ফিরে এসো মূল্যবোধ/আলপনা নাগ সরকার
ফিরে এসো মূল্যবোধ
আলপনা নাগ সরকার
স্নেহের পার্থ,
তোমার মনের দ্বন্দ্ব নিরসনে জন্য আজ আমার এই চিঠি লেখা। বর্তমান প্রজন্ম জীবনের মূল্যবোধ সম্পর্কে এতো উদাসীন কেন ? কেন তারা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না! কেন দিন দিন একা হয়ে পড়ছে তারা ! এমন হাজার প্রশ্ন শুধু তোমার নয় , এ জিঞ্জাসা এখন সবার মনে। এর উত্তর চাইলে সন্তান জন্মের আগে পিতা মাতার ভাব জানা বিশেষ প্রয়োজন।
ভালো শিক্ষার আগে ভালো জন্মের প্রয়োজন , সুসন্তান পেতে হলে স্বামী- স্ত্রীর যুগ্ম আহ্বান আবশ্যক। তাদের উন্নত মানসিকতা, ছোটখাটো বিষয়ে নিখুঁত চলন এবং উভয়কেই উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তাহলে বুঝতেই পারছ শিশুর জীবন সুন্দর ও সুষ্ঠ করতে ঘরের শিক্ষা পরিচ্ছন্ন ও মনোবিজ্ঞান ভিত্তিক হওয়া দরকার। জন্মের পর যে মানুষটির অস্তিত্বের উপর শিশু সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে , তিনি হলেন তার মা।তার অন্তরের যোগাবেগ প্রকৃতিগত ভাবেই নিবদ্ধ মায়ের সাথে। তাই উপনিষদ শিক্ষার প্রথম কথাই হল " মাতৃ দেবো ভব ।" এরপর শিশু তার পাশে আর একটি স্নেহময় প্রাণ দেখতে পায়- তিনি সব সময় তাকে আনন্দ দেন , তার কল্যাণ সাধনে সজাগ - তিনি তার পিতা। তাঁকেও শিশু ভরসা করে। তাই উপনিষদের দ্বিতীয় কথাই হল " পিতৃ দেবো ভব " অর্থাৎ পিতাকে দেবতা জ্ঞানে ভক্তি করা। তাই সন্তানের সার্বিক বিকাশে মা-বাবার উপস্থিতি একান্ত কাম্য। কিন্ত বর্তমান সমাজ সংসারে প্রায়শই এর অভাব শিশুকে মানসিক ভাবে পীড়িত করে।
এবার বলি পারিবারিক শিক্ষার কথা। একান্নবর্তী পরিবার না থাকার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই শিশুর শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ঠাকুরমা-ঠাকুরদা, পিসি কাকা এবং পরিবারের সকল সদস্য নিজ নিজ ভাবে তাঁদের আচার আচরণের মধ্যে দিয়ে গল্পচ্ছলে মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়ে থাকেন। বর্তমান প্রজন্ম সেই মূল্যবান উপদেশ থেকে বঞ্চিত। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব - কর্তব্য পালন করা , অতিথি সেবা , ভিক্ষুককে ফিরিয়ে না দেওয়া, কারো সাথে রূঢ় ব্যবহার না করা,বড়োদের সম্মান করা, ছোটোদের প্রতি স্নেহশীল হওয়ার শিক্ষা গৃহ পরিবেশেই গড়ে ওঠে। পরিবারের অটুট বন্ধন শিশুকে একনিষ্ঠ করে তোলে।
বৃহত্তর জগতে প্রবেশের সোপান হল বিদ্যালয়। ছাত্রের কোমল প্রাণ গড়ে তোলার কারিগর হলেন শিক্ষক। এখন আগের মতো শিক্ষক কমে গিয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে সকল স্তরের মানুষকে। অভিভাবক, শিক্ষক, রাষ্ট্রনেতা, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, এমনকি সমাজের প্রত্যেকটি মানুষ, যাঁরা আদর্শ ভারত দেখে যেতে চান। এভাবেই আমরা সক্ষম হব আমাদের সমাজের হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধ।
এদেশের মনীষীরা বহুকাল আগে থেকেই সচেতন হবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরা তা অনুধাবন করে উঠতে পারিনি। পরিবর্তনশীল সমাজের সাথে সাথে নিজেদের পাল্টাতে হবে। আধুনিক শিক্ষিত মানুষ সমস্ত সংস্কারের বাইরে গিয়ে ছাত্রদের সাথে বন্ধু মনোভাবাপন্ন আচরণের মধ্যে দিয়ে তাদের সুহৃদ হয়ে উঠতে হবে, তাদের মনের কথা যাতে তারা খোলা মনে বলতে পারে - তেমন ভাবে তাদের সাথে মিশতে হবে। বোঝাতে হবে যাতে তারা নিজেদের সমস্যা গুলো আমাদের সাথে ভাগ করে নিতে পারে। এতে একদিকে যেমন সমস্যা গুলো দ্রুত সমাধান হবে, অন্য দিকে ছাত্র ছাত্রীরা অনায়াসে উন্নত আদর্শ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত দেখে মানষিক বলে বলিয়ান হয়ে উঠতে পারবে।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা নিও। সবাই ভালো থেকো।
ইতি
আলপনাদি
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴