছিল। আর তাই তোমাকে এই চিঠি লেখা।
তোমার মনে আছে কিনা জানি না, অনেকদিন আগে তুমি একদিন অর্পিতাকে সঙ্গে করে নিয়ে বইমেলার থেকে রবীন্দ্রনাথের "শেষের কবিতা" ওকে কিনে দিয়েছিলে। মনে পড়ছে কি? হ্যাঁ সেই বইটাই অর্পিতার অনুরোধে আমি তোমাকে ফেরত দিতে চাই।
জান শঙ্কু, তুমি "propose day"তে যে লাল গোলাপটা দিয়ে অর্পিতাকে "propose" করেছিলে, সেই ফুলটা এখনও "শেষের কবিতা" বইটার মধ্যে সযত্নে রাখা আছে তবে তা এখন শুকিয়ে বিবর্ণ ও মলিন হয়ে গেছে দেখলাম।  মেয়েটা এতগুলি বছর যে কত রকম যুদ্ধ করেছে ঘরে বাইরে তা আর কি বলব। এত সংগ্রামের মাঝেও কিন্ত একদিনের জন্যও তোমার দেওয়া বইটি হাত ছাড়া করেনি বরং তোমার স্মৃতি মনে করে বইটিকে আষ্টেপৃষ্ঠে আরো জড়িয়ে ধরে ছিল। তোমাদের সব কথা অর্পিতা আমাকে বললেও তোমারা কোন অভিমান নিয়ে যে দু'জনে দূরে সরে গেলে তা কিন্ত আমাকে বলেনি! আমি অর্পিতার মনের ভাষা বুঝতে পেরে তা কোনদিন জানতেও চাইনি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম বলে আর আঘাত দিতে চাইনি। কারন এটা তো অর্পিতার একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের ব্যপার। তারপর অর্পিতার দাদার বদলির হলো। বদলির চাকরি তাই আমাদের এখান থেকে যেতেই হল। অর্পিতাকেও সঙ্গে করে নিয়ে গেলাম। এ সব ঘটনার কথা অর্পিতার দাদা জানতে পেরে ওর দাদা  বিয়ের কয়েকটা সম্মন্ধ আনলেও অর্পিতা কিন্ত একেবারেই আগ্রহ দেখায়নি বরং আরো গম্ভীর হয়ে গিয়ে আমাদের থেকে দূরে সরে থেকেছে। বাধ্য হয়ে আমরাও শেষে চুপ করে থেকেছি। হয়ত নিজেকে ব্যস্ত রাখতেই ও একটা প্রাইভেট স্কুলে চাকরি নিয়েছিল। তারপর থেকে স্কুলের হস্টেলেই থাকত। স্কুল বন্ধ থাকলে কখনও-সখনও আমাদের কাছে এসে থাকত। আমরা ভেবেছিলাম ছাত্রীদের নিয়েই ওর জীবনটা বেশ ভালই কাটছে! কিন্ত সেটাই আমাদের মস্ত বড় ভুল ছিল। ভেতরে ভেতরে হতাশায় ও যে  এতটা ক্ষয়ে গেছে তা আমরা কেউ বুঝতে পারিনি! এই তো কিছুদিন আগে হঠাৎ খুব অসুস্থ হওয়াতে ওকে "Hospital"এ  ভর্তি করাতে হয়েছিল। "Test" করে জানা গেল ওর Covid positive হয়েছে। সেখান থেকে যদিওবা সুস্থ হয়ে উঠল কিন্ত তার পরপরই হল "Chicken Pox" তাই দুর্বল শরীরে হয়ত এ ধকল আর সইতে পারেনি। অন্যদিকে ওর বাঁচার ইচ্ছেটাও এবার কেন যেন একেবারেই ছিল না! তাই একদম ওষুধ-পথ্য খেতে চাইত না। ক্রমেই শরীর অবনতির দিকে যেতে শুরু করল তখন ডাক্তারাও প্রায় হাল ছেড়ে দিলেন। আর তখনই অর্পিতা একদিন আমাকে একা পেয়ে চুপ করে অনুরোধ করেছিল "শেষের কবিতা" বইটি তোমাকে ফেরত দিয়ে দিতে। ওর শেষ অনুরোধ আমি কি না রেখে থাকতে পারি বল? এলে সাক্ষাতে সব কথা বলব নিশ্চয়ই। আর কি লিখব। চিঠি পেলে অবশ্যই এস কিন্ত…..
                                ইতি
                                      বৌদি।
চিঠিটা পড়তে পড়তে শংকর বুকে চিনচিনে একটা পুরান ব্যথা অনুভব করতে লাগল, তার চোখ দু'টো জলে ভরে ঝাপসা হয়ে গেল। সেই ঝাপসা চোখেই শংকর তার পুরান দিনের অনেক স্মৃতি যেন পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিল! অর্পিতার সাথে তার প্রথম বাসন্তিক আলাপ পরিচয় এবং ক্রমে ক্রমে বাহার বিস্তার-এর নিবিড়তায় উচ্ছলতার দিনগুলোকে তার মনে হতে লাগল এই তো সে দিনের কথা এ সব…… এভাবেই তো অনেকগুলো বসন্ত ওদের ঝড়ের মতন পাগলামি করতে করতে নিমেষে হারিয়ে গেছে ! আর এই সম্পর্কের কারণেই ওদের দু'টি পরিরার মধ্যে প্রায় আত্মীয়তার সেতু তৈরি হয়েছিল একদিন।  কিন্ত তারপর যে কি হ'ল! কেন যে সে কাহিনী অসমাপ্ত থেকে গেল……. কে জানে!.......হয়ত দুজনেরই তখন "maturity"র বড্ড অভাব ছিল, তাই হয়ত এই অহেতুক অভিমান!
  সেই নানান রংয়ের দিনগুলির কথা ভাবতে ভাবতেই কখন যে নিজের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে বুঝতে পারেনি, আর ঠিক তখনই শংকরের মেয়ে এসে বলল, "বাবা, মা তোমাকে রান্না ঘরে চা খেতে ডাকছে"। শংকর এবারে আবার কঠিন বাস্তবে ফিরে এসে মেয়েকে শুধু বলল, "মাকে গিয়ে বল আমি যাচ্ছি"।

মন খারাপ নিয়েই শংকর রান্না ঘরের পা বাড়াল।  বাড়ির একটা গাছ থেকে তখন বসন্তবৌরি পাখিটা বেয়ারাভাবে একটানা ডেকেই চলেছে, তা যেন আজ শংকরের বুকে হাতুড়ির মতন শব্দ করে পড়তে লাগল……….. 

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri