প্রিয় বন্য ঝোরাকে/দেবলীনা দে
প্রিয় বন্য ঝোরাকে
দেবলীনা দে
প্রিয় ঝোরা,
আজ বহুবছর পর তোমাকে চিঠি লিখতে বসেছি। কী ভাবছ? হঠাৎ তোমার কথা মনে পড়ল কেন? তার উত্তরে বলি, তোমায় ভুলিনি তো কখনও, কেবল নানা ব্যস্ততায় লেখা হয়নি। আসলে বয়স বাড়লে, পুরোনো যা কিছু প্রিয় তাকে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে হয়, তাই তো এত বছর পর লেখা। আচ্ছা তোমার মনে পড়ে, সেই শৈশব কালের দিনগুলো, প্রথম যেদিন বাবা মায়ের চোখের আড়ালে তোমার সঙ্গে দেখা করতে যাই, ভীষণ কাছ থেকে তোমাকে ছুঁয়ে দেখি, খুব সম্ভবত গরমের দিন ছিল, তাই তুমি ভীষণ রকম শান্ত। আমি বাড়ির পেছনে থাকা জাম গাছের পাশ দিয়ে গড়িয়ে নেমে যাই, বাঁশ বাগানের শুকনো পাতার খসখস আওয়াজ, এই বুঝি মা টের পেয়ে গেল, তাহলেই তো বকুনি। না, সে যাত্রায় উতরে গেলাম। কিছুক্ষণ তোমার শান্ত শরীর ছুঁয়ে উপলদ্ধি করলাম, সে এক অপার শান্তি। আজও সেই মুহূর্তগুলো ভীষণ টাটকা। ধীরে ধীরে কালের নিয়মে বড় হতে হতে যখন কলম ধরতে শুরু করলাম, তোমার সঙ্গে সখ্যতা আরও গভীর হল।
বয়স বাড়লে অভিজ্ঞতা বাড়ে আর তোমার রূপ বদল নজরে এল। সময় বিশেষে তোমাকে দামাল হতে দেখেছি। সেই সময় তোমায় ছুঁয়ে দেখা হয়নি। কেবল বিকেল হলেই ছুটে যেতাম, বাড়ির পেছনের দুর্বল সাঁকোর কাছে, তার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দেখতাম, তুমি এক মাটির গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে দুরন্ত বেগে, কেউ তোমায় স্পর্শ করলেই বানভাসি। আমি অবশ্য সফেন ফেনা রাশি দেখতাম দূর থেকে। তারপর খানিক বেগ কমে আসত ঠিক আমাদের বাড়ির পেছনের বাঁশ বাগানে, যাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে। এমনি এক বর্ষণ মুখরিত রাতে ঘুম আসছিল না কিছুতেই, তোমার কলরব কানে আসছে, মনে হচ্ছিল সেই সময় যদি তোমার সঙ্গে বসে গল্প করতে পারতাম, মনের কোণে জমে থাকা কতশত কথা, তুমি ঠিক শুনতে, আমার বিশ্বাস। তোমাকে কখনও খুব কাছ থেকে বলা হয়নি, বড্ড কাছের তুমি, এটা ঠিক তোমাকে ছেড়ে আসার পর এক দুই বার গিয়েছি সে পথে ঠিকই কিন্তু খুব কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে দু'দন্ড কথা হয়নি। তাই তো আজ তোমাকে চিঠি লিখতে বসেছি। কেমন আছো, আমার মতো তোমার ও কী বয়স বাড়ছে নাকি সেই আগের মতোই কখনও শান্ত আবার কখনও দামাল। যদি কখনও সুযোগ হয় সেই পথে যাওয়ার দেখা করব, কথা দিলাম। সেই দিনের জন্য বাকি কথা তোলা থাক, আজ এই পর্যন্ত। আমার কলম থামছে। তুমি ভালো থেক, আজীবন।
-ইতি
তোমার সখী
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴