ফিরে এসো হলুদ পোস্টকার্ড/বেলা দে
ফিরে এসো হলুদ পোস্টকার্ড
বেলা দে
কল্যাণীয়েষু
হলুদ পোস্টকার্ড,
পুরাতনী বন্ধু আমার, কি অপার শূন্যতা ঘিরে তোমাকে উচ্চারণ।
শব্দের মাধুকরী ঝোলা ভরে হিন্দুস্থানি পিয়নকাকু সদর গেটে দাঁড়িয়ে সজোর হাঁক "চিঠ্ঠি আয়ি হ্যাঁয় খোকি" অমনি ঘুমবিছানা ছেড়ে চৌচা দৌড়, দুই আঙুলে তোমার ছোট্ট শরীরটা চেপে ধরে একছুটে মায়ের ঘরে।
বালখিল্য আচরণে অদ্ভুত এক অজানা অবোধ আনন্দ, আসলে কিছু না পাওয়া ডুয়ার্সের তমসাদিনে যা পেয়েছি ওতেই সুখ, তোমার কারণে এই প্রতীক্ষা কেন সেদিন বুঝিনি, পরে খুঁজে পেয়েছি নওল কিশোরীবেলায়। এই টান এই আকর্ষণে লেগে আছে তোমার প্রতি ভালোবাসা। আবার নৈরাশ্যের জন্য দায়ী করেছি যুবতীকালে উন্মনা দিনে দূরান্তবন্ধুর সাথে পত্রালাপের দীর্ঘ বিরতি হলে, মনখারাপিয়া বাঁশি বেজে উঠেছে হপ্তায় একটা দিন কথালিপিভরে তুমি না এলে, উদরস্থ তোমাদের নিয়ে বসে থাকা লাল ডাকবাক্স পাড়ায় আর নেই, থাকবেই বা কেন তোমাকে মূল্যায়নে তাচ্ছিল্য করা প্রযুক্তির যে অনেক ক্ষমতা, প্রতিপত্তি। পেরে ওঠোনি তুমি, তো কি হল ডিজিটালের লম্বা হাত যতটা বড়ই হোক না পেরেছে কি ঠাকুমা দিদিমার হাতের স্পর্শগুলি দেরাজ থেকে বের করে দিতে যেখানে ছড়িয়ে আছে সহস্র সূর্যের আলো। হলুদ পোস্টকার্ড তোমার বিরাট কর্মকাণ্ডের দাম আর দেওয়া হল না তোমাকে, ঢেকে গেছো বেদনার বালুচরে। ফাউন্টেনপেন এ একপেট সুলেখাকালি দেড়পাতায় সাজানো শব্দমালার তরঙ্গ জনে-স্বজনে মানববন্ধনে নৈকট্য বজায় রাখতে কতটা শক্তিশালী অস্ত্র ছিল সে তুমি নিজেও জানো না। তুমি ফিরে এসো হলুদ পোস্টকার্ড দেরাজ ভর্তি করে রাখি না ফেরা দেশে চলে যাওয়া স্বজনের হাতছোঁয়া স্মৃতিকণাগুলি। আবার নতুন করে ছুঁই।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴