বনবস্তিবাসীদের সুখ দুঃখে পাশে থাকুক বনদপ্তর/গৌতম চক্রবর্তী
বনবস্তিবাসীদের সুখ দুঃখে পাশে থাকুক বনদপ্তর
গৌতম চক্রবর্তী
বয়সটা ৭০ পেড়িয়েছে বেশ কিছুদিন আগেই। জীর্ণ শরীরটা আজ আর সেভাবে কাজ করতে পারে না মোটেই। তবে তাতে কী! লাটাগুড়ির জঙ্গলে সুরসুতি বনবস্তির বালু ওরাওঁ নিজের লাগানো ৫০০-র ও বেশি গাছকে যে কোনও মূল্যে বাঁচাতে প্রস্তুত। একা বালুই শুধু নন, এই বস্তির প্রায় ৩৫ পরিবারের সমস্ত সদস্যই এভাবে জঙ্গল রক্ষায় সদা তৎপর। এই বনবস্তির প্রবীণ-নবীনদের হাত ধরেই নিশ্চিন্ত লাটাগুড়ির জঙ্গল। প্রতিবছর অরণ্য দিবসে চারা বিতরণ করা হলেও এর মধ্যে কটা গাছ বেঁচে থাকে তার কোন খোঁজখবর রাখে না বন বিভাগ। উত্তরের জঙ্গল সহ ঝাড়খন্ড এবং ভুটান পাহাড়ের অরণ্যে জঙ্গিদের গোপন ডেরা গড়ে উঠছে। অর্থের উৎস হিসাবে বৃক্ষ এবং বন্যপ্রাণীকে তারা ধ্বংস করছে ব্যাপকভাবে। সৃষ্টি হচ্ছে কতকগুলি ভয়াবহ প্রাকৃতিক পরিবেশ সমস্যা। কিন্তু সুরসুতি বনবস্তির এই জঙ্গল প্রেম নিশ্চিতভাবে আমাদের পৃথিবীটাকে আরও সবুজে রাঙানোর স্বপ্ন দেখাবে। জঙ্গল থাকলে সবাই বাঁচবে। করোনা পরিস্থিতিতে বিষয়টি সাধারণ মানুষ ভালোভাবেই বুঝেছেন। খুব সাধারণ এই বিষয়টি জঙ্গলে ঘেরা সুরসুতি বনবস্তির প্রায় ৩৫ পরিবারের সদস্যরা অবশ্য অনেক আগেই বুঝেছিলেন। বন দপ্তর সূত্রে খবর, বছর পঞ্চাশেক আগে দপ্তরের তরফে লাটাগুড়ির জঙ্গলের বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগানোর কাজ শুরু হয়। সুরসুতি বনবস্তির পুরুষদেরকেই একাজে লাগানো হয়েছিল। সামান্য অর্থের বিনিময়ে বনবস্তিবাসী বাবলু ওরাওঁ, চইতু ওরাওঁ, বিনসাই ওরাওঁরা কয়েক দশক ধরে ফাঁকা জমিতে চারাগাছ লাগিয়ে এলাকাকে সবুজ করে তোলেন। গ্রামের বেশিরভাগ যুবকই আজকাল গরুমারার জঙ্গলে গাইডের কাজ করে সংসার চালান। তারা জঙ্গলকে জীবন দিয়েছেন। জঙ্গল তাদের জীবন দিয়েছে।
বন্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সংঘাত উত্তরবঙ্গের দীর্ঘদিনের সমস্যা। হাতি মানুষের সংঘাতও উত্তরবঙ্গে নতুন কোন ঘটনা নয়। হাতির হামলা প্রায়ই হয় বিভিন্ন বনবস্তিগুলিতে। হাতি এবং মানুষের সংঘাত এবং মৃত্যুর ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না। জঙ্গল ছেড়ে খাবারের খোঁজে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসার ঘটনা নতুন কোন কিছু নয়। বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে গত পাঁচ বছরের হিসেবে প্রতি বছর গড়ে রাজ্যে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে উত্তরবঙ্গে সংখ্যাটা বেশি। বন্যপ্রাণীর আক্রমণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আবার অনেকে বন্যপ্রাণীর হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে। এখন বন্যপ্রাণীর আক্রমণে কেউ গুরুতর আহত হলে ক্ষতিপূরণের অর্থ এক লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুইলক্ষ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে বন্যপ্রাণীর আক্রমণে কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণের অর্থ আড়াই লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লক্ষ টাকা করা হয়েছে। যেভাবে বন সংলগ্ন এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠছে তাতে আগামী দিনে সংখ্যাটা আরো বাড়বে বলে মনে করছে বনদপ্তর। হাতির হামলা বা আক্রমণের কারণে মৃত্যু হলে তার পরিবারকে রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিন্তু টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় লেগে যায়। ফলে চরম সমস্যায় পড়তে হয় মৃতের পরিবারকে। তাই বন ও বস্তিবাসীদের জীবন বীমার আওতায় আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিক রাজ্যের বনদপ্তর। যদি বীমা করা থেকে তাহলে বীমার টাকা পেলে মৃতের পরিবারটি সাময়িক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারবে। হাতি অধ্যূষিত এলাকার বস্তিবাসীদের বীমার আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
প্রশ্ন উঠতে পারে প্রিমিয়াম কে কিভাবে দেবে? উত্তরে বলা যায়, বনবস্তিবাসীদের নিয়ে গড়ে তোলা ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি বীমা সংস্থাকে প্রিমিয়াম দিতে পারে। অর্থাৎ বীমার জন্য টাকা খরচ করতে হবে না বস্তিবাসীদের। প্রতিটি ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে বীমার টাকা দিক সরকার। বীমা করা হোক পাঁচ বছরের জন্য। বিকল্প হিসাবে হাতি অধ্যূষিত এলাকার বস্তিবাসীদের নামের তালিকা তৈরি করুক ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি। বনবস্তিবাসী মানুষেরা স্বল্পহারে বীমার প্রিমিয়ামের টাকা দিয়ে দেবে ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির মাধ্যমে সরকারের কাছে। বীমা কোম্পানির গ্যারান্টার হবে বনদপ্তর। আসলে বন সংরক্ষণের কাজে সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। বনসম্পদ রক্ষা থেকে শুরু করে জীববৈচিত্রকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবেশবিদ, পরিবেশপ্রেমী এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নজরদারি বাড়াতে হবে। বেআইনি পথে গাছ কাটা, কাঠ পাচার বন্ধ করার জন্য নিয়মনীতি আরো কড়া হওয়া দরকার। বনদপ্তর কর্মীর অভাব, পরিকাঠামোর দূর্বলতা ইত্যাদি অজুহাত দিয়ে থাকে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এবং নিজেদের না পারাকে ঢাকা দেওয়ার জন্য। ডুয়ার্সের অরণ্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে বা যাচ্ছে একথা সম্পূর্ণভাবে মেনে নেওয়া খুবই কষ্টদায়ক। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যা তাতে অস্বীকার করা যাবে না যে, কি বিপুল সম্পদের ক্ষতিসাধন ঘটেছে ডুয়ার্সের জঙ্গলে। আসলে দেশের আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোর উন্নতি করা সম্ভব হলেই বন এবং বন্যপ্রাণীরা বাঁচবে। বন নিয়ে ভাবনা কাগজ-কলমেই, কিন্তু ঘটা করে পালিত হয় অরণ্যদিবস। তাই শুধুমাত্র অরণ্য সপ্তাহ পালন করা নয়, যেতে হবে অরণ্য সংলগ্ন গ্রাম এবং বনবস্তিগুলিতে।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের গাছ বেআইনিভাবে কাটার ঘটনা নতুন কিছু নয়। একসময় এই কাজে আধিপত্য ছিল পুরুষদের। কিন্তু বনরক্ষীদের হাতে ধরা পড়া, জরিমানা, আদালত, জেল ইত্যাদি কম হয়নি। এরপর কৌশল বদলেছে কাঠচোরেরা। পুরুষদের বদলে অনেক সময় জঙ্গলে ঢুকছে মহিলারা। বনকর্মীরাই জানিয়েছেন, এইসব মহিলা কাঠচোরদের ধরার ক্ষেত্রে সমস্যা হল কোন মহিলা বনরক্ষী না থাকা। ফলে ছোট গাছ থেকে বড় গাছ কেটে নিচ্ছিল মেয়েরা। পুরুষ বনরক্ষীরা তাদের ধরতে গেলে শ্লীলতাহানীর আওয়াজ তোলার হুমকিও দিত তারা। সমস্যার কথা শুনে সেখানেই এগিয়ে আসেন পাঁচজন স্থানীয় গৃহবধূ। তাঁরা জানান, তাঁরাই জঙ্গল পাহাড়া দেবেন। বিষয়টি বনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জানানো হলে সিদ্ধান্ত হয় আপাতত পাঁচজনকে জঙ্গল পাহাড়ার কাজে লাগানো হবে। সেই অনুযায়ী ওই পাঁচ গৃহবধূকে নিয়ে জঙ্গল পাহাড়ার কাজ শুরু হয় এবং ফল মেলে দ্রুত। ধরা পড়ে কাঠ চুরি করতে আসা আট মহিলা। আদায় করা হয় জরিমানা বাবদ ত্রিশ হাজার টাকা। ক্ষেত্রসমীক্ষাতে গিয়ে যখন পাঁচ গৃহবধূর সঙ্গে কথা বললাম তখন তারা জানালেন, একসময়ে তারা নিজেরাই বেআইনিভাবে জঙ্গলের কাঠ কেটে জঙ্গলের প্রচুর ক্ষতি করেছেন। জঙ্গল ধ্বংসের ক্ষেত্রে তাদের নেতিবাচক ভূমিকা ছিল। আজ তারাই লাঠি হাতে সেই জঙ্গল পাহাড়া দিচ্ছেন। জঙ্গল ধ্বংসের কারণেই আজ হাতি, বাইসন সহ অন্য বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে এবং ক্ষতি করছে ব্যাপক। সুতরাং তাঁরা আর জঙ্গল ধ্বংস হতে দেবেন না বা জঙ্গল রক্ষার স্বার্থে কাউকেও ছাড়বেন না। কিন্তু তাদেরকে যদি স্থায়ী না করা যায় তাহলে এলাকায় তাদের বাস করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলে চিন্তায় গৃহবধূরা। মাঝেমধ্যেই তাদেরকে হুমকির শিকার হতে হয়। তাই তাঁরা চান তাদেরকে সারাবছর কাজে রাখা হোক। একটু ভাববে কি বনদপ্তর?
বনের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের বাস্তব অবস্থাকে উপেক্ষা করে পরিবেশ রক্ষা করা কখনও সম্ভব নয়। ৭৭ টি বনবস্তিতে বসবাসকারী প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ বনভূমি সংলগ্ন অঞ্চলে বসবাস করেও সরকার থেকে তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। বন সংক্রান্ত আইন কানুনের কঠোরতা এবং সুপ্রিম কোর্টের বাধা-নিষেধ অতি সহজে বনজ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। জলপাইগুড়ি জেলাতে রয়েছে বিপুল অরণ্য সম্পদ। কিন্তু দূর্ভাগ্য এই বিপুল অরণ্য সম্পদ জেলার অর্থনীতিতে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারেনি। বনবিভাগ বনবস্তির মানুষের উন্নয়ণের জন্য বনসুরক্ষা কমিটি এবং পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু এই সকল মানুষ আবার পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সরকারি বিভাগের যে সকল পরিষেবা রয়েছে তার বাইরে রয়ে গেছে। বনবিভাগ অরণ্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষদের অরণ্যের বাইরে পূনর্বাসনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু কয়েকটি বিক্ষিপ্ত জায়গা ছাড়া এটা কার্যকর হয় নি। জেলার মূলস্রোতের বাইরে জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় বিষয় যেমন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত এই সকল বনবস্তির মানুষেরা অতি দারিদ্র্যের মধ্যে তাদের অস্তিত্বটুকু কোনরকমে টিকিয়ে রেখেছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য এই ধরনের আইন কানুন এর প্রয়োজন রয়েছে। পূর্বপুরুষের ভিটাতে বসবাসকারী এই সকল মানুষকে অরণ্যের বাইরে আনতে হলে তাদের আরো বেশি সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। বনবস্তিতে বসবাসকারী মানুষের সমস্যা দূর করতে হলে প্রয়োজনীয় সকল পরিষেবাগুলিকে এদের কাছ পর্যন্ত যাতে পৌঁছায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি সরকারিভাবে পরিষেবাগুলি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে বেসরকারি সাহায্য নেওয়া দরকার।
ক্ষেত্রসমীক্ষা করতে গিয়ে চোখে পড়ল বক্সা এলাকাতে পরীক্ষামূলকভাবে এরকম একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। এখানে ১১ টি বনবস্তিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সরকারি সহযোগিতায় শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। ঝোড়ার জলকে ক্যানেল কেটে জমিতে নিয়ে গিয়ে সেচ দেওয়ার একটি উদ্যোগ আলিপুরদুয়ারের চিলাপাতা জঙ্গল এর বস্তির মানুষজন গ্রহণ করেছেন। জেলার অন্যান্য বনবস্তিতে এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একসময়ে অরণ্য ছিল বনবাসীদের জীবন এবং জীবিকার প্রধান অবলম্বন। বনের যে কোন জায়গা পরিষ্কার করে তারা ঝুমচাষ করতো। বনের পশুপাখি, ফলমূল, কাঠ, ধূপ, মধু, নদীর মাছ, সবকিছুর ওপর ছিল তাদের অবাধ অধিকার। আজ তারা অরণ্যের অধিকার হারিয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবার ফলে চুক্তিবদ্ধ বন শ্রমিকেরা আজ আর তেমন কাজ পাচ্ছে না। গত ১০০ বছরে বনবস্তিগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবার ফলে পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে বন আইন হয়েছে আরও কড়া। বনবস্তির মানুষ এবং বনসংলগ্ন গ্রামের মানুষ কর্মসংস্থানের অভাবে অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বনের ওপর। রাজনৈতিক মদৎপুষ্ট একশ্রেণীর কাঠ মাফিয়ারা সংগঠিতভাবে জঙ্গলমহল লুন্ঠন করার ফলে তার দায় এসে পড়ছে বনবাসীদের ওপর। জঙ্গল থেকে বনবস্তি সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। কারণ যারা জঙ্গলের কাছাকাছি বসবাস করছে অথবা বনের জমিতে বসবাস করছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া মুশকিল। চোরাকারবারিদের চক্র গত কয়েকদশক ধরে ব্যাপকহারে বন লোপাট এবং চোরাশিকারে লিপ্ত। সংগঠিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে লড়াই করা বনসুরক্ষা কমিটির পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে কোটি টাকা মূল্যের চোরাই কাঠ মজুত রয়েছে। এই কাঠ উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘাতে যেতে হচ্ছে বনকর্মীদের। রুটি রুজির কোন বিকল্প ব্যাবস্থা না থাকার ফলে গাছ কাটাকেই বিকল্প পেশা হিসাবে বেছে নিচ্ছেন জঙ্গল এলাকার একশ্রেণির মানুষ। বিভিন্ন সরকারি স্বনির্ভর প্রকল্প চালু করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কাঁচা টাকার লোভ দেখিয়ে এদেরকে দিয়ে কাজ হাসিল করে নিচ্ছে একশ্রেণীর কাঠ ব্যবসায়ী। কিন্তু কখনই সামনে আসছেন না তারা। ফড়ে বা দালাল নিয়োগ করে জঙ্গলের মানুষদের দিয়ে তারা কাজ করাচ্ছে। একদিকে বন ধ্বংস এবং চোরাশিকার প্রতিরোধ এবং অন্যদিকে বস্তির মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। যারা গাছ কাটার কাজে নিযুক্ত তাদেরকে চিহ্নিত করে বন পাহাড়ার কাজে নিযুক্ত করে উপার্জনের সুযোগ করে দিলে সুফল মিলতে পারে। বনবিভাগের আর্থিক সাহায্যে পুকুর খনন করে বস্তির মানুষকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে মৎস্য চাষ করা যেতে পারে। পোল্ট্রি, মৌমাছি চাষ, রেশম চাষ, ডেয়ারি ইত্যাদি স্বনিযুক্তি প্রকল্পের মাধ্যমে বনবাসীদের স্বনির্ভর করতে হবে। তবেই বনসুরক্ষার পাশাপাশি সুরক্ষিত হবে পরিবেশও। জঙ্গল রক্ষার কাজে বনবস্তি এলাকার বেশকিছু পরিবারকে বেছে নিয়ে তাদেরকে ধান, মটর, সরষে, চিনা বাদাম চাষের পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে, সুপারি এবং কলাগাছের চারা বনবস্তিবাসীদের মধ্যে বিলি করে, গাছ লাগানোর মাধ্যমে তাদেরকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে চেষ্টা চালাতে হবে। জঙ্গলকে বাঁচাতে সম্মিলিত উদ্যোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বনবিভাগের স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴