ফিরিয়ে দিও/ব্রততী দাস
ফিরিয়ে দিও
ব্রততী দাস
প্রিয় সময়,
আজকের অস্তমিত সূর্যকে কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই তুমি পুরোনো করে দেবে জানি। যে নতুন বছরকে নিয়ে এত উন্মাদনা, এত আনন্দ তোমার গতির কাছে সে ও যে শিশু। নতুন বছরটা পুরোনো হতে খুব একটা দেরি হবেনা। দাড়িপাল্লায় হয়ত পুরোনোর দিকটাই একটু বেশি ভারী থাকবে। আসলে কি বলতো, নতুনের তো কোন শেষ নেই; আর তাই শুরুও নেই। নতুনকে বোঝার আগেই তা পুরোনো হয়ে যায়।
আমার একটা দাবী আছে, বলতে পারো আবদার। কখনও কখনও পুরোনোকেও তো আবার নতুন করে ফিরিয়ে আনতে পারো। এই যে নববর্ষ, নতুন বছরের আগমনের আনন্দ, উদ্দীপনা; সেখানে নতুনের ভীড়ে হারিয়ে গেছে কত পুরোনো। আবার সেই নতুনেরাই নিমেষেই স্মৃতি হয়ে উঠছে পুরোনোর খাতায়। আসলে সবই মূহুর্তের খেলা।
যদি পারো কখনও উল্টো দিকে একবার হেঁটো। আগের প্রজন্মের কাছে যা পুরোনো, যা বাতিল এর খাতায়, অস্তিত্ব যাদের বিপন্ন, কেউ লুপ্ত আবার কেউবা লুপ্তপ্রায়; পরের প্রজন্মের কাছে তারাই যে অদেখা, অজানা। একেবারে নতুন।
নববর্ষের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে হালখাতা। আগে সেই হালখাতারও নিমন্ত্রণ আসত খামবন্দী কার্ডের আদলে। নববর্ষের কিছুদিন আগে থেকেই বাড়িতে সেই চিঠি আসার শুরু। আর আমরাও গুনতে শুরু করতাম এবার কতগুলো মিষ্টির প্যাকেট সংগ্রহ হবে। নববর্ষের কিছুদিন আগে থেকেই আরও একটা বিষয়ে আমরা দিনরাত এক করে মাঠে নেমে পরতাম। নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে কার্ড। বড়দের জন্য একরকম, বয়সে ছোটদের জন্য আবার আরেক রকম। আর বন্ধুদের মধ্যেও প্রিয় বন্ধুর জন্য অন্যদের চেয়ে আলাদা কিছু বানাতেই হবে।
আর যারা এসব ঝামেলা এড়াতে চায় তাদেরও উপায় আছে। নববর্ষের আগমনের কিছুদিন আগে থেকেই তার উপস্থিতি টের পেতাম রাস্তার দুধারে দোকানে শুভ নববর্ষ লেখা কার্ডের বাহার দেখে। দিনের শুরু হত নতুন গানের ক্যাসেটের সাথে। নববর্ষে মুক্তি পেত বেশ কিছু নতুন গানের ক্যাসেট। তারপর বাড়ির পূজো। বড়দের প্রনাম। আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে প্রনাম, শুভেচ্ছা বিনিময় আর দেদার খাওয়া-দাওয়া। পয়লা বৈশাখে আবার ইলিশ খাবার রীতি আছে। একটা ইলিশ না হলেই নয়। হারিয়ে গেছে সেইসব বৈশাখী মেলা আর পাড়ায় পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। সে এক এলাহি ব্যাপার। তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান। বসে আঁকো, ছড়ার নৃত্য, তাৎক্ষণিক অভিনয়, এক মিনিটের প্রতিযোগিতা আরও কত কিছু। নতুন জামার গন্ধ আর হালখাতার মিষ্টির প্যাকেট দুইয়ের এক অদ্ভুত যুগলবন্দী তৈরি হত সন্ধ্যায়। কিছু দোকানে আবার দিত রঙ-বেরঙের ঠান্ডা পানীয়। সেরকম একখানা দোকানের নিমন্ত্রণ পেলে তো জীবন স্বার্থক মনে হত। তবে সবশেষে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠত নতুন ক্যালেন্ডারের ছবি। কে কত ভালো ছবির ক্যালেন্ডার পেলাম সেই নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।
সত্যিই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই নববর্ষ। আজকের পয়লা বৈশাখ হয়ে উঠেছে একলা বৈশাখ।
প্রিয় সময় পারলে একবার ফিরিয়ে দিও সেইসব পুরোনোদের, যারা আজকের প্রজন্মের কাছে অচেনা-অজানা, এক্কেবারে নতুন।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴