সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
04-August,2024 - Sunday ✍️ By- শুভদীপ চক্রবর্তী 216

বন্য সাম্রাজ্য/শুভদীপ চক্রবর্তী

বন্য সাম্রাজ্য
শুভদীপ চক্রবর্তী 
****************

জঙ্গল নামটা শুনলেই শরীরে যেন একরাশ মুগ্ধতার বৃষ্টি নামে,পাওয়া যায় আদিম সোঁদা গন্ধ যা এখনো ধাবমান অনন্ত শিহরণে।
এই জঙ্গলের অমানবিক স্নিগ্ধতায় আমিও মিশেছিলাম একদিন, এক বর্ষা ঘেরা প্রাণের যৌবন ক্ষণে। 
ডুয়ার্সের মধুবনি জঙ্গল সবারই পরিচিত, সেই আস্তানায় একদিন আমি আর আমার বন্ধু শুভম গিয়েছিলাম প্রকৃতিকে জানতে, বুঝতে। অবশ্য সেই যাত্রায় আমার স্কুটি ছিল এক বিশ্বস্ত বাহন।
সেদিন আকাশের বুক থেকে বর্ষার চাহনি, শরীরের সাথে মনকেউ করছিলো পরিস্কার। বৃষ্টি আর জঙ্গল এই যৌথ উদ্দীপনার সাথে পৃথিবীর সকল বাঁধন যেন ছারখার হয়ে যায়।
জঙ্গলের মাঝপথ ধরে এইভাবে আমি, শুভম ছুটে চলেছি প্রকৃতির রাজত্বে, সৃষ্টিকর্তার সর্বনামে। চলার পথে দুচোখ যেন তৃপ্ত, সবুজ আহা রে, হয়তো রেটিনাও পুষ্টি পেল অনেক দিন পর। এই সবুজ সমারোহে পথের ধারে বাহন থামিয়ে আমি আর শুভম হাঁটা দিলাম জঙ্গলের ভেতর। এই চলার পথের সাথি ছিল নানা অজানা পাখির ডাক, ঝিঝি পোকার অতুলনীয় শব্দধ্বনি, কত শত কীট, প্রজাপতির মুক্তিযুদ্ধের জয়লাভ, আরও অনেক সব জঙ্গলি প্রান। তারা যেন একসাথে মিলেমিশে কত সুন্দরতায় জীবন পালনে ব্যস্ত, তারা জানে মৃত্যু তাদের না জানিয়ে যখনতখন হানা দিতে পারে, তা জেনেও কী অদ্ভুত মায়াবি বাঁধনে আবদ্ধ হয়ে দিনযাপন করছে। এদের চাইতে বড়ো মৃত্যুঞ্জয়ী আর কারা হতে পারে! 
হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম কত শত প্রাচীন গাছ যারা এখনো মাথা উঁচু করে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে আছে বিগত কত যুগ থেকে। তাদের শিরদাঁড়া যেন মানব শিরদাঁড়াকে বারবার শিখিয়ে চলছে, মানবিকতার উচ্চশিখায় সঠিক কার্যপালনে। জঙ্গলের মায়াবি ঘোরে এইভাবে পথ হাঁটার পর মনে হলো অনেকটা পথ চলে এসেছি আমরা, এরপর গেলে জংলি হানা হতে পারে, তাই একশো আশি ডিগ্রি ঘোরাই বাঞ্চনিয়। 
ফেরার পথে এক সাইকেলচালক দেখে জিজ্ঞেস করালাম,
--দাদা হাতি আছে এখানে?
--হ্যাঁ আছে, তবে এখন বের হয়না, রাতের দিকে একপাল বের হয়।
--আর কী কী আছে দাদা এখানে?
--বাইসন ও চিতাও আছে অনেক।
--দেখেছেন আপনি বাইসন?
--হ্যাঁ,হ্যাঁ অনেক, একবার তো তাড়াও করেছিলো একটা বাইসন, কোনরকম পালিয়ে বেঁচেছি। 
--ঠিক আছে দাদা, ভালো থাকবেন।
--আপনিও ভালো থাকবেন দাদা,তবে এখানে বেশিক্ষণ থাকবেন না, বলা তো যায় না তাদের হাবভাব।
--নানা আমরা বের হচ্ছি এখন, ঠিক আছে।
এইবলে আবার আমার বাহনে চেপে সামনের দিকে অগ্রসর হলাম। যে রাস্তায় যাচ্ছি সেটা নাথুয়া যাওয়ার রাস্তা। শুভমকে বললাম "চলো আর একটু এগোই দেখি যদি কিছু দেখা যায়"।
আসলে আমি মনেপ্রাণে চাইছিলাম হাতি এসে একবার দেখা দিক। বিধাতার যে শ্রুতিভ্রম হয়নি তা সেদিন বুঝতে পারলাম।
যেতে যেতে হঠাৎ দেখি রাস্তার ধারে জঙ্গল ঘেঁষে এক বিশালাকার হাতি দাঁড়িয়ে আছে। সংখ্যায় ছিল একটি, কিন্ত এত বৃহৎ শরীর সাথে সুবিশাল দন্ত, দেখেই গায়ে রক্তস্রোত যেন কয়েক মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। আমি স্কুটি থামিয়ে শুভমকে বললাম, একদম শব্দ করবে না, কারণ আমি জানতাম যে হাতির কান প্রায় দশ কিলোমিটার দূর থেকে আওয়াজ শুনতে পায়, চোখের দৃষ্টি অনেকাংশেই কম, তাই হয়তো সৃষ্টিকর্তা তার কান দুটিকে এত তীক্ষ্ণতায় ভরিয়ে দিয়েছেন। এরপর আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম, অনেকটা সামনে গিয়ে চুপচাপ মোবাইল বের করে ভিডিও আর ছবি তুলতে থাকলাম। হাতিটি সেই সময় আহারে ব্যস্ত ছিলো, মনে হয়েছিলো সে এই পার থেকে ওই পারে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হবে। হাতির চলাফেরা আমি লক্ষ্য করছিলাম,দেখতে দেখতে মনে হলো এ যেন কিছু বলতে চায় তার বহু জমানো কথা, বলতে চায় তার সাম্রাজ্যের করুণ ভবিষ্যতের কথা, যাকে অমানবিক নির্যাতনের চাবিকাঠি ঘোরাচ্ছে মনুষ্যত্ব। 
হাতির শরীর অনবরত বৃষ্টির ফোঁটায় চকচকে দেখাচ্ছিলো, তার দুচোখ চোখাচোখি হতে মনে হলো হয়তো এই প্রাচীন প্রাণের ভেতর রয়েছে অনেক বেদনা যা প্রকাশে অব্যর্থ। 
আস্তে আস্তে কিছু লোক জমায়েত হওয়াতে হঠাৎ সে দৌড়ে এগিয়ে আসার উপক্রম করলো। সত্যিই তখন আমার অ্যড্রিনালিন বুঝিয়ে ছিল ভয়ের সাথে সৌন্দর্য যেন দিগন্তের মিলন ক্ষেত্র, যেখানে অনন্তের আবেগ হানা দেয় বারংবার। এরপর ফরেস্ট অফিসের লোক এসে ব্ল্যঙ্ক ফায়ার করে কোনোমতে সেই হাতিকে জঙ্গলে ফিরে যেতে বাধ্য করল।
তখন আশেপাশে অল্প লোকের জমায়েত হয়েছে তবে তা, সেই চত্ত্বর থেকে খানিকটা দূরে। সেখানকার একজন লোকের সাথে কথা বলে জানলাম, এই হাতি প্রায় উনিশ জনকে মেরেছে, তাই ওনারা তাকে "খুনি" বলেই ডাকে। এও জানতে পারলাম যে তাদের চোখের সামনেই এক বাসিন্দাকে নির্যাতন করে মেরেছে। 
এই শুনে ভাবলাম তাহলে আমি তো হাতির অনেকটাই কাছে ছিলাম, না থাকাটাই উচিৎ ছিল তবে কাছে থেকে তার এই সর্বশক্তির পরিচয় যেন তার সৌন্দর্যে মলিন হয়ে যাচ্ছিল, আকৃষ্ট হচ্ছিল মন প্রাণের শত শত একাকী আবেগ। 
এরপর আমরা সেই স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিলাম।
তবে তার বিশালতা, তার সৌন্দর্য, তার মায়াবি লালসার প্রতিকৃতি আমাকে এখনো ভাবায়। এখনো মনে করায় সেই বর্ষার জংলি প্রাণদের কথা, মনে করায় দীর্ঘ গাছেদের ঐকতান, তাদের স্নিগ্ধ গন্ধ। মনে হয় শুধু বারংবার,
"হাতির চাহনি যেন শুধুই খাওয়ার খোঁজে, হিংসার খোঁজে নয়"।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri