সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
04-August,2024 - Sunday ✍️ By- রাকা মুখোপাধ্যায় 231

বন্য শ্রাবণ/রাকা মুখোপাধ্যায়

বন্য শ্রাবণ 
রাকা মুখোপাধ্যায়

সেদিন ছিল শ্রাবণী পূর্ণিমা। একদিকে পশ্চিমের আকাশে যখন গোধূলিরাঙা সূর্য অস্তাচলে, অপরদিকে পুবের আকাশে হালকা নীল প্রচ্ছদপটে জেগে উঠেছে পাঁশুটে হলুদ চাঁদ। সারা আকাশ জুড়ে চলছে রঙের খেলা, যেন অলক্ষে কোন শিল্পী ক্যানভাস ভরিয়ে চলেছে তুলির আঁচড়ে আঁচড়ে। আকাশ জুড়ে মেঘেরাও যেন মেতে রয়েছে পূর্বরাগের খেলায়।

সুতনু আর রায়া বন্ধুদের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে এসেছে বেড়াতে। সেদিন সকালেই কঙ্কালীতলায় পুজো দিতে গিয়ে সুতনুর পাশে যখন রায়া দাঁড়িয়ে ছিল তখন অদ্ভুত এক আশীর্বাদ যেন ঝরে পড়েছিল তাদের উপরে। সেই অনুভূতির আবেশটা রায়ার মন জুড়ে রয়েছে সারাটা দিন।

বিকেল হতেই সকলে মিলে তারা এলো সোনাঝুরির হাটে। বন্ধুরা সকলে যখন ব্যস্ত কেনাকাটায়, সুতনু আর রায়া হাঁটা লাগালো খোয়াইয়ের বনের পথে। কনেদেখা রাঙা আলোয় যখন সেজে উঠেছে শালবনের জঙ্গল তখন তার বুকের মাঝখান দিয়ে হাতে হাত রেখে হেঁটে চলেছে সুতনু আর রায়া। এই মায়াবী রোমান্টিক পরিবেশে আর চেপে রাখতে পারল না তারা নিজেদের আবেগকে, গেয়ে উঠল - এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়... তারপর একের পর এক গান গেয়ে চলল দুজনে নিস্তব্ধ নিরালা বনের পথে পথে। কোন সময় যেন হাত ছেড়ে সুতনু জড়িয়ে নিয়েছে রায়াকে বুকের পাশে... ওভাবেই হেঁটে চলেছে ওরা কোন এক নিরুদ্দেশের পথে।

ততক্ষণে গোধূলি বিদায় নিয়েছে সেদিনের মত। আঁধার ঘিরে আসছে ক্রমশ। একটু এগোতেই ওরা দেখে এক যুগল মূর্তি একটা শাল গাছের গায়ে লেপ্টে রয়েছে... একটু ঠাহর করতেই বুঝল সাঁওতাল এক নারী পুরুষ এই প্রকৃতির বুকে ছবির মত গভীর চুম্বনে লিপ্ত। পুরুষটির নগ্ন সুঠাম দেহ জাপটে রেখেছে তার সঙ্গিনীকে যেন শঙ্খ লাগার পূর্ব মুহূর্তের খেলায় মেতে রয়েছে দুজনে।

থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল ওরা দুজন। খুব সাবধানে অন্য পথের দিকে পা বাড়াল ওরা সাঁওতালী দুজনকে একটুও বিরক্ত না করে।
স্তম্ভিত ওদের গানও থেমে গেছে কখন। একটু এগিয়ে রায়াকে টেনে নিয়ে একটা গাছের তলায় বসল সুতনু। দুজনে বেশ কিছুক্ষণ দুজনকে ছুঁয়ে নির্বাক বসে রইল। ওরা যেন কথাও হারিয়ে ফেলেছে, তবু দুজনের মধ্যে অদ্ভুত এক তরঙ্গ খেলা করে চলেছে অবিরাম। শ্রাবণের মেঘমল্লারের সুর ভেসে চলেছে দুজনের হৃদয়ের মাঝে।

মায়াবী আঁধারে সুতনু রায়াকে টেনে নিল কাছে, গভীর চুম্বনে ভরিয়ে তুলল রায়াকে। কতক্ষণ ওরা পরস্পরের আলিঙ্গনাবদ্ধ ছিল  খেয়াল নেই।  হঠাৎ বৃষ্টির ছাঁটে তাদের সম্বিত ফিরে এল। দেখল শ্রাবণের ভাসা মেঘের বৃষ্টিতে ওরা ভিজে গেছে। 

অনেকটা দেরি হয়ে গেছে খেয়াল হতেই তারা আবার হাঁটা লাগাল। কিন্তু খানিকটা চলার পরেই ওরা বুঝল রাস্তা হারিয়েছে। কোথাও কোনও জনমানব নেই যে জিজ্ঞেস করবে। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল ওরা, তারপর আবার অন্য রাস্তা ধরল। মেঘ সরে গিয়ে কালো আকাশের বুকে তখন সোনার থালার মত চাঁদ জোছনায় ভরিয়ে দিচ্ছে চারপাশ। ঘন বনে গাছেদের ফাঁকে ফাঁকে সেই আলো যেন লুকোচুরি খেলছে আর তারই মধ্যে এগিয়ে চলেছে দুজনে গন্তব্য খুঁজে পেতে। 

খানিকটা চলার পর দূরে রাস্তার আলো দেখা গেল। আরও জোরে এবারে পা চালিয়ে পৌঁছল শেষে সোনাঝুড়ির নিভে যাওয়া হাটে বন্ধুদের ঠিকানায়। ওদের দিকে তাকিয়ে সবাই অবাক তখন। একজন জিজ্ঞেস করল, "কিরে কোথায় ছিলি তোরা? কখন থেকে ভাবছি তোদের জন্য!"

রায়া শুধু উত্তর দিল, "হারিয়ে গেছিলাম।"

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri