সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
13-August,2023 - Sunday ✍️ By- সোমনাথ ভট্টাচার্য 311

প্রতিদিন/সোমনাথ ভট্টাচার্য

 প্রতিদিন
সোমনাথ ভট্টাচার্য
------------------------

দুপুরবেলায় উঠোনে বড়ি দিয়ে ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম করছিল সুধা। হঠাৎ কর্ কর্ বাজ পড়ার শব্দে তন্দ্রা ছুটে গেল তার। তাড়াতাড়ি করে ঘরের বাইরে এসে দেখে আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। এক দৌড়ে গিয়ে আধভেজা বড়িগুলো ঘরে তুলে আনে সে। কত স্বপ্ন জড়িয়ে আছে এগুলোর সাথে, তা তো কাউকে বোঝানো যাবে না।

নাতি তার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হয়েছে, সারাদিন কত কথা তার মুখে। সেই যে ছেলে সুবল কাজের জন্য রাজস্হানে চলে গেল বৌ ছেলেকে সঙ্গে করে, তাও তো হল তিন বছর প্রায়। মেয়েটা বিয়ে হয়ে চলে গেল ময়নাগুড়ি, বছরে দেখা হয় এক-আধবার। আর ওদের বাবা সেই যে পাঁচবছর আগে সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল, সে কথা ভাবলেই বুকটা হুহু করে ওঠে সুধার।

একটু একটু করে টাকা জমিয়ে আগামী মাসে একটা ভালো মোবাইল ফোন কেনার ইচ্ছে তার। সেজন্য সে বাসাবাড়িতে কাজের ফাঁকে বাড়িতে বড়ি তৈরি করে তা বিক্রির জন্য চেষ্টা করছে। এই কাজে ব্যাঙ্ক থেকে লোনের ব্যবস্হা করে দিয়েছে ওদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী, ওরাই তৈরি বড়িগুলোকে নিয়ে গিয়ে বাজারে বিক্রির ব্যবস্হা করে। কিছু টাকা জমলেই একটা মোবাইল ফোন কেনার ইচ্ছে তার, ওর কাজের বাড়ির দিদিমণির মতো বড়ো ফোন। যেটা দিয়ে কথা বলা যায় আবার তার ছবিও দেখা যায়। নাতি, ছেলে আর বৌমার সাথে দেখা হয় না কতকাল। দিদিমণির মতো একটা ফোন কিনতে পারলে সেই দুঃখ দূর হবে সুধার। তাহলে ইচ্ছে করলেই ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনির সাথে কথা বলতে পারে, ওদের নিজের চোখে দেখতে পারে।

একটু পরেই এলো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, ভাগ্যিস বাজ পড়ার শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল, তা নাহলে কি দশা হত বড়িগুলোর। এই তোর্ষা পাড়ের মানুষদের বর্ষায় যে কী অবস্থা হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। একটানা বৃষ্টি বা পাহাড় থেকে জল ছাড়লে প্রতিবছর ওদের ঘরবাড়ি অনেকটা ডুবে যায়। তারপর আশ্রয় নাও গিয়ে স্কুলের ঘরে, দু-চারদিন সরকারি খাবার খেয়ে আবার ডেরায় ফিরে আসা। তখনকার বাড়িঘর হয়ে যায় একবারে নরককুন্ড, বিধ্বস্ত। দু-তিন দিন লেগে যায় সবকিছু ঠিকঠাক করতে। আবার শুরু হয়ে যায় তার নিত্যকার বৈচিত্র্যহীন কাজকর্ম।
           
হঠাৎ পাশের বাড়ির রুমার চিৎকার শোনা গেল, মনে হচ্ছে, ওর মদ্যপ বরটা আজও বুঝি ওর উপর চড়াও হয়েছে। রাজমিস্ত্রীর জোগানির কাজ করে যা হাতে পায়, তার প্রায় সবটাই মদ গাঁজা খেয়ে উড়িয়ে দিয়ে আসে। ঘরে দুটো মেয়ে আর বৌটা যে কি খাবে তার কোনো চিন্তা নেই নিমাই-এর। কাজও তো পায় না সবদিন, এখন কাজের বড় আকাল চলছে, তারমধ্যে বর্ষা মরসুমে তো ওদের কাজে খরা।
          
নাঃ, চেঁচামেচির শব্দটা ক্রমশ বাড়ছে মনে হচ্ছে, বৃষ্টিটাও ধরে এসেছে অনেকটা। একবার যাবে নাকি ওদের বাসায়, রোজ রোজ এমন গোলমাল ভালো লাগে না। মেয়ে দুটো বড় হচ্ছে, স্কুলে পড়াশোনা করছে, বাপ- মায়ের না থাক ওদের তো লাজ-লজ্জা আছে। আজ একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে, আর সহ্য করতে পারে না সুধা।
       
বেরিয়ে আসে ঘর থেকে, "বলি, তোমাদের কি লজ্জা সরম বইলা কিছু নাই রুমা, এই ভরসন্ধ্যায় এমন চেঁচামেচি শুরু করছ কেন? প্রতি দিন এইসব ভালো লাগে না কয়া দিলাম।" ঘরের থেকে বেরিয়ে আসে রুমা, "দেখেন তো মাসিমা, রোজ রোজ বাইরে থিকা এইসব অখাদ্য কুখাদ্য গিলা আইসা বাড়ি ঢুইক্যা অশান্তি। আর ভাল্লাগে না।" সুধাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে রুমা। ইতিমধ্যে ঘর থেকে ওর দুই মেয়ে বেরিয়ে এসেছে, ওরাও কাঁদছে ফুঁপিয়ে। ছোটোটা পড়ে ক্লাস ফাইভে, আর বড়োটা পড়ে ক্লাস নাইনে, ওরা কেমন অসহায়ভাবে সুধার দিকে তাকিয়ে। নিমাই বেরিয়ে আসে ঘর থেকে, "বাইরের লোক ডাইক্যা ঘরের ঝামেলা মিটাইতে গেছস্। তোদের তিনটারে ঘরেই ঢুকবার দিমু না, দেখিস অখন।" সুধা এবার মরিয়া হয়ে এগিয়ে যায়, "দেখ নিমাই, এতদিন কিছু কই নাই, তোমার মাইয়াগুলা বড় হইতেছে, এখন এট্টু নিজেরে সামলাও।" নিমাই চিৎকার করে উঠল, "হ হ, সামলামু, নিজেরটা নিজেকেই বোঝবার দ্যান্, আপনি আইছেন ক্যান্।" এবারে সুধার রাগ উঠে যায় সপ্তমে, ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসে ওর সযত্নে রাখা অস্ত্র। "আয় দেখি কেমন বাপের ব্যাটা, নেশা কইরা আইসা বাড়ির বৌ মেয়েদের গায়ে হাত,আইজ তোর একদিন কি আমার একদিন।" হাসুয়াটা সুধার হাতে চকচক করে উঠল। আর কী আশ্চর্য নিমাই-
এর তেজ নিমেষে উধাও, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। একেবারে কেঁচো হয়ে গেল ভয়ে।
      "যা রুমা, ঘরে যা, রান্নাবান্না তাড়াতাড়ি কইরা খাইয়া ল। তোরা সঙের মতো দাঁড়াইয়া থাকলে হবে, ইস্কুলের পড়া নাই?" দুই মেয়ে ভয়ে ভয়ে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। "যা, ঘরে গিয়া পড়তে বস, নিমাই, আর কোনোদিন যেন এমন না হয়, কইয়া দিলাম কিন্তু। আইজ থিকা তুই ঐসব আজেবাজে জিনিস খাওয়া বন্ধ কর।" নিমাই মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ঘরে ঢুকে যায়।
   আর সুধা নিজেই অবাক হয়ে গেছে আজকের ঘটনার কথা মনে করে। কোথা থেকে এমন সাহস ও শক্তি পেল কে জানে। দূরে তোর্ষার চর থেকে শিয়ালের ডাক শুনে ওদের পাড়ার কুকুরগুলো একেবারে চিলচিৎকার শুরু করে দিল। সুধা আধভেজা বড়িগুলোকে সযত্নে বাঁশের মাচায় তুলে রাখে আলগোছে। ওর স্বপ্নকে আগামীকাল আবারো সূর্যালোকে ওম দিতে হবে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri