প্রবাসী পুত্রের নিকট পিতার পত্র/সরমা দেবদত্ত
প্রবাসী পুত্রের নিকট পিতার পত্র
সরমা দেবদত্ত
স্নেহের বাবি,
আশা করি তোমরা সকলে কুশল মঙ্গলে আছ। যদিও তোমাদের খবর আমি প্রতিদিনই পাচ্ছি তোমার মায়ের কাছে তবু আজ মনে হল দুকথা লিখতে, তাই লিখতে বসেছি। চাইলে ফোনে বলতে পারতাম কিন্তু ফোনে তোমার কণ্ঠস্বর শোনার পর যেন কেমন দুর্বল হয়ে পড়ি, কঠিন কথা বলতে পারি না। কিন্তু আজ আর না বলে পারছি না। না আমার জন্য নয়, তোমার মায়ের কষ্টের কথা ভেবে আমিও খুব ভালো নেই, যদিও আমার কষ্টটা তোমার মায়ের থেকে অনেক কম।তোমারা দুই ভাই আমাদের দুজনকে ভাগ করে নিয়েছ আমরাও সেটা মেনে নিয়েছি। তোমাদের সুবিধার কথা ভেবে। কারণ, তোমরা এতই ব্যস্ত যে মা বাবা দুজনকে একসাথে যে কোন একজন নিতে পারছ না। অথচ আমাদের কিন্তু তোমাদের দুজনকে একসাথে বড় করতে কোনো অসুবিধে হয়নি। যাক সেসব কথা, সেটা আমরা আমাদের কর্তব্য পালন মনে করেছি। যেকথা বলব বলে মনে করেছি তা হল তোমার মায়ের ভাষা সমস্যা। তোমরা দুজনেই যখন অফিস চলে যাচ্ছে তখন তোমার মা একদম একা হয়ে যাচ্ছেন। কারুর সাথে কথা বলতে পারছেন না, কারণ বিদেশে বাংলা ভাষা কেই বা বলবেন! যদিও পাশে দুজন ভারতীয় মহিলা রয়েছেন কিন্তু তারাও নাকি একজন পাঞ্জাবি আর একজন মারাঠি। তাই তাকে সারাদিন বোবা হয়ে থাকতে হয়। এযে কী অসহনীয় বেদনাদায়ক তা শুধু ভুক্তভোগীই জানে। আবার তোমারাও নাকি বাড়ি ফিরে অফিসের ভাষাতেই কথা বল। অবশ্য তোমার কাছে এসব অরণ্যে রোদন মনে
হতে পারে।
তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা দুজন আর তোমাদের গলগ্রহ হয়ে থাকব না। তুমি তোমার মা কে যেভাবে হোক রেখে যাও। আমি এখনও সত্তর বছর বয়সে ওর দায়িত্ব নিতে সক্ষম। আমাদের ব্যবস্থা আমরাই করব আর তোমরাও দায়িত্ব মুক্ত হবে। আর বিশেষ কিছু লেখার নেই।
তোমরা দুজনেই খুব ভালো থেকো, আমাদের স্নেহাশিস সবসময়ই তোমাদের সাথে থাকবে। অবশ্য হয়তো তোমরা
স্নেহপ্রার্থী নও।
ইতি,
শ্রী রজতাভ গাঙ্গুলি
তাং- ২৮/০৪/২৪ইং
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴