প্রণমি তোমারে ঠাকুর/দেবদত্তা বিশ্বাস
প্রণমি তোমারে ঠাকুর
দেবদত্তা বিশ্বাস
আমার প্রাণাধিকেষু
রবি ঠাকুর,
অনেক ছেলেবেলায় যখন ঠাকুর বলতে কেবল দেবতা স্থানীয় অপার ক্ষমতাশালী এক অদৃশ্য শক্তিকে বুঝতে শিখেছিলাম সেদিন হতেই তোমায় সেই উচ্চাসনটাই দিই আমি। অনেক পরে যখন বুঝতে শিখেছি তোমার জাগতিক সপ্রতিভ প্রকাশ তোমায় মনুষ্য স্বত্তার উৎকৃষ্ট স্তরে অবতীর্ণ করেছিল সেদিন থেকেই আমার দৃঢ় ধারণা তুমিই বিমূর্ত দেবতার মূর্ত প্রতিরূপ ।
আমার ছেলেবেলার দিনগুলিতে একমাত্র তুমিই তো সমব্যথী ছিলে রবি ঠাকুর যে আমায় পড়া পড়া খেলার নিদান দিয়েছিলে। সে দিন হতে তোমার সাথে মনে মনে সখ্যতা গড়েছিলাম আমি। আমার কৈশোরের রাগ, অনুরাগ ,অভিমানের তীব্র আবেগের দোলাচলে যখনই আমি দিকভ্রান্ত হয়েছি তুমি বটবৃক্ষের ছায়ার মতো আমায় শীতলতা দান করেছ আমার বিচলিত হৃদয়ে। আমি ভরসা করেছি তোমাতেই। ভরসার সেই গাছপালারা শাখা প্রশাখা বিস্তার করে ডালে ডালে প্রথম কুঁড়ি এনেছিল আমার ভরা যৌবনে। তোমার গানের কথার মতো ঝরঝর মুখর বাদল দিন যখন আমার মনের প্রতিটি কোনায় অবিরত বারিপাত করে চলেছে, আমার কিছুতেই যখন মন বসে না সে সময়ও আমার তুমি ছিলে একমাত্র অবলম্বন। আমি বসে তখন তোমায় দুটো মনের কথা কই।
অলস সময়ে আমি বসে গেঁথেছিলাম বিনি সুতার মালা তোমার জন্য। ভেবেছিলাম অঞ্জনা নদী তীরের মন্দিরের পাশে ওই বাগিচায় এক পূর্ণিমা রাতে এক দোলায় বসে দোল খাব দুজনে। বয়স বাড়ে আমার, আমার ব্যক্তিগত রবি ঠাকুরের ব্যাপ্তি স্পষ্ট হয় দিন দিন। তোমার সর্বজনীন স্বত্তার মাঝে ধীরে ধীরে আমি কুঞ্চিত বোধ করি । আমার প্রাণের ঠাকুর যে সবার হৃদয়ে বিরাজমান দীপ্তজ্জ্বল ভানু। আরো কিছুটা বয়স পেরিয়ে আমি আজ পরিণত। আমার কাছে আজ রবীন্দ্রনাথ এক আদর্শের নাম। কবি তোমার সৃষ্টি প্রতিটা যুগেই তো সমকালীন। তোমার গভীর আত্ম উপলব্ধির চেতনা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষণে প্রযোজ্য। তাইতো রবি ঠাকুর তোমার কাছে আমার বিশেষ প্রার্থনা আলোকের এই ঝর্ণাধারায় দূর করে দাও আমার সমস্ত জীর্ণতা ও জরা সকল। আমি যেন উদ্ভাসিত হই নব রবির আলোকে।
ইতি
তোমার চরণে নিবেদিত প্রাণা
দেবদত্তা
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴