সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

প্রীতিলতা : প্রথম মহিলা শহীদ/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রীতিলতা : প্রথম মহিলা শহীদ 
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

দেশকে বৃটিশ শাসকদের হাত থেকে মুক্ত করতে অগণিত বিপ্লবী, দেশপ্রেমিক যেমন জীবন দিয়েছেন তেমনই অনেক নারী বিপ্লবীও অক্লেশে তাঁদের  জীবন দিয়েছেন।  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ঠিক তেমনই একজন মহীয়সী।  তিনি পুরুষের ছদ্মবেশে ইংরেজ দের আড্ডায় ঢুকে পড়ে, আক্রমণ করেছিলেন ইংরেজ শাসকদের।অনেক সম্ভাবনাময় এই বিপ্লবী  মাত্র একুশ বছর বয়সে প্রাণ বলিদান দিয়েছিলেন। 

 তিনিই ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম নারী শহীদ।
বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির চট্টগ্রামে ১৯১১ সালের ৫ ই মে  জন্মগ্রহণ করেন   প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।পিতা জগৎ বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মা ছিলেন প্রতিভা দেবী। তাঁর ডাক নাম ছিল রাণী এবং ছদ্মনাম ছিল ফুলতা।  ছাত্রী হিসেবে প্রীতিলতা ছিলেন খুবই উজ্জ্বল।  ক্লাস টেনে পড়তে পড়তে ইতিহাসের দিদিমণি ঊষা দি তাঁকে "ঝাঁসির রাণী লক্ষীবাঈ"  বইটি পড়তে দিয়েছিলেন। এই বইটি পড়ে প্রীতিলতার মনে স্বদেশ প্রেম জেগে উঠেছিল। ১৯২৪ সালে বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স জারী হয়। সেই অর্ডিনান্সের বলে বিপ্লবীদের বিনা বিচারে আটক করা হতো। বিপ্লবী বই পত্র এবং সাইকেল  সব গোপন করে রাখতে হতো। চট্টগ্রাম এর অনেক নেতাকে  এই আইনে আটক করা হয়েছিল।  চট্টগ্রামের বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদার প্রীতিলতার আত্মীয় ছিলেন।  সরকারের আটক করা কিছু গোপন বই পূর্ণেন্দুবাবু প্রীতিলতার কাছে রেখেছিলেন।  প্রীতিলতা লুকিয়ে লুকিয়ে সেই সব দেশপ্রেমিক বাঘাযতীন, ক্ষুদিরাম, কানাইলাল ও আরও অনেক  বিপ্লবীদের জীবন কাহিনি পড়ে,  তাঁদের আত্মবলিদান, দেশের প্রতি অনুরাগ, দেশকে ভালোবাসার কাহিনি পড়তেন। এই সব আত্মত্যাগ  তাঁর মনকে কাঁদিয়ে তুলেছিল। তিনি তার আত্মীয় পূর্ণেন্দুদা  কে  তার বিপ্লবী সংগঠনে  যোগ দেবার  ইচ্ছে প্রকাশ করেন।  পূর্ণেন্দুদা জানান সেই সময় মেয়েদের বিপ্লবী দলে নেওয়া তো দূর অস্ত মেয়েদের সাথে কথা বলাও  বিপ্লবীদের বারণ ছিল। তিনি মাষ্টারদা সূর্য সেনের সাথে দেখা করবার ইচ্ছেও  প্রকাশ করেন। 

ম্যাট্রিক পাশ করে প্রীতিলতা ঢাকা ইডেন কলেজে পড়তে যান। সেই সময় ঢাকায় "শ্রীসংঘ " নামে একটা বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল।  শ্রীসংঘের অধীনে  দীপালি সংঘ নামে একটা শাখা সংগঠন মেয়েদের লাঠিখেলা, মুষ্ঠি যুদ্ধ প্রভৃতি শিক্ষা দিত। প্রীতিলতা  দীপালি সংঘের সদস্য হয়ে এই সব বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠলেন। প্রীতিলতার ইচ্ছে ছিল মাষ্টারদা সূর্য সেনের সহযোদ্ধা হয়ে ওঠা। ১৯২৯ সালের মে মাসে মাষ্টারদা সূর্য সেন চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে  চট্টগ্রামে জেলা  সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে  কংগ্রেস নেত্রী লতিকা বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় কংগ্রেসের  সম্মেলন। প্রীতিলতার বন্ধুরা এবং কোলকাতা থেকে এসেছেন কল্পনা দত্ত। তাঁদের সবার  ইচ্ছে ছিল মাষ্টারদার সাথে দেখা করা।  কিন্তু সেবার মাষ্টারদা সূর্য সেনের সাথে  সম্ভব হল না।

প্রীতিলতা কলকাতায় এলেন পড়াশোনা করতে। সেই সময় চট্টগ্রামের যুবকরা জোট বেঁধেছে। একদল রেল যোগাযোগ  বিছিন্ন এবং  টেলিফোনের তার বিচ্ছিন্ন করার কাজ করে চলেছেন। মাষ্টারদা চট্টগ্রামে বিপ্লবী যুবকদের নিয়ে পরিকল্পনা করলেন অস্ত্রগার লুন্ঠনের।

কোলকাতা থেকে প্রীতিলতা চট্টগ্রামে ফিরে গেলেন। একটি নামি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ পেলেন।  মাষ্টারদার সাথে দেখা করার আগ্রহ খুবই প্রবল। মাষ্টারদা একনজরেই প্রীতিলতা কে চিনে নিলেন। প্রীতিলতা ইতিমধ্যে  ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি  মনোরঞ্জন বাবুর অনুরোধে  রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে জেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সেকথা কল্পনা দত্ত মাষ্টারদাকে জানিয়েছিলেন। 

মাষ্টারদা প্রীতিলতার সাহস এবং দেশপ্রেম দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। মাষ্টারদা বলেছিলেন, "আমি জানি এদেশের মেয়েরা ছেলেদের থেকে কোনো অংশে কম নয়।"

মাষ্টারদা প্রীতিলতা এবং কল্পনা দত্তকে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির সদস্য পদ প্রদান করেন। তিনি তাদের লাঠিখেলার পাশাপাশি বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন।
এরমধ্যেই একদিন মাষ্টারদার নির্দেশে ( কোনো   এক মেঘলা সন্ধ্যায়) মা, বাবাকে সীতাকুণ্ডে যাবার কথা বলে প্রীতিলতা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। ১৯৩২ সালের ১২ ই জুন  মাষ্টারদার লোকজন তাঁকে ধলঘাটে সাবিত্রী মাসিমার বাড়িতে সূর্য সেনের কাছে দেখা করেন। মাষ্টারদা প্রীতিলতার লেখার খাতা দেখতে চান এবং তাঁর লেখা গুলো  বিপ্লবী পত্রিকায় ছাপানোর নির্দেশ দেন। তাঁকে এবং  ডিনামাইট ষড়যন্ত্র মামলার আসামি অপূর্বকে সাথে তাঁদের ভবিষ্যতের কর্মপন্থা সম্পর্কে সব বলে দিয়ে বললেন,  "আমরা এখন কোনো অংশে ফেলনা নই, বৃটিশ সরকার  তাঁর  মাথার দাম দাম দশ হাজার টাকা ধার্য  করেছেন।  ্ইতিমধ্যে  সাবিত্রী দেবীর বাড়ির এই আস্তানার খবর বৃটিশ সরকারের কানে পৌঁছে গেছে।  ১৩ ই জুন পুরস্কার এবং পদোন্নতির আশা নিয়ে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন দুই জন সাব ইন্সপেক্টর, সাত জন সিপাই এবং দুজন কনস্টেবল  নিয়ে  সাবিত্রী মাসিমার বাড়ি  আক্রমণ করে। বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী   নির্মল বাবুর শরীর খারাপ বলে তিনি রাতের খাবার খাবেন না, জানালেন।  মাষ্টারদাও  শুয়ে পড়েছেন। প্রীতিলতাকে সবেমাত্র সাবিত্রী মাসিমা খেতে দিয়েছেন, এমন সময় হঠাৎ  পুলিশকে দেখে খাওয়া ফেলে  দিয়ে সাবিত্রী মাসিমার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেলেন প্রীতিলতা।  ততক্ষণে পুলিশের গুলিতে নির্মল বাবু শহীদ হয়েছেন। পুলিশের নজর পড়েছে  প্রীতিলতার উপর। 

প্রীতিলতা পালিয়ে গিয়ে প্রাণে  বেঁচে ফিরলেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায়  ইউরীপিয়ান ক্লাবে চলত মদ্যপান আর মোচ্ছব।  বছর দুই  আগে মাষ্টারদা ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করতে গিয়েছিলেন।    প্রথম আক্রমণের দিনটি  গুড ফ্রাই ডে থাকায় ক্লাব বন্ধ ছিল।  ক্লাবের দেওয়ালে ভারতীয়দের অপমান করে লেখা হয়েছিল,  " এই ক্লাবে ভারতীয়দের ও কুকুরদের প্রবেশ নিষেধ। " এই অপমানের জবাব দিতে ২৪ শে সেপ্টেম্বরে পুনরায়  ইউরোপিয়ান ক্লাব  আক্রমণের দিন স্থির করা হয়।  ঠিক করা হয় সেই আক্রমণের নেতৃত্ব দেবেন ইইন্ডিয়ান  রিপাবলিকান আর্মির বিপ্লবী  কল্পনা দত্ত।  কিন্তু খবর পাওয়া গেল বিপ্লবী  কল্পনা দত্ত  অস্ত্র সহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন।  তখন মাষ্টারদা নির্দেশ দেন ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের নেতৃত্ব দেবেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। স্থির হল, প্রীতিলতার  সাথে থাকবেন কালীকিঙ্কর দে,বীরেশ্বর রায়,প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তী, মহেন্দ্র চৌধুরী, শুশীল দে এবং পান্না সেন। মাষ্টারদার নির্দেশ ছিল কোনো ভাবেই ইংরেজদের হাতে  বন্দী হওয়া যাবে না।  সবার কাছেই পটাশিয়াম সায়ানাইড  থাকবে, বন্দী না হয়ে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে নিজেকে শেষ করে দেবে। ইউরোপিয়ান ক্লাব  আক্রমণে গুরুতর  আহত হলেন প্রীতিলতা। তাঁকে উদ্ধার করতে চাইলে তিনি তা বারন করেন। কেননা তাঁর জন্য বাকি সকলে বৃটিশদের হাতে ধরা পড়ে যাবেন, সেটা প্রীতিলতার  ইচ্ছে ছিল না। প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে ১৯৩২ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর নিজেকে শেষ করে দিলেন।

 প্রীতিলতার আত্মবলিদানে সারা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করল  এবং স্বাধীনতার পথকে প্রশস্ত করে তুলল। 

 একজন উচ্চ শিক্ষিতা মেধাবী শিক্ষিকা, স্কুলের মাইনের টাকায় চাল ডাল কেনার টাকায়, বিপ্লবী সূর্য সেনের অস্ত্রের জোগান দেওয়া এই মহীয়সী  বিপ্লবী চিরতরে  চলে  গেলেন না ফেরার দেশে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri