প্রিয়কে খোলা চিঠি/সুকান্ত সরকার
প্রিয়কে খোলা চিঠি
সুকান্ত সরকার
------------------------
সেই দেড়শো বছর পেরিয়ে গেছে এক যুগ আগে। এখন কারো মুখে শুনতে পাই না কূল মিলেছে …তুমি তো আর নাই। কিন্তু তোমার জীবন তরী যে আমরা বেয়েই চলি। তোমার সেই সময়ের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশে বিস্তর ফারাক! আয়তনে কত বদলে গেছে এই বাংলাদেশ। সেই যে তুমি পদ্মা পাড়ে জমিদারি দেখভাল করতে যেতে শিলাইদহে, সাজাদপুরে পতিসরে—সবই এখন ভিন্নতর রাষ্ট্রের অধীন। এখন সেখানে অবশ্য তোমার স্মৃতিচিহ্ন টুকু অবশিষ্ট আছে।
সেই যে পদ্মার বালির চরে তোমার সঙ্গী হতো জগদীশ্চন্দ্র বসু। যিনি কী না কচ্ছপের ডিম খুঁজে বেড়াতেন, আজকের দিনে সেই কচ্ছপ এক বিরল প্রাণী।
আবার ‘অনন্ত গোধূলিলগ্নে সেইখানে বহি চলে ধলেশ্বরী ‘সেখানেও কী চাইলে এখন বিনা পাসপোর্টে যাওয়া সম্ভব! তোমার কাছেই জেনেছিলাম আকবর বাদশার সাথে হরিপদ কেরানীর কোনো ভেদ নেই!
আবার তোমার ছোটবেলার কথাতেই ফিরে আসি। মাস্টারমশায় মিটমিটে আলোয় পড়াচ্ছেন প্যারী সরকারের ফার্স্টবুক! তাতে প্রথমে হাই উঠত, তারপর আসতো ঘুম! এখন বিজলি বাতির যুগে তোমার মত শিশু বয়সের ছেলেদের হাই তোমার জো নেই! ওদের কত টাস্ক! ইঁদুর দৌড়ে ওরা গিনিপিগ মাত্র। তাই জানালা খুলে ওরা প্রকৃতি দেখিতে পায় না। কতগুলো বাক্সের মধ্যে ওদের থাকতে হয়। খেলার মাঠ নেই। নেই ওদের গল্প শোনাবার কেউ।
কিন্তু তুমি আমাদের জীবন জুড়ে আছো। আমাদের আনন্দে, হতাশায়,দুঃখে—
সব কিছুতেই তোমার লেখা গান আমাদের বড় আশ্রয়! তাই তো আঘাত পেলে মনে বেজে ওঠে ‘আরো আঘাত সইবে আমায়’…
তোমার তৈরি শান্তিনিকেতন এখন অশান্তির আখড়া! সেখানে এক পাহারাদার এসেছেন গুণীদের অসম্মান করতে! তোমার গান এক সময় কারো কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। তাই দেবব্রত বিশ্বাস এর মত গায়ককে এক সময় গাইতে দেওয়া হল না! তারপর এক সময় সব বিধিনিষেধ থেকে তোমার গান মুক্ত হলো। কিন্তু তুমি মুক্তি পেলে কই! এখন ক্ষমতা থাকতে তোমার গান গাইতে সুর লাগে না!
তোমাকে কখনো লিখবো ভাবতেই পারিনি। সেই শৈশবে গ্রামোফোনে চিন্ময়, দেবব্রত, কণিকাদের হাত ধরে তোমার সাথে পরিচয়।
এবার তাই সাহস করেই লিখেই ফেললাম। আশায় আছি রাজার বাড়ি তালা থাকলেও জবাব আসবে। কারণ এক যে আছে মানুষ, বড়র বড়…
তোমারই
এক প্রীতিমুগ্ধ
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴