বখাটে/ভাস্বতী রায়
বখাটে
ভাস্বতী রায়
"উফ বড্ড দেরি করছে মেয়েটা, বারোটা বাজতে চলল" বিড়বিড় করতে করতে ড্রয়িং রুমের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পায়চারি করতে থাকে পরী।
পরী - পরিনীতা ব্যানার্জি, পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার, ছোটোবেলাটা কেটেছে খুব অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে। মাকে দেখত সংসারের সমস্ত কাজ মুখে রক্ত তুলে করার পর সকলের কাছ থেকে পেত অবহেলা, উপেক্ষা। কখনও কখনও মদ্যপ বাবা মায়ের গায়ে হাতও তুলত। সেই থেকেই বিয়েতে তাঁর বড্ড ভয়। ছোট থেকে সেলাইফোড়াইয়ে খুব শখ ছিল। তাই স্বপ্ন দেখত বড়ো হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার। বছর পয়তাল্লিশের পরী আজ মস্ত বড় ফ্যাশন ডিজাইনার।
পরীর মেয়ে অষ্টাদশী প্রজ্ঞা। না, প্রজ্ঞা পরীর নিজের মেয়ে নয় । পরী তো বিয়েই করেনি। আজ থেকে প্রায় সতের বছর আগে দূর্গা পঞ্চমীর দিন বছর দেড়েকের প্রজ্ঞাকে নিয়ে ওর মা কাজ খুঁজতে আসে পরীর কাছে। বাচ্চাটিকে দেখে বড্ড মায়া পড়ে যায়। নিজের কাছে রেখে মানুষ করবে বলে রেখে দেয় পরী। নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে মেয়ের নাম দেয় প্রজ্ঞা। খুব যত্নে বড় করেছে ও প্রজ্ঞাকে। কোনও রকম অভাব অভিযোগের সুযোগ দেয়নি। গত এপ্রিলে আঠেরোয় পা দিয়েছে প্রজ্ঞা। আজকাল তাকে সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে পরীকে। এখন কথায় কথায় বলে "Mom I am adult now". পরী বুঝতে পারে কিছু বখাটে বন্ধুর পাল্লায় পড়েছে প্রজ্ঞা, মাঝে মাঝেই এই পার্টি ওই পার্টি আছে বলে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিছু বলতে গেলেই বলে উঠছে "তুমি তো আমার নিজের মা নও।"
আজও সেরকমই কারো জন্মদিনে যাবে বলে বেরিয়েছে প্রজ্ঞা। কিন্তু অন্যান্য দিনগুলোতে রাত নটা সাড়ে নটার মধ্যেই ফিরে আসে। আজ বারোটা বেজে গেছে কিন্তু ওর ফেরার নাম নেই। এবারে ভয় করতে লাগল পরীর। ওর সব বন্ধুবান্ধদের সঙ্গে যোগাযোগ করল কিন্তু কোথাও কোন খবর পেল না। শেষে নিজে গাড়ি নিয়ে বেরোল। সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় খোঁজ করল কিন্তু কোথাও কোন খোঁজ পেল না। শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হল। দুদিন কেটে গেছে প্রজ্ঞা বাড়ি ফেরেনি। না খেয়ে, না ঘুমিয়ে বিছানা নিয়েছে পরী। সমস্ত আত্মীয়স্বজনে গিজগিজ করছে বাড়ি।
প্রজ্ঞার খবর মিলল অবশেষে। বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে একটা পরিত্যক্ত ডোবায় প্রজ্ঞার নগ্ন ক্ষতবিক্ষত নিথর দেহটা পাওয়া গেল।
খবর পেয়ে মুর্ছা গেল পরী।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴