প্রেমের চিঠি
প্রেমের চিঠি
মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ী
-------------------
পলাশতলা, ভোলাবাগান, দুই নম্বর চোরা গলি।
অনু সিস্টার,
আমাকে মনে আছে তোমার? নেই না! একজন রুগীকে কে মনে রাখে! তাও আবার সে এত সাধারণ! অথচ তুমিই আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা, জানো!
গত বছরের কথা মনে পড়ে। ফাল্গুন মাসটায় মা চলে গেল। মায়ের হাতে লাগানো হলুদ পলাশ গাছটায় তখন ফুলে ফুল! মায়ের কাজের দিন সেই ফুলেই মালা গেঁথে মায়ের ছবিতে দিলাম। সন্ধেবেলা বুকচাপা কষ্টে পাগলের মতো সাইকেল চালাচ্ছিলাম, হঠাৎ বাঁক ঘুরতেই যমদূতের মতো তেড়ে এলো ট্রাকটা। তারপর আর কিছু মনে নেই। শুধু মনে পড়ে তোমার মিষ্টি কথাগুলো আর নরম হাতের ছোঁয়া।
দুটো পা থাকতেও মায়ের কথা শুনে কাজে মন লাগাইনি, এখন একটা পা নিয়েই দিব্যি চলছি! চায়ের দোকান করেছি একটা, সাথে মেলে বিস্কুট-পাঁউরুটি। অথচ আমার রোজগার নেই বলে বাড়িতে কি অশান্তিই না হত! মা তো বোধহয় দাদা-বৌদির অমৃত বচন শুনে শুনে ভয়েই মরে গেল। ওদের সঙ্গে থাকি না আর! যখন একা বসে থাকি, তোমাকে মনে পড়ে খুব। আমাদের পলাশ গাছটা আবার হলুদ পলাশে ছেয়ে গেছে। দেখে মনে হয় ওর ভেতরে মা কোথাও লুকিয়ে আছে। ভালো লাগে, আবার কষ্টও হয়। তুমি বলেছিলে বসন্তকালে আমাদের বাড়িতে পলাশফুল দেখতে আসবে। তাই একদিন তোমার খোঁজে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। শুনলাম বেবী হয়েছে, তুমি ছুটিতে।
তোমাকে ভালোবেসে ভালো থাকি, আছি। চিঠির খামের ওপরে ঠিকানা দেওয়া থাকলো, এসো একদিন।
---বেড নং ১৭
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴